প্রতিবেদন : মুখ পুড়ল রাজ্যপালের। সুপ্রিম কোর্টে রামধাক্কা খেলেন সি ভি আনন্দ বোস। বহু চেষ্টা করেও রাজ্যপাল তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত আটকাতে পারলেন না। নজিরবিহীনভাবে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিল, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে রাজভবনের এক মহিলা কর্মী যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। সেই মামলা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত। নিঃসন্দেহে এটি একটি ব্যতিক্রমী নির্দেশ। সাংবিধানিক রক্ষাকবচও যে শেষ নয়, তা প্রমাণিত হল এই মামলার রায়ে। সুপ্রিম কোর্ট নোটিশ জারি করেছে রাজ্য সরকারকে। প্রয়োজনে নির্যাতিতা কেন্দ্রীয় সরকারকেও এই মামলায় যুক্ত করতে পারবে।
আরও পড়ুন-গাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে নোংরা গালাগালি, চটি তুলে মারতে ছুটল গদ্দার
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে রাজভবনের নির্যাতিতা মহিলা কর্মী আবেদন জানিয়েছিলেন। নির্যাতিতার আইনজীবীর যুক্তি, রাজ্যপাল বলে কি সাত খুন মাফ! এমন হলে কী করে সুবিচার পাবেন নির্যাতিতা! উল্লেখ্য, সংবিধানের ৩৬১ ধারাকে সামনে রেখে রাজ্যপাল বারবার এই তদন্ত এড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। আইনজীবী সঞ্জয় বসু বলেন, পদ ও ক্ষমতা ব্যবহার করে যে যৌন হেনস্থার মতো ঘটনাকে ঢাকা দেওয়া যাবে না, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় এক্ষেত্রে দিক্নির্দেশ করবে। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছিলেন নির্যাতিতা। কিন্তু সে নিয়ে রাজ্যপাল যে বিবৃতি দেন, তা যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, তা স্পষ্ট। রাজ্যপাল তাঁর পদমর্যাদার অবমাননা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী সঞ্জয়ের স্পষ্ট কথা, সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার যে যে নির্দেশ দিয়েছে, তাকে রাজ্যপাল বনাম নবান্নের লড়াইয়ে ইতিবাচক হিসাবেই সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ শুক্রবার মোট তিনটি নির্দেশ দিয়েছে। এক, রাজ্য সরকারকে নোটিশ জারি। দুই, কেন্দ্রকে এই মামলায় যুক্ত করার অনুমতি। তিন, কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল যাতে এই মামলায় সহযোগিতা করেন, তা যেন নিশ্চিত করা হয়।
আরও পড়ুন-প্রস্তুতি তুঙ্গে, শহরে অভিষেক
২ মে, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজভবনের এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন। রাজ্যপালের সাংবিধানিক রক্ষাকবচের কারণে কলকাতা পুলিশ এই বিষয়ে কোনও তদন্ত করতে পারেনি। রাজভবনের কয়েকজন আধিকারিক মহিলাকে অভিযোগ জানাতে বাধা দেন বলেও অভিযোগ। তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হয়। কিন্তু কলকাতার হাইকোর্টের নির্দেশে সেই তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়।
৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন নির্যাতিতা। অভিযোগকারিণীর আইনজীবী সংবিধানের ৩৬১ ধারায় রাজ্যপালের যে রক্ষাকবচ রয়েছে, সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মূল প্রশ্ন ছিল, রাজ্যপালকে ফৌজদারি, সাংবিধানিক ও দেওয়ানি রক্ষাকবচ দেওয়া কতখানি যুক্তিযুক্ত। শুক্রবার নির্যাতিতার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, ২৪ এপ্রিল ও ২ মে, দুটি ঘটনায় কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত করা যাচ্ছে না। অথচ অভিযোগ খুবই গুরুতর। ৩৬১ ধারার রক্ষাকবচ এক্ষেত্রে বাধা। তিন সপ্তাহ পরে ফের মামলার ফের শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা।
আরও পড়ুন-তথ্য-প্রযুক্তি, বিশ্ব-বিভ্রাট, বিপর্যস্ত বিমান ব্যাঙ্ক-মিডিয়া
শীর্ষ আদালতের কাছে অভিযোগকারিণীর দাবি ছিল, এক, জরুরি প্রয়োজনে এবং তদন্তের স্বার্থে রাজ্যপালের বয়ান রেকর্ড করার অনুমতি। দুই, অভিযোগকারিণীকে যেন সুরক্ষা দেয় পুলিশ। তিন, অভিযোগকারিণীর পরিচয় গোপন রাখা। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর, রাজভবন ইচ্ছাকৃতভাবে রাজভবনে দরবার বসিয়ে সিসিটিভির আংশিক প্রকাশ্যে এনেছিল। তরুণীর দাবি, এর জন্য যেন তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। চার, সংবিধানের ৩৬১ ধারার রক্ষাকবচ রাজ্যপাল কতটা ব্যবহার করতে পারেন, সে নিয়ে বিধি তৈরি করুক শীর্ষ আদালত।
নিঃসন্দেহে এই মামলা সাংবিধানিক প্রধান বা রাজ্যপালের স্বেচ্ছাচারিতায় লাগাম পরানোর ক্ষেত্রে দিকনির্দেশ করতে চলেছে।