বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর উসকানির অডিও নিয়ে দ্রুত ফরেনসিক রিপোর্ট চাইল সুপ্রিম কোর্ট

বিজেপি রাজ্যে লাগামছাড়া গোষ্ঠী-সংঘর্ষ ও হিংসার মদতদাতা খোদ মুখ্যমন্ত্রী! এক অডিও কথোপকথনের সূত্রে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

Must read

প্রতিবেদন : বিজেপি রাজ্যে লাগামছাড়া গোষ্ঠী-সংঘর্ষ ও হিংসার মদতদাতা খোদ মুখ্যমন্ত্রী! এক অডিও কথোপকথনের সূত্রে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। নজিরবিহীন ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, মণিপুরের অশান্তির ঘটনাকে ধর্মীয় রঙ চড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে হিংসার উস্কানি দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। যে অডিও টেপের ভিত্তিতে এই অভিযোগ সেই টেপটি সরকারি ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিকে (সিএফএসএল) খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। একটি কুকি সংগঠনের দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশ। মামলার শুনানি সোমবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি পিভি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে হয়। সেখানেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন-বিশ্বভারতীর ছাত্রাবাসে সরস্বতীপুজো, নিন্দায় মুখর আশ্রমিক থেকে সাধারণ

মণিপুরের অশান্তির ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করে মামলা করেছে একটি কুকি সংগঠন। গত মঙ্গলবার দেশের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আর্জি জানানো হয়। কুকি সংগঠনের তরফে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ মৌখিক আবেদন জানান। কুকি সংগঠন হিউম্যান রাইটস ট্রাস্ট তাদের অভিযোগে বলে, বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের একটি বার্তালাপের রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, তিনিই মণিপুরের গোষ্ঠী সংঘর্ষ ছড়াতে প্রত্যক্ষ উসকানি দিচ্ছেন। খোদ রাজ্যের প্রধান প্রশাসকের এই ভূমিকা রাজ্যের মানুষের নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত বিপজ্জনক। শীর্ষ আদালতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে মৌখিকভাবে এ-নিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণে নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে আর্জি জানান সংগঠনের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আবেদন জানানো হয়। লিখিত আবেদন জমা দেওয়ার জন্য আইনজীবীকে বলেন প্রধান বিচারপতি। প্রশান্ত ভূষণ বলেন, যে অডিও অংশটি ট্রুথ ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল, সেই রিপোর্ট তিনি আবেদনের সঙ্গে পেশ করেছেন। প্রধান বিচারপতি তাঁকে বলেন, আগে একটি লিখিত আবেদন জমা দিন, তারপর দ্রুত শুনানির বিষয়ে বিবেচনা করা যাবে। সেইমতো লিখিত আবেদন জমা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন-পাচার রুখতে সরস্বতী পুজোর দিনে ১৪ গণবিবাহ

এদিন শুনানির শুরুতেই বিচারপতি সঞ্জয় কুমার বলেন, সুপ্রিম কোর্টে আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের নিমন্ত্রণে তাঁর বাড়িতে নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলাম। আমি কি শুনানি থেকে সরে দাঁড়াব? প্রশান্ত ভূষণ তখন জানান, তাঁর বেঞ্চে শুনানিতে তাঁদের আপত্তি নেই। শুনানি শুরু হতেই কুকি সংগঠনের পক্ষ থেকে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ফের দাবি করেন, বেসরকারি সংস্থা ‘ট্রুথ ল্যাব্স’-এর করা ফরেন্সিক পরীক্ষায় উল্লিখিত অডিও টেপের কণ্ঠের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের কণ্ঠস্বর শতকরা ৯৩ ভাগ মিলেছে। এর পরেই অডিও টেপটি সরকারি পরীক্ষাগার সিএফএসএল-র হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ফরেন্সিক পরীক্ষা করে দ্রুত শীর্ষ আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এই ঘটনা বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের পদে থাকার যোগ্যতা ও নৈতিকতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিল। এই ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া শাস্তি দিতে হবে বলে দাবি করেছে নির্যাতিত সম্প্রদায়গুলির তরফে একাধিক সংগঠন।
উল্লেখ্য, মণিপুরের অশান্তি চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের সময় তাঁর কথাবার্তার অডিও রেকর্ডিং একজন হুইসেল ব্লোয়ার দ্বারা প্রকাশিত হয় এবং তা ভাইরাল হয়ে যায়। মামলাকারীর দাবি, এই টেপগুলি রাজ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে জাতিগত সহিংসতার প্ররোচনার অভিযোগ প্রমাণ করছে। শীর্ষ আদালতে মামলার আবেদনকারী সংস্থাটি এই অডিও টেপ নিয়ে আদালতের তত্ত্বাবধানে এসআইটি তদন্ত চেয়েছে। তাদের দাবি, গত ৩ মে, ২০২৩ সাল থেকে মণিপুরে মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষে ইন্ধন জোগাতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ ফাঁস হয়ে গিয়েছে। মামলাকারীদের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন যে রেকর্ডিংগুলি ইতিমধ্যেই একটি প্রাইভেট ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি ‘ট্রুথ ল্যাব’ দ্বারা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে ৯৩ শতাংশ ভয়েস নমুনা মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সঙ্গে হুবহু মিলেছে। তাঁর দাবি, টেপগুলিতে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায় যে তিনি মেইতেই গোষ্ঠীগুলিকে রাষ্ট্রীয় অস্ত্রাগার লুঠ করার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং তিনি গ্রেফতারি থেকেও তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এই মূল্যায়ন প্রত্যাখ্যান করলে প্রশান্ত ভূষণ পাল্টা বলেন, ট্রুথ ল্যাবস রিপোর্ট সিএফএসএল রিপোর্টের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। তাদের রিপোর্ট বারবার বিভিন্ন আদালত দ্বারা নির্ভর করা হয়েছে। এরপর প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ আগামী এক মাসের মধ্যে সিএফএসএলকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেয়। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ২৫ মার্চ।

Latest article