কথা দিয়েছিলেন অভিষেক, রাস্তা পেয়ে আপ্লুত শিক্ষক

Must read

প্রতিবেদন : তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) জানাতেই ম্যাজিকের মতো কাজ। দীর্ঘ প্রায় ৮ বছরের লড়াই জিতলেন অশীতিপর প্রাক্তন শিক্ষক। নানান প্রতিকূলতা, হুমকি, তাচ্ছিল্য উপেক্ষা করে শেষমেশ জয় পেলেন তিনি। তাঁর এই জয়ের পিছনে একমাত্র যিনি ছিলেন, তিনি আর কেউ নন, তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হ্যাঁ, অবাক হওয়ারই কথা। বৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত মাস্টারমশাইয়ের কথা শুনেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। আর তারপরই সমস্ত বাধা শেষ। অভিষেকের এককথায় দুষ্টদের দমন এবং বৃদ্ধ মাস্টারমশাইয়ের জয়! আশার আলো দেখলেন প্রতিবেশীরাও। অভিষেকের জন্যই পেলেন রাস্তা। ২০১৭ সাল থেকে লড়াই করে আসছিলেন আরামবাগের বাতানল গ্রাম পঞ্চায়েতের তেলুয়া গ্রামের গুপ্ত পাড়ার নবকুমার গুপ্ত ও জয়া গুপ্ত। গ্রামের মূল রাস্তা থেকে তাঁরা বিচ্ছিন্ন। যাতায়াতের কোনও রাস্তাই ছিল না। পুকুরপাড় দিয়ে, অপরের ভিটে বা জায়গা ডিঙিয়ে তাঁদের যেতে হত মূল রাস্তায়। বিভিন্ন সময়ে গালিগালাজও জুটেছিল কপালে। কিন্তু নিরুপায় হয়েই তাঁদের এইভাবেই যাতায়াত করতে হত। তাঁদের পাড়াটি ছিল গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন। স্বাধীনতার পর থেকেই পাড়াটি ছিল বঞ্চিত। সিপিএম আমল থেকে বারবার আবেদন-নিবেদন করেও কাজ হয়নি। সিপিএমের নেতারা তাঁকে বলেছিলেন, কোনও কংগ্রেসির পাড়ায় রাস্তা করে দেওয়া হবে না। প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। কপালে জুটেছিল হুমকি। রাজ্যে পালাবদলের পর তৃণমূল এল ক্ষমতায়। আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন তখনই। এরপর তিনি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে আবেদন জানান। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পর্যন্ত তাঁকে নিরাশ করেন। সাফ জানিয়ে দেন, এই রাস্তা করে দেওয়া হবে না। কেউ-ই পারবে না যদি না আমরা অনুমতি দিই। এরপরই মাস্টারমশাইয়ের লড়াই শুরু। তিনি তাঁর পাড়ার অবস্থার ছবিটা জানিয়ে নবান্নে চিঠি লেখেন। চিঠিতে জানান, পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন গ্রাম, কোনও রাস্তা নেই, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। লেখেন দিদিকে বলো-তে। পর্যায়ক্রমে বিডিও, এসডিও, ডিএম, পঞ্চায়েত দফতর, গ্রামোন্নয়ন দফতর-সহ একাধিক জায়গায় চিঠি লেখেন। তার উত্তরও পান। কিন্তু রাস্তা আর হয় না। বিডিও তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে বলেন, আপনার তো রাস্তা হয়ে গেছে। খাতায়-কলমে ৯ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। যা শুনে বৃদ্ধ মাস্টারের মাথায় হাত পড়ে। এক ছটাক মাটিও পড়েনি! অথচ সেই টাকা পকেটস্থ হয়ে গিয়েছে নেতাদের। বিডিও-কে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন। দেখা যায়, সত্যিই কোনও রাস্তাই হয়নি।

আরও পড়ুন-বোসের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে

এরপর পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জনসংযোগ করতে তৃণমূলের নবজোয়ার যাত্রায় বেরিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পালাক্রমে তিনি আরামবাগেও আসেন। আরামবাগের ভালিয়ায় আসার পর যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, সেই সময়ে তাঁর কনভয়ের সামনে রাস্তায় শুয়ে পড়ে তাঁর গাড়ি আটকে দেন বৃদ্ধ মাস্টারমশাই। হইচই পড়ে যায়। অভিষেকের কানে পৌঁছয় বৃদ্ধ মাস্টারমশাইয়ের কথা। গাড়ি থেকে নেমে অভিষেক সেই বৃদ্ধ মাস্টারমশাই নবকুমার গুপ্তের কাছে যান ও তাঁর কাছ থেকে গোটা ঘটনা জানেন। আশ্বাস দেন, খুব শীঘ্রই রাস্তার কাজ হবে। আর যারা টাকা আত্মসাৎ করে কাজ করেনি, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরদিনই সোজা জেলা পরিষদ ও ডিএম অফিস থেকে লোকজন আসেন। যাবতীয় তথ্য নিয়ে যান। স্কিম করে পাঠান। অবশেষে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জয় হয় ৮১ বছরের বৃদ্ধ মাস্টারমশাইয়ের। তৈরি হয়েছে রাস্তা। রাস্তা তৈরি হওয়ার জন্য বৃদ্ধ মাস্টারমশাই ধন্যবাদ জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

Latest article