সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশনের তৃতীয় সপ্তাহ। অধিবেশনের শুরু থেকেই পেগাসাস, কৃষি বিল, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হয়েছে সংসদ। বারবার মুলতুবি হয়েছে সংসদের দুই কক্ষ। কিন্তু এরই মধ্যে বিরোধীদের আপত্তি এড়িয়ে, আলোচনা ছাড়াই গায়ের জোরে সংসদে গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাচ্ছে সরকার। মানুষের স্বার্থ ও দাবি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে কয়েক মিনিটের মধ্যে সংসদে পাশ হয়ে গিয়েছে প্রায় ২৫টি বিল । বিরোধীদের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই রীতিমতো ক্ষমতার জোরে সংসদে একটার পর একটা বিল পাশ হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এক একটি বিল পাশ করতে ৭ মিনিটেরও কম সময় নেওয়া হয়েছে। ইনশিওরেন্স বিলের ক্ষেত্রে বিরোধীদের দাবি ছিল, এইরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিলকে পাশ করানোর আগে সিলেক্ট কমিটিতে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হোক। কিন্তু তা না করেই সোমবার রাজ্যসভায় নিয়ে আসা হচ্ছে পাশ করানোর জন্যে।
আরও পড়ুন-এসপির ফোনের কল রেকর্ডেই ফাঁস পুলিশের নাটক
তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, বাম দল, ডিএমকে সহ অন্যান্যরাও বিলটিকে এর সংসদের স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর দাবি করেছিল। কিন্তু সরকার এই বিষয়ে একবগ্গা অবস্থান থেকে নড়েনি। পেগাসাস, কৃষি আইন প্রত্যাহার সহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধীপক্ষ যেমন এককাট্টা হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সুর চড়িয়েছে এবং তাদের অবস্থানে অনড় থেকেছে, উল্টোদিকে সরকারপক্ষও স্বৈরাচারী কায়দায় আলোচনা এড়িয়ে সংখ্যার জোরে পরপর বিল পাশ করিয়ে নিচ্ছে।
আরও পড়ুন-ইস্যু ত্রিপুরা : তৃণমূল কংগ্রেস সোমে ‘ঝড়’ তুলবে সংসদে
এবারের বাদল অধিবেশনের আর পাঁচ দিন মাত্র বাকি আছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বিমা বেসরকারিকরণ বিল নিয়ে নিয়ে সরকার আগ্রাসী ভূমিকা নিলেও বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিলের ক্ষেত্রে সরকার যথেষ্ট দোলাচলে। বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিল নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিরোধীদের পাশাপাশি কৃষক সংগঠনগুলি লাগাতার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, এর ফলে চাষের খরচ প্রায় ৫০০ শতাংশ বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিল নিয়ে সরকারপক্ষের দোলাচলের কারণ, উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা নির্বাচন। আর কৃষিনির্ভর এই রাজ্যগুলিতে নির্বাচনের আগে সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিজেপির বড় রাজনৈতিক ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন তাদের দলের নেতারাই। তবে বাদল অধিবেশনের শেষ সপ্তাহে বিমা বেসরকারিকরণ বিলটিকে রাজ্যসভায় পাশ করানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার মরিয়া। ইতিমধ্যেই বিলটি লোকসভায় পাশ করানো হয়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য, এই বিমা বেসরকারিকরণ বিলটি যাতে পাশ করানো না হয় তার জন্য বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে। অমিত মিত্র বলেছিলেন, আমাদের দেশের একটা বড় সংখ্যার মানুষ বিমা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। শুধু তাই নয়, সরকারি বিমা সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে যে বার্ষিক প্রিমিয়াম নেওয়া হয় তা মোটের উপর মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের মধ্যে। ভবিষ্যতের পুঁজি হিসেবে এটি তাঁরা বিনিয়োগ করেন। সরকার এখন বিমা বেসরকারিকরণের পথে হাঁটায় তা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় জানান, হইহট্টগোলের মধ্যে জোর করে, সংসদের প্রতি কোনওরকম সম্মান প্রদর্শন না করেই বিল পাশ করানো হচ্ছে। সংসদ গণতন্ত্রের মন্দির। তাকে ধ্বংস করতে নেমেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীদের মতে, সরকার যেভাবে বেসরকারিকরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছে তাতে খুব শীঘ্রই ব্যাংক, পোস্ট অফিসের মত সংস্থারও পুরো বেসরকারিকরণ হয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।