সংবাদদাতা, পুরুলিয়া : রাস্তায় খানিকটা দূরে দূরে খোঁটার সঙ্গে শক্ত দড়িতে বাঁধা জোয়ান, চনমনে গরু। ধামসা, মাদোল বাজিয়ে হাতে চামড়া বা বস্তা নিয়ে সেই গরুকে খেপিয়ে তামাশা দেখে মানুষ। এর নাম গরুখোঁটা। ভাইফোঁটার দিন এভাবেই গোটা জঙ্গলমহলে শেষ হল তিনদিনের গোউৎসব। প্রথম দিন কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে (কালীপুজোর রাতে) গোয়ালের সামনে ধামসা, মাদোল বাজিয়ে গান গেয়ে গরুকে সারারাত জাগিয়ে রাখা হয়। পরদিন সন্ধ্যায় গরুর গায়ে রঙিন ছোপ দিয়ে, সিঙে তেল মাখিয়ে উঠোনে তার পুজো করা হয়। তৃতীয় দিনে হয় গরুখোঁটা। সেই উৎসব এবারও জমল জঙ্গলমহলে।
আরও পড়ুন-ঝাড়খণ্ডে নির্বাচনী প্রচারে মিথ্যার ঝড় তুললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শাহর মুখোশ খুলে দিল তৃণমূল
পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান তথা মানভূম কালচারাল অ্যাকাডেমির সভাপতি হংসেশ্বর মাহাত বলেন, এই উৎসবের সঙ্গে কালীপুজো, ভাইফোঁটার কোনও সম্পর্ক নেই। এটি পৃথক লোক উৎসব। প্রবাদ অনুযায়ী, মানুষের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একসময় গবাদি পশুরা কৈলাসে শিবের কাছে চলে গিয়েছিল। শিব মানুষকে শর্ত দেন, পশুদের মানুষ কেমন রাখছে তা জানতে প্রতিবছর কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে তিনি মর্ত্যে যাবেন। মানুষ শিবকে ফাঁকি দিতে কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে গবাদি পশুকে সারারাত জাগিয়ে রাখে। রাতে জেগে থাকার ফলে পরদিন তাদের ঘুম পাবে। শিবের কাছে অনুযোগ জানাতে পারবে না গোটা লোককথাটি গানে গানে আছে। তাকে বলা হয় অহীরা গীত। এই গীত গেয়ে যারা গো-জাগরণ করায় তাদের বলা হয় ঝাঙড় দল। সাবেক মানভূমের এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে শামিল হন সকলে। জাতপাত, ধর্মের বিভাজন থাকে না।