প্রতিবেদন : কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার আগে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে রাজ্যের বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য তদ্বির করলেও প্রধানমন্ত্রী (PM Modi) হওয়ার পর ১৮০ ডিগ্রি বদলে যায় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা। নিজের আগের অবস্থান নস্যাৎ করে তিনিই তখন রাজ্যের আর্থিক বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে অনৈতিকভাবে রাজ্যগুলির বরাদ্দ কমিয়ে দিতে সক্রিয় হন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করতে মোদি কীভাবে তৎপর হয়ে ওঠেন সেই ঘটনাই সম্প্রতি ফাঁস করেছেন তৎকালীন যুগ্মসচিব তথা বর্তমানে নীতি আয়োগের সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম। রাজ্যগুলির ক্ষমতা খর্ব করতে কীভাবে সক্রিয় মোদি সরকার তা সামনে প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনায় সরব তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিরোধীরা।
মনরেগা, আবাসন প্রকল্প থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী (PM Modi) গ্রাম সড়ক যোজনার মতো একাধিক সরকারি প্রকল্পে বাংলার বিপুল পরিমাণে বকেয়া রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। ১০০ দিনের কাজে বাংলা ছাড়াও বিরোধী শাসিত তামিলনাড়ু, কেরলেরও কেন্দ্রের কাছ থেকে টাকা বকেয়া রয়েছে। ফলে একদিকে রাজ্যগুলিকে প্রাপ্য বকেয়া মেটাতে টালবাহানা এবং অন্যদিকে রাজ্যগুলির থেকে করের ভাগ কমিয়ে দেওয়ার খবর সামনে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বিরোধীরা। বিজেপি বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার দলগুলির দাবি, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন লাগাতার রাজ্যের অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছেন যে নরেন্দ্র মোদি, তিনি কীভাবে এখন রাজ্যগুলির অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছেন? ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর অর্থ কমিশনের সঙ্গে এক্তিয়ারবহির্ভূতভাবে দর কষাকষি করে রাজ্যের প্রাপ্য কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর এই দ্বিচারী ভূমিকাকে তুলে ধরেই কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হচ্ছে বিরোধী দলগুলি।
আরও পড়ুন- বিজেপির রাজ্যগুলোই নারী ও শিশুর পক্ষে বিপজ্জনক
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্রের বঞ্চনার তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাংলা। বাংলায় রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা বানচাল হওয়ার পর রাজ্যকে ভাতে মারার চক্রান্ত শুরু করেছে বিজেপি সরকার। আর সেই চক্রান্তের বলি করা হচ্ছে রাজ্যের গরিব মানুষকে। বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে আসলে গরিব মানুষকেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার টার্গেট করেছে মোদি সরকার। এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ এবং প্রাক্তন আমলা জহর সরকার বলেন, কতখানি নির্লজ্জ এবং নীতিহীন একজন ব্যক্তি হতে পারেন মোদি, তা বোঝা যাচ্ছে। ২০০০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১৪ বছর গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি সবসময় রাজ্যের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন, কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যোদ্ধা হয়ে উঠেছিলেন। অথচ সেই ব্যক্তিই নিজে যেদিন প্রধানমন্ত্রী হলেন, সেদিন থেকেই রাজ্যগুলিকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন। আমরা যে বারবার বলি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে মোদি ধ্বংস করছেন, সেটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। ক্ষমতা ছাড়া বিজেপি কিছুই বোঝে না। জহরবাবু আরও বলেন, আমি যখন কেন্দ্রে কর্মরত ছিলাম তখন দেখেছি কীভাবে নরেন্দ্র মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছেন। এখন ঠিক তার উল্টো কাজ করছেন। পুরোপুরি নীতিহীন নাহলে তিনি এটা করতে পারতেন না। তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভূলুণ্ঠিত করে স্বৈরাচারী, স্বেচ্ছাচারী, তুঘলকি শাসনের প্রচারসর্বস্ব নায়ক রাজ্যের ক্ষমতা প্রতিনিয়ত খর্ব করার চেষ্টা করছেন। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অমর্যাদার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আসল চরিত্র প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ, সমস্ত ক্ষমতার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে দেওয়াই মোদির লক্ষ্য।