সাবেককালের দোলের গল্প

বসন্ত মানেই রঙে রঙে রাঙিয়ে দেওয়া বসন্তোৎসব। সাবেককালে কলকাতার অভিজাত পরিবারের দোল কিন্তু একদিনের উৎসব ছিল না। একাদশীর দিন থেকে শুরু হত, চলত সেই প্রতিপদ পর্যন্ত। কেমন ছিল সেই পুরনো কলকাতার দোল? পৌরাণিক ইতিহাসই বা কী? লিখলেন তনুশ্রী কাঞ্জিলাল মাশ্চরক

Must read

এল ঋতুরাজ বসন্ত। গাছের পাতায় সবুজের সমারোহ আর রঙিন ফুলের মেলা। বসন্ত নিয়ে সেই কোন যুগ থেকে কবি, সাহিত্যিকদের আদর, আবেগের শেষ নেই। বিশেষ করে কবিগুরুর গান, কবিতা ছাড়া বসন্ত উৎসব অসম্পূর্ণ। কবির লেখা অনেক নাটকের পটভূমিকাও বসন্ত পূর্ণিমা।

আরও পড়ুন- হরমনের ব্যাটে চ্যাম্পিয়ন মুম্বই

‘আহা আজি এ বসন্তে
এত ফুল ফোটে
এত বাঁশি বাজে
এত পাখি গায়’
আর বসন্ত মানেই বসন্ত উৎসব। রঙে, রঙে রাঙিয়ে যাওয়ার উৎসব। প্রাণের উৎসব। কলকাতায় সেকালের দোল বা রঙের উৎসব ছিল ভারী জমজমাটি। তবে শুরুতেই তা হয়নি।
১৬৮৬ কলকাতায় এসেছিলেন জব চার্নক। কিন্তু বেশিদিন একটানা এখানে থাকতে পারেননি। ১৬৯০-এর ঘোর বর্ষায় চার্নক যখন তৃতীয়বার কলকাতা এলেন তখন কলকাতা গণ্ডগ্রাম। তখন সেখানে না ছিল বাবু, না ছিল অভিজাত সমাজ।
নবাগত ইংরেজদের তখন ঠাঁই বলতে কখনও তাঁবু বা কখনও নৌকা।
বেশ কিছুদিন থাকার পর জীবনযাত্রায় একঘেয়েমি কাটাতে চার্নক এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা চাইলেন নেটিভদের সঙ্গে মেলামেশা করতে। কিন্তু নেটিভরা সেই সময় তাঁদের পাত্তা দিতেন না।
৩২৫ বছর আগে এমনই এক বসন্তকালে কয়েকজন অত্যুৎসাহী ফিরিঙ্গি যুবক গ্রামের ভেতরে ঘোরাফেরা করছিল। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তাদের কানে এল গানের সুর। অনুসরণ করে তারা এগোতে গিয়ে দেখলেন দক্ষিণে এবং উত্তরে দুটি মঞ্চ তৈরি হয়েছে। একটিতে গোবিন্দ জি এবং অন্যদিকে শ্রীরাধিকার অধিষ্ঠান। সেখানে গোবিন্দ এবং রাধিকাকে নিয়ে চলছে জমজমাট দোল খেলা। যারা দোল খেলছিল তাদের পোশাকেও ছিল অভিনবত্ব। আবিরে চারদিকে লালে লাল। পিচকিরিতে রঙ নিয়ে চলছিল খেলা। প্রচুর মানুষের উপস্থিতিতে মহাসমারোহে চলছে সেই উৎসব। বসেছে মেলাও। দিঘির উত্তর পাড়ে স্তূপ করে রাখা রয়েছে আবির। পথঘাটের সঙ্গে দিঘির জলও লাল হয়ে গিয়েছে। গানের সুর, তাল, গোপিনীদের নাচ, চারিপাশের পরিবেশ— সমস্ত কিছু সেই ইংরেজ যুবকদের খুব আকৃষ্ট করেছিল।
আসলে সেই গোপিনীরা পোশাকের আড়ালে ছিল সকলেই পুরুষ! এটা ফিরিঙ্গি যুবকেরা অনুমান করতে পারেননি। প্রাচীন গ্রিসের স্যাটারনালিয়ার সঙ্গে এই রং উৎসবের মিল খুঁজে পেয়ে ভেবেছিল এটা কামোৎসব। তো তারা চেষ্টা করেছিল এই উৎসবে যোগদান করার। কিন্তু বিধি বাম। নেটিভরা তাঁদের উৎসবে ঢুকতে বাধা দিলেন। জুটল তাঁদের পিঠে চড়থাপ্পড়।
মতভেদ থাকলেও বলা হয় যেদিকে রাধার মঞ্চ সেদিকের নাম হয়ে গেল রাধাবাজার আর যেদিকে দোল উপলক্ষে পাহাড়প্রমাণ আবির কুমকুম জড়ো ছিল সেখান থেকেই নাকি নাম হল লালবাজার।
কারণ নিয়ে যতই মতামতের ভিন্নতা থাকুক দোল উৎসব যে সেখানে বিশেষ পার্বণ হিসেবে উদযাপিত হয়েছিল তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।
যদিও পরে ইংরেজরা এদেশে আসার পর ঔপনিবেশিকতার প্রভাবে যে নব্য বাবুসমাজ গড়ে উঠেছিল হোলি উৎসব কিন্তু তাতে প্রাধান্য পেয়েছিল।
দোলের দিন কলকাতার কৈবর্ত পাড়া থেকে সঙ বের হত এদের সঙ্গেও থাকত রং ও আবির রাস্তায় ছেলেগুলো যাকে পেত তাকেই রং মাখাত। শুধু সঙই নয় সেখানে বউবাজার থেকে বাগবাজার দোলযাত্রার দিন নগরসংকীর্তনের দল বের হত। বসন্তের এই রং উৎসব চিরকাল হয়ে পালিত হয়ে এসেছে মহানগরীর পথে।

আরও পড়ুন-ঘুম ঘুম রাত

বাবুবিলাসের নিধুবন ছিল তাদের শখের বাগানবাড়ি। রুপোর রেকাবিতে রাখা আতর-মেশানো আবির উড়িয়ে, রুপোর পিচকিরিতে সুগন্ধী রঙিন জল ছিটিয়ে, গেলাসে রঙিন পানীয় ঢেলে, হোলির ঠুমরি কিংবা দাদরার তালে ইয়ারদোস্তদের নিয়ে নেশায় চুর হয়ে ওঠার আনন্দ ফূর্তি যেন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
দোল-দুর্গোৎসব ছিল বাবুবিলাসের অন্যতম পার্বণ। কলকাতার প্রসিদ্ধ সব পরিবারে চলত দেখনদারি আর আভিজাত্যের প্রতিযোগিতা।
সেকালের অভিজাত পরিবারের দোল
পাথুরিয়াঘাটার ঘোষ পরিবার, শরিক ভূপেন্দ্রকৃষ্ণ মন্মথ নাথের বাড়ির দোল উৎসবের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এছাড়াও ঠাকুর বাড়ি, শীল বাড়ি, শোভাবাজার রাজবাড়ি-সহ অন্যান্য সম্ভ্রান্ত পরিবারের কথাও আমরা জানব।
কোনও কোনও বাড়িতে শুধু খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকত এলাহি। বাড়ির অন্তঃপুরের মহিলাদের সাজগোজ, রান্না বিশেষ করে ঘরে-তৈরি মিষ্টি এবং বিশেষ পুজো-অর্চনার ব্যবস্থা করা হত। কোন কোন বাড়িতে চলত পালাকীর্তন, নাটক, যাত্রা। মান্যগণ্য ব্যক্তিদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানোর ধুম পড়ে যেত এদিন। বিকেল বা সন্ধেয় বসত ঘরোয়া গানের আসর। সঙ্গে থাকত ঢালাও পানভোজনের ব্যবস্থা। কোনও কোনও রাজ পরিবারে দোল উপলক্ষে বসত বাইনাচের আসর।
মুক্তারাম স্ট্রিটের রামচাঁদ শীলের পরিবারে এমনই এক আসরে এসেছিলেন সেকালের বিখ্যাত বাইজি গহরজান। মেঝেতে পুরু করে আবির বিছিয়ে তার ওপর কাপড় ঢেকে সেখানে হয়েছিল নাচ। নাচের শেষে আবিরের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে দেখা গেল সেই আবিরের উপর পদ্মের আকৃতির নকশা হয়ে গিয়েছে!
এমনই উচ্চমার্গের ছিল সে-নাচ। এছাড়া নুরজাহান, মালকাজান প্রমুখ বাইজির ঘুঙুরের শব্দে আর আতরের সুগন্ধে ভরে উঠত চারপাশ।
পাথুরিয়াঘাটা রাজবাড়িতে বসত ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসর। সেখানে গাইতেন অঘোর চক্রবর্তী, পিয়ারা সাহেব কিংবা আহমেদ খান।
আবার শোভাবাজার রাজ পরিবারের বড়তরফের বাড়িতে দোল পূর্ণিমার দিন রীতি মেনে গৃহদেবতা রাধাগোবিন্দ জিউর দোল-খেলা হয় হোলির দিন। দোলের আগের দিন সন্ধেয় হয় চাঁচর। পরের দিন দোলের বিশেষ পুজো। দোলের আগের দিন হয় নারায়ণের চাঁচর। সাবেক রীতি মেনে আজও ঐতিহ্য চলছে।
সেখানেও অবশ্য সন্ধ্যাবেলা ঠাকুরদালানে বসত গানের আসর। বাড়ির সদস্যরাই গাইতেন রাগাশ্রয়ী গান। গানের শেষে ফাগ ওড়ানো হত।

আরও পড়ুন-নাম দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মৃত্যু হল সেই সোহানের

মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটের মার্বেল প্যালেসে আজও দোলের কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
দোলের সময় রাধাকান্ত শ্রীমতী, জগন্নাথ দেব এবং গোপিচাঁদবল্লভের বিশেষ পুজো করা হয়ে থাকে। অতীতের কোনও প্রথার পরিবর্তন হয়নি। রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক প্রচলিত বৈষ্ণব প্রথা অনুসারে এই সমস্ত আচার অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমীর দিন বিগ্রহের অঙ্গরাগ হয়ে থাকে। দশমী তিথিতে বিগ্রহের শুদ্ধকরণ, অঙ্গমার্জনা, স্নান, শৃঙ্গার অলঙ্করণ, তিলককরণ এবং আবির মাখানোর অনুষ্ঠান হয়। একাদশী থেকে শুরু হয় দোল উৎসব যা চলে প্রতিপদ পর্যন্ত। একাদশীতে নিবেদন করা হয় গোলাপজাম ও নানা ফল-সহ শরবতের ভোগ। থাকে বেল, ডাব, তরমুজের শরবত। আর থাকে আমছেঁকা।
এই সময় প্রতিদিন নিবেদিত হয় রাজভোগ যা তৈরি হয় নিজস্ব রসুই ঘরে। ভোগে থাকে চার প্রকার কলাই ভোগ। ময়দার লুচি, ছানার পদ, শিঙাড়া, কচুরি, পটল-বেগুন-এঁচোড়ের তরকারি ও চাটনি। এছাড়াও বিশেষ ভোগ হিসেবে থাকে মালপোয়া।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দোল
ঠাকুরবাড়ির দোল বিষয়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘জোড়াসাঁকোর ধারে’তে বর্ণনা দিয়েছেন দোলের আড়ম্বরের।
‘ঠাকুরবাড়ির দেউড়ি গমগম করত দোলের ভিড়ে। চারিদিকে লাল আবিরের ছড়াছড়ি আর দূর থেকে কেবলই রব উঠত হরি হ্যায় হরি হ্যায়। বেহারা ঢোল বাজাত, গান হতো খচমচ শব্দে আর উঠোনের এক দিকে থাকত সিদ্ধির দেদার আয়োজন।
বাড়ির ছোটদের জন্য থাকতো টিনের পিচকিরি। আবির গোলা জলে সেই পিচকিরি ডুবিয়ে রাস্তায় যাকে পারত তার গায়ে ঢেলে দিত রঙ।’
অবনীন্দ্রনাথ আর জানাচ্ছেন তাঁদের বৈঠকখানায় কীভাবে বাড়ির প্রবীণরা দোল উদযাপন করতেন।
‘পাতলা কাপড়ের আবরণ থেকে দেখা যেত লাল আবিরের কিয়দংশ, ফুলের গন্ধে চারিদিক মাতোয়ারা। তারই মধ্যে অতিথিরা বসতেন তানপুরা নিয়ে। গোলাপ জলের পিচকারী আর গড়গড়া থাকতো তাঁদের আপ্যায়নে।’
তবে বিলাসিতা কিংবা আমোদ প্রমোদ যতই হোক না কেন এসব বিলাসীবাবুরা ছিলেন সাবেক হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী। তাই দোল উপলক্ষে এসব বাড়িতে বিশেষ পুজো-অর্চনাও হত।
অভিজাত কোনও পরিবারে গৃহসংলগ্ন মন্দিরে অনুষ্ঠিত হত সমারোহে পুজোপাঠ। বিগ্রহকে অসাধারণ সাজে সাজানো হত। দামি দামি রত্ন-অলংকারে সজ্জিত হলেও সঙ্গে অবশ্যই থাকত সুন্দর ফুলের সাজ।
বাবুবিলাসী দোলের বিবরণ দিতে গিয়ে কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছিলেন—
‘ক্রমেতে হোলির খেলা
নবীনা নাগরী মেলা
ছুটে মুটে যায় এক ঠাঁই—
যার ইচ্ছা হয় যারে আবির কুমকুম মারে
পিচকারী কেহ দেয় গায়।
উড়ায় আবির যত, কুড়ায় লোকেতে তত,
জুড়ায় দেখিলে মন তায়
ঢালিয়া গোলাপজল, অঙ্গ করে সুশীতল,
মাঝে মাঝে হয় কোলাহল।’

আরও পড়ুন-সাংসদ দেবের সক্রিয় উদ্যোগে খুব তাড়াতাড়ি, শুরু হচ্ছে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়ন

কলকাতার দোল প্রসঙ্গে ইতিহাসের পাতায় প্রমাণ মেলে যে— ‘সেসময় কোন ব্যক্তির বেদাগ বস্ত্র থাকিত না, দলে দলে মিছিল বাহির হইতেছে, পিচকারি ও আবিরে পথঘাট, ঘরবাড়ি লালে লাল হইয়া যাইতেছে।’
হোলি এমনই এক উৎসব, একাল থেকে সেকালে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেই হোলির আনন্দ-আবেগে মেতে উঠতেন। গবেষকদের মতে, সাবেক কলকাতার দোল উৎসবে রীতিমতো চটুল কথাবাত্রা চলত।
‘মিছিলওলারা সুশ্রাব্য ও অশ্রাব্য গীতিতে পাড়া মাতাইয়া এবং নরনারী যাহাকে সম্মুখে পাই তো তাহাকে আবিরে পিচকারিতে ব্যতিব্যস্ত করিয়া চলিয়া যাইত। এমন অশ্রাব্য গীত ও কুৎসিত সোমপ্রকাশের পথে বাহির করিতেন যে এখনকার লোকে তাহা কল্পনা করিতে পারিবে না।
কর্তারা কিন্তু তাহা লইয়া আমোদ করিতেন। গৃহিণী ও বালক বালিকাদের সহিত শ্রবণ ও দর্শন করিতেন।’
ইতিহাস কালের নিয়মে পরিবর্তিত হয়। সময়ের স্রোতে সেই রাজকীয় খেয়াল, বাবুয়ানির বোলবোলা আজ আর নেই। রূপোর পিচকিরির সুগন্ধি রং, চমকদার ঝাড়লণ্ঠন আর তানপুরার সুরের আভিজাত্য হারিয়ে গিয়েছে। গহরজানরা আজ কেবল ইতিহাসের পাতায়।
পৌরাণিক কাহিনি
দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর কাহিনি আমরা প্রায় সকলেই জানি। ভক্ত প্রহ্লাদ অসুরবংশে জন্ম নিয়েও পরম ধার্মিক ছিলেন। তাঁকে যখন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে হত্যা করা যাচ্ছিল না, তখন হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ হোলিকা এই বর পেয়েছিলেন যে আগুনে তাঁর কোনও ক্ষতি হবে না। অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করায় অর্থাৎ আগুনে প্রবেশ করলে প্রহ্লাদের কোনও ক্ষতি হয় না কিন্তু হোলিকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের এই জীবিত থাকার আনন্দ উৎসবে পরিণত হয়। এই দহনকেই হোলিকা দহন বলা হয়।
অন্যদিকে, বসন্তের পূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে বধ করেন। কোথাও কোথাও অরিষ্টাসুর নামক অসুর বধের কথা বলা আছে। অন্যায় শক্তিকে ধ্বংসের আনন্দ মহানন্দে পরিণত হয়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে হোলির রীতি ও বিশ্বাস বিভিন্ন। বাংলা অঞ্চলে বৈষ্ণব প্রাধান্য রীতি প্রচলিত। রঙের উৎসবের আগের দিন হোলিকা দহন হয় অত্যন্ত ধুমধাম করে শুকনো গাছের ডাল ইত্যাদি দাহ্যবস্তু অনেক আগে থেকে সংগ্রহ করে তাতে আগুন দিয়ে হোলিকা দহন হয়। পরের দিন হয় রংখেলা। বাংলায় বলা হয় চাঁচর। যদিও ওই চাঁচরেরও নানারকম ব্যাখ্যা আছে। দোল আমাদের ঋতুচক্রের শেষ উৎসব। পাতা ঝরার সময়। এই সময় পড়ে থাকা গাছের শুকনো পাতা আর ডালপালা একত্রিত করে জ্বালিয়ে দেওয়ার মধ্যে এক সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে।

আরও পড়ুন-পিকের বাড়িতে খুন পরিচারক! ধৃত গাড়িচালক

পুরনো জঞ্জাল রুক্ষতা শুষ্কতা সরিয়ে নতুনের আহ্বান হচ্ছে এই হোলি। বাংলায় দোলের আগের দিন চাঁচর উদযাপনকে এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়।
ঐতিহাসিকদের মতে, পূর্ব ভারতে আর্যরা উৎসব পালন করতেন।
যুগে যুগে উদযাপন রীতিতে পরিবর্তন এসেছে। পুরাকালে বিবাহিত নারী তার পরিবারের মঙ্গলকামনায় রাকা পূর্ণিমায় রঙের উৎসব করতেন।
দোল হিন্দু সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন উৎসব নারদপুরাণ, ভবিষ্য পুরাণে এই উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়।
সপ্তম শতাব্দীর এক শিলালিপিতে রাজা হর্ষবর্ধনের হোলিকোৎসব পালনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
হর্ষবর্ধনের নাটক রত্নাবলীতেও হোলিকোৎসবের উল্লেখ আছে।
মধ্যযুগের বিখ্যাত চিত্রশিল্পগুলোর অন্যতম প্রধান বিষয়ে রাধা-কৃষ্ণের রং উৎসব।
তবে সেকালের দোলের গরিমা আজ হারালেও এখানেও কিন্তু দোল উৎসব তার মান্যতা হারায়নি। বলা যায় বসন্তের এই উৎসব সমকালীন হয়েও চিরকালীন।

Latest article