প্রতিবেদন : অশান্তির আগুন আরও ছড়াচ্ছে মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে। ইজরায়েলি হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপ প্যালেস্টাইনের গাজা ভূখণ্ড। এখানে যুদ্ধবিরতির ফয়সালা হওয়ার আগেই ইরানের হামলার মুখে ইজরায়েল। দুই তরফেই হুমকি ও প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি অব্যাহত। এমনিতেই দু’বছর ধরে ইউরোপের ইউক্রেন ও রাশিয়ার দীর্ঘ যুদ্ধে রফাসূত্র অমীমাংসিত। ইউরোপের পাশাপাশি মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্ব এবং গত ৪৮ ঘণ্টায় ইরানের সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে চলেছে। অবস্থার গুরুত্ব অনুধাবন করে ইরান-ইজরায়েল সংঘাত পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকে রাষ্ট্রসংঘ। সেই বৈঠকে ইরানের পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়, ইজরায়েলের উপর আঘাত হানা ছাড়া তাদের সামনে আর কোনও বিকল্প ছিল না। এমনকী রাষ্ট্রসংঘের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ইরানের প্রতিনিধি। যদিও ইজরায়েলের পাশাপাশি তেল আভিভের দুই মিত্র আমেরিকা ও ব্রিটেনও তেহরানের সামরিক পদক্ষেপের কড়া নিন্দা করেছে। রাষ্ট্রসংঘের কাছে ইজরায়েল দাবি জানিয়েছে, ইরানের উপর অর্থনৈতিক ও আনুষঙ্গিক সমস্ত বিধিনিষেধ জারি করা হোক।
আরও পড়ুন-অনুরাগকে পাল্টা দিলেন শশী পাঁজা
রাষ্ট্রসংঘের জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকে ইজরায়েলের দূত গিলাদ এরদান দাবি করেন, মুখোশ খুলে গিয়েছে। বিশ্বের একনম্বর আতঙ্কবাদীদের মদতদাতা ইরান এবার খোলস ছেড়ে নিজেদের আসল রূপ দেখিয়েছে। বিশ্বের এই এলাকাকে অশান্ত করাই লক্ষ্য তাদের। এরপরেই তিনি দাবি করেন, যেহেতু ইরানের মুখোশ খুলে গিয়েছে, তাই দস্তানা পরার সময়ও এসে গিয়েছে। পরিস্থিতির রাশ টানতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করুক রাষ্ট্রসংঘ।
পাল্টা রাষ্ট্রসংঘে ইরানের প্রতিনিধি আমির সইদ ইরাভানি দাবি করেন, রাষ্ট্রসংঘ তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক শান্তি বজায় রাখতেও এই সংস্থা ব্যর্থ। ইরানি প্রতিনিধির দাবি, সময় এসেছে নিরাপত্তা পরিষদের নিজের কাঁধে দায়িত্ব নেওয়ার এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রকৃত বাধাদানকারী শক্তিকে চিহ্নিত করার। ইরানের প্রতিনিধির সাফাই, ইজরায়েলের উপর হামলা ইরানের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং আত্মরক্ষার প্রয়োজনে। প্রসঙ্গত, সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের ইরানি দূতাবাসে ইজরায়েলি হামলার পরই বর্তমান সংঘাতের জোরালো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। ইরানের দূতাবাসে হামলার নিহতদের মধ্যে ইরানি রেভোলিউশনারি গার্ডের শীর্ষকর্তাও ছিলেন। এই ঘটনার পর ইরানের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে ইজরায়েলে আক্রমণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন-শর্তসাপেক্ষে রামনবমীর মিছিলে অনুমতি
যদিও রক্তক্ষয়ী সংঘাত এড়ানোর বার্তা দিয়ে রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য খাদের ধারে দাঁড়িয়ে। ওই এলাকার বাসিন্দারা বাস্তবিকই ধ্বংসাত্মক ও প্রকাশ্য সংঘাতের পরিস্থিতিতে রয়েছেন। এখন সময় হয়েছে বিষয়টিকে আর বাড়তে না দিয়ে পিছিয়ে আসার। ইজরায়েলের উপর প্রায় ৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার নিন্দা করেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব।
এদিকে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যখন ইজরায়েলকে সর্বতোভাবে সমর্থন করছে আমেরিকা ও ব্রিটেন, তখন ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া, চিন, সিরিয়ার মতো দেশ। অন্যদিকে ইরানের নিরাপত্তার যুক্তি সমর্থন করলেও হামলার নিন্দা করেছে ব্রিটেন। আমেরিকা সহ গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানকে হামলা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। আর ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ব্যাপক চাপে পড়েছে জর্ডন। সেদেশের কূটনীতিকদের আশঙ্কা, এবার হামলা শুরু হতে পারে তাঁদের দেশেও।