বিজেপি রাজ্যকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল বাংলা

Must read

প্রতিবেদন : কঠিন শর্ত পূরণ করে আবাস যোজনার (Awas Yojana- West Bengal) অনুমোদন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করল রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যকে পিছনে ফেলে আবাস যোজনাতেও ফের এগিয়ে গেল বাংলা। হাতে সময় ছিল মাত্র ৩৬ দিন। মাথার ওপর ঝুলছিল কেন্দ্রের তরফে চাপিয়ে দেওয়া একগুচ্ছ শর্ত। কিন্তু সব শর্ত মেনে যাচাই পর্ব শেষ করে ৩১ ডিসেম্বরে মধ্যেই ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিয়ে দিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের হিসাব বলছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলা। পিছনে রয়েছে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত। আছে বিহার, ওড়িশাও। কিন্তু বাংলার এই সাফল্যের মধ্যে স্বচ্ছতা ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। কেননা কোন কোন উপভোক্তা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন তা নিয়ে যেভাবে গত এক-দেড় মাসে বাংলাজুড়ে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে তার জেরে প্রশ্ন থাকছেই ৩৬ দিনের মধ্যে স্বচ্ছতা বজায় রেখে উপভোক্তাদের তালিকা ঠিকমতো তৈরি করতে পেরেছে তো নবান্ন? না হলে কিন্তু দেখা যাবে শর্ত ভেঙে অযোগ্য ব্যক্তিকেই পাইয়ে দেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পের সুবিধা।

আরও পড়ুন-মোদি জমানায় বেকারের সংখ্যা রেকর্ড বৃদ্ধি

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (Awas Yojana- West Bengal) নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। সেই সব অভিযোগ তুলে ছিলেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। যোগ্যরা প্রকল্পের সুবিধা পাননি, যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে, অযোগ্যদের প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে, বেছে বেছে বাংলার শাসক দলের সমর্থক বা নেতা-কর্মীদের এই প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে, বিরোধী দলের সমর্থকদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিতে কাটমানি চাওয়া হয়েছে, প্রকল্পের টাকা অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়েছে, কেন্দ্রে টাকায় হওয়া প্রকল্পকে রাজ্যের প্রকল্প বলে চালানো হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধরনের সব অভিযোগ তুলে ধরে বারবার সরব হয়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। সেই কারণেই বাংলায় এই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বারবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর পাশাপাশি প্রায় আট মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছিল মোদি সরকার। শেষে গত বছরের ২৪ নভেম্বর এই প্রকল্পের জন্য বাংলায় ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮টি বাড়ি তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিল একগুচ্ছ শর্ত। যার অন্যতম ছিল ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৮৮ জন উপভোক্তাকে চিহ্নিত করে তাঁদের তালিকা প্রকাশ করে দিতে হবে। কিন্তু দেখতে হবে সেই তালিকায় যেন স্বচ্ছতা থাকে। রাজ্য সরকার কেন্দ্রের এই গুচ্ছের শর্তকেই চ্যালেঞ্জ হিসাবে ধরে নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছিল। উপভোক্তাদের তালিকা ঠিক আছে কি না তা দেখতে আবার নামিয়ে দেওয়া হয় আশাকর্মীদের। কিন্তু দেখা যায় সেই তালিকার স্বচ্ছতা বজায় রেখে সমীক্ষার কাজ করতে গিয়ে জায়গায় জায়গায় হুমকির মুখে পড়ছেন আশাকর্মীরা। কোথাও কোথাও তাঁদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দেওয়ার পাশাপাশি মারধরও করা হয়। এক আশাকর্মী এই অপমান ও হুমকি মানতে না পেরে আত্মহত্যার পথও বেছে নেন। এমনকী সমীক্ষা করতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয় সরকারি আধিকারিক থেকে পুলিশ মায় বিডিওকেও। তবুও কাজ কিন্তু থেমে যায়নি। কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তার জেরেই সব সংশয় এবং জটিলতা কাটিয়ে কেন্দ্রের দেওয়া টার্গেট ছুঁয়ে ফেলেছে বাংলা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বরাদ্দের প্রায় ১০০ শতাংশ বাড়ি তৈরির অনুমোদন এত কম সময়ের মধ্যে দিতে পারা কার্যত রেকর্ড বলেই মনে করছেন রাজ্যের সরকারি আধিকারিকরা। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ বাড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার জন্য। বাকি এক লক্ষের অনুমোদন দেওয়ার কাজও শেষ হয়েছে রাত ১২টার মধ্যেই। উল্টোদিকে কেন্দ্র সরকারের রিপোর্ট বলছে, ডবল ইঞ্জিনের যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ গত বছরের এপ্রিল মাসে প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ বাড়ি তৈরির কেন্দ্রীয় ছাড়পত্র পেয়েছিল। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা মাত্র ৭ লক্ষ বাড়ির অনুমোদন দিতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাতের ছবিটা আরও করুণ। একই অবস্থা বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ, অসম, ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলির। বাংলার থেকে পিছিয়ে ছত্তিশগড়, পাঞ্জাব, ওড়িশা এবং বিহারও।

Latest article