ছিঃ!
এত কথা, এত ছাতি ফোলানো, সব এক ধাক্কায় ফুস হয়ে গেল? লজ্জাও হয় না আপনাদের? আপনারা কি দু’কান কাটা?
এই কথাগুলো। বুধবারের পর দেশের (India) কেন্দ্রীয় সরকারকে কেউ বলেননি। কিন্তু বলা উচিত ছিল।
বলা উচিত ছিল, কারণ দু-দুটো ঘটনা।
ঘটনা ১— বর্ধমান স্টেশনে জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়া। মূল প্রবেশদ্বারের পর এবার ভেঙে পড়ল প্ল্যাটফর্মে থাকা বিশাল জলের ট্যাঙ্ক! তিন বছরের মধ্যে ফের বিপর্যয় বর্ধমান স্টেশনে। বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ যথেষ্ট ভিড় ছিল ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু ট্রেন আসার আগেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো যাত্রীদের মাথার উপর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল শতাব্দীপ্রাচীন জলের ট্যাঙ্ক। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। জখম মহিলা ও শিশু সহ অন্তত ৩৪ জন। তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, মৃতদের নাম সোনারাম টুডু (৩৫), কান্তি বাহাদুর (১৭) এবং মাফিজা খাতুন (৩৩)। মাফিজার বাড়ি বর্ধমানের কাটরাপোতায়। সোনারাম এবং কান্তি ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তাঁদের বাড়ি যথাক্রমে পাকুড় ও সাহেবগঞ্জে। ১৮৯০ সালে ওই ট্যাঙ্কটি তৈরি হয়েছিল। সেটির জলধারণ ক্ষমতা ৫৩ হাজার ৮০০ গ্যালন। অতিরিক্ত জলের চাপেই তা ভেঙেছে। ট্যাঙ্কটি ভেঙে যাওয়ায় যাত্রীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। তাতেও কয়েকজন পদপিষ্ট হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে ১, ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের কর্মীরা দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় শেডের ভেঙে যাওয়া অংশ রেললাইনের উপর থেকে তুলতে সমর্থ হয়েছেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় বহু যাত্রী ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেডের নিচে বসেছিলেন। আচমকা তার উপর ভেঙে পড়ে প্ল্যাটফর্মের মাঝে থাকা জলের ট্যাঙ্কটি। স্টেশন-চত্বরে থাকা স্টলের ব্যবসায়ী এবং আরপিএফ কর্মীরা তড়িঘড়ি তাঁদের উদ্ধার করেন। তবে ভাগ্য ভাল সেইসময় ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কোনও ট্রেন ছিল না।
ঘটনা ২— একেবারে সংসদের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে আনাড়িদের হামলা। সন্ত্রাসে তারা নাকি জিরো টলারেন্স! বারবার বলেন অমিত শাহ। মোদি সরকারের মন্ত্রী কিংবা বিজেপি নেতাদের প্রিয় দাবি, দেশ (India) থেকে সন্ত্রাসকে উৎখাত করে দিয়েছেন তাঁদের মহাশক্তিধর প্রধানমন্ত্রী। বুধবার সকালেই ২০০১ সালের সংসদ হামলায় নিহত শহিদ নিরাপত্তাকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁদের আত্মবলিদান থেকে শিক্ষা নেওয়ার বার্তাও দিয়েছিলেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘হামলা’। সেই তারিখ। সেই সংসদ। গত ১০ বছরে সন্ত্রাস ‘নিকেশ’ করে ফেলার যে দম্ভ প্রতিটি জনসভা বা রেডিও অনুষ্ঠানে ফেটে বের হয়, তা মুহূর্তে চুরমার করে ফেলল কয়েকজন আনাড়ি লোক। আনাড়ি কেন? কারণ, এরা কেউ প্রফেশনাল জঙ্গি নয়। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা বহু জঙ্গি হানায় হাত পাকানোর ব্যাকগ্রাউন্ডও তাদের নেই। মহীশূর, আর লখনউয়ের দুই যুবক বুধবার প্রমাণ করে দিয়েছে, এ যদি কেমিক্যাল সন্ত্রাসের মহড়া হয়, তা সম্পূর্ণ সফল। মনোরঞ্জন এবং সাগর শর্মা দুজনেই জুতোর মধ্যে স্প্রেয়ার নিয়ে অবাধে প্রবেশ করেছে নিরাপত্তার যাবতীয় বলয় ভেঙে। জুতোর নিচে যে প্লাস্টিক কন্টেনার নিয়ে তারা ঢুকেছিল, সেগুলি কোনও সিকিউরিটি ফ্রিস্কিংয়ে ধরা পড়েনি কেন? নাকি যথাযথ তল্লাশি তথা ফ্রিস্কিং করাই হয়নি? মহীশূরের বিজেপি এমপির সই করা পাস নিয়ে তারা প্রবেশ করেছে। শাসকপক্ষের অতিথি বলেই কি তাদের কঠোর নিরাপত্তা পেরতে হয়নি? কেন ডোর ফ্রেম ডিটেক্টর অথবা হ্যান্ড ফ্রিস্কিং অপারেটরে ধরা পড়ল না ওই কন্টেনার? তিনমাস ধরে ওই বিজেপি এমপির অফিসে যাতায়াত করে চলেছে মনোরঞ্জন। লক্ষ্য একটাই— সংসদে ঢোকার পাস চাই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ৬ জনের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। তারা নাকি দু’টি বিশেষ ফেসবুক গ্রুপের সদস্য। তিনদিন আগে পৌঁছেছে দিল্লিতে(Delhi- India)। গুরুগ্রামে ছিল প্রথম কয়েকদিন। বুধবারই তারা জোগাড় করে নেয় সংসদ ভবনে ঢোকার পাস। আর বেছে বেছে পার্লামেন্ট অ্যাটাকের দিনেই অভিযান। কানাডা থেকে ভিডিও বার্তায় কিছুদিন আগেই খালিস্তানি জঙ্গি গুরপতওয়ান্ত পান্নুন সরাসরি হুমকি দিয়েছিল, সংসদ হামলার বর্ষপূর্তির দিনেই আক্রমণ হবে। প্রশ্ন উঠছে, সেই হুমকিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি কেন?
মোদির সাধের সংসদ ভবনে এই হামলা মনে করিয়ে দিল— বিস্ফোরণ, গুলির লড়াই কিংবা গ্রেনেড ছোঁড়ার মতো প্রাচীন পন্থা অতীত হয়ে গিয়েছে। এখন সবথেকে বড় উদ্বেগ— বায়োলজিক্যাল ও কেমিক্যাল সন্ত্রাস। আমজনতার মধ্যে মারণ রোগের জীবাণু ছড়িয়ে দেবে জঙ্গিরা। গণহত্যা হবে রাসায়নিক গ্যাস দিয়ে। এই গ্যাস যদি বিষাক্ত হত? কিংবা কেমিক্যাল ওয়ারে ব্যবহার করার মতো কোনও রাসায়নিক?
লক্ষণীয়, মাত্র কয়েকমাসের মধ্যে দুই শক্তিশালী রাষ্ট্রনায়কের সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতা সামনে এল। দু’জনেই বন্ধু। ইজরায়েলের নেতানিয়াহুর মোসাদ বিন্দুমাত্র টের পেল না হামাসের প্ল্যান। আর মোদির আইবি জানতেই পারল না—আবার নিশানায় পার্লামেন্ট!
বৃহস্পতিবার ডেরেক ও’ব্রায়েনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এই নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে কথা বলার জন্য। মোদি-শাহেদের জানিয়ে রাখি, আমাদের মানুষের সমস্যা নিয়ে কথা বলার অধিকার রয়েছে। ডেরেক ও’ব্রায়েন কোনও ভুল কাজ করেননি। সংসদে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়ে চুপ রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ট্রেজারি বেঞ্চ। তাই আমাদের সংসদকেই সরব হতে হয়েছে।
বলে রাখি, এভাবে আমাদের কণ্ঠ রোধ করা যাবে না।
মোদি-শাহর জমানা শেষ হবেই (India)।