পশমকথা

জাঁকিয়ে পড়েছে শীত। বেরিয়েছে বাক্সবন্দি শীতসঙ্গীরা। নানা উপকরণে ছেয়ে গেছে বাজার। তবে আজও বিকল্প নেই পশমের। সোয়েটার, শাল, টুপি, মাফলার— দোকানে এখন হরেক কিসিমের শীত-পোশাকের মেলা। পশমের মূল উৎস কী? উৎপাদিত হয় কোথায়? কীভাবে অঙ্গ হয়ে গেল জীবনের? লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

গরমের আদর
উল বা পশম। শীতের দিনে পরম সঙ্গী। জড়িয়ে থাকে সারা শরীর। ছড়িয়ে দেয় আদর। ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচায়। ভরসা দেয়। অজান্তেই অঙ্গ হয়ে গেছে জীবনের। শীত-মোকাবিলার উপাদান বর্তমানে কম নেই বাজারে। গরম পোশাক তৈরি হয় নানারকম সামগ্রী দিয়ে। তবে সত্যিই কোনও বিকল্প নেই পশমের। আজও চলছে রমরমিয়ে। এই মুহূর্তে বাংলায় হরেক কিসিমের শীত-পোশাকের মেলা। দোকানে দোকানে ছেয়ে আছে নানা রঙের সোয়েটার, শাল, টুপি, মাফলার ইত্যাদি। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত— সব শ্রেণির মানুষই হাসিমুখে কিনছেন পছন্দমতো জিনিস। অর্থাৎ পশমের পোশাক আজ ঘরে ঘরে।
প্রশ্ন জাগে, যে পশম সারা শরীরে গরমের আদর ছড়িয়ে দেয়, সেই পশম এল কোথা থেকে? পশমের মূল উৎস ভেড়ার লোম। পৃথিবীতে ভেড়া পালনের ঐতিহ্য দীর্ঘ। সর্বোপরি, ভেড়া ছিল প্রথম গৃহপালিত প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। কুকুর এবং ছাগলের সঙ্গেই পালিত হত। স্পেনের প্যালিওলিথিক গুহাচিত্রগুলো প্রায় তেরো হাজার বছর আগের। তাতে কিছু প্রাণীর গৃহপালিত হওয়ার প্রাথমিক প্রচেষ্টার ছবি ফুটে ওঠে। সেই সময়ে লোকেরা সম্ভবত মাংস এবং দুধের উৎস হিসেবে বন্য ভেড়া এবং ছাগল পালন করত। দুটি প্রাণীই মোটামুটি একই রকমের দেখতে। তাদের দেহাবশেষ আলাদা করা কঠিন। মনে করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব নবম সহস্রাব্দে ভেড়ার পশম অনেক ছোট ছিল। সুতো তৈরিতে এটা খুব বেশি ব্যবহৃত হত না।

আরও পড়ুন-রাজ্যের শহরাঞ্চলেও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের জন্য পাকা ছাদের উদ্যোগ

আকর্ষণীয় প্রভাব
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় প্রায় ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভেড়ার শরীর থেকে প্রথম লম্বা পশম সুতোর মতো জিনিস পাওয়া যায়। পশমের বস্ত্রের প্রাচীনতম নির্ভরযোগ্য আবিষ্কারটি অবশ্য ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দে। ধীরে ধীরে পশম প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়ে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে।
খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০-৮০০ সময়ের মধ্যে ব্রোঞ্জ যুগে ইউরোপ জুড়ে পশমের ব্যবহার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মহাদেশে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম পশম কাপড়ের টুকরোগুলো ডেনিশ জলাভূমিতে পাওয়া যায়। এগুলো প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। ব্রোঞ্জ যুগে, উদ্ভিদ-ভিত্তিক তন্তু প্রক্রিয়াকরণের তুলনায় পশমের উৎপাদন প্রাধান্য পেতে শুরু করে। এই সময়ে একটি একক সুতোর ব্যাস ছিল ১ থেকে ২ মিমি। প্লেইন এবং টুইল বুনন এবং তাদের ডেরিভেটিভ ব্যবহার করা হত। এমনও প্রমাণ রয়েছে যে, এই সময়ের মধ্যে পশমের ফুলিং এবং ফেল্টিং পরিচিত ছিল। তাঁতিরা এস-টুইস্ট এবং জেড-টুইস্টের সঙ্গে ওয়েফট সুতো একত্রিত করে আকর্ষণীয় প্রভাব তৈরি করেছিলেন।
ডোরাকাটা বুননের কদর
৭৫০-৪৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, প্রাথমিক লৌহ যুগে তুলনামূলকভাবে রুক্ষ, অত্যাধুনিক কাপড় ধীরে ধীরে সরল, টুইল এবং এমনকী সাটিন বুননে সূক্ষ্ম সুতোর রূপ পেতে থাকে। হতে থাকে রঙিন। লাল, হলুদ এবং নীল। কখনও কখনও পশমের সঙ্গে লিনেন মেশানো হত। উত্তর-পূর্ব ইউরোপে বিশুদ্ধ পশমের প্রাধান্য ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে বিশুদ্ধ পশমের সঙ্গে উল-লিনেনের মিশ্রণ দেখা যেত, যা বেশিরভাগ মহাদেশীয় ইউরোপে সাধারণত দেখা যায়।
লৌহ যুগের শেষের দিকে কাপড় কিছুটা ভারী এবং নকশাগুলো সরল হয়ে ওঠে। জটিল চেকার্ড বুননের পরিবর্তে ডোরাকাটা বুননের কদর বাড়ে। অনুসন্ধানগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, এই সময়ে উদ্ভিদভিত্তিক উপকরণগুলো ফিরে আসতে শুরু করে।
মধ্যযুগের সূচনালগ্নে বেশিরভাগ কাপড় আমাদের কাছে এসেছে উত্তর ইউরোপ থেকে। যদিও ইউরোপের অন্যান্য অংশের সাধারণ মানুষ এই সময়ে কী পরতেন, সেই সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। অভিজাতদের সমাধিক্ষেত্রে আমদানি করা সিল্ক এবং সিল্ক-লিনেন মিশ্রণের কাপড় ব্যবহৃত হত। নকশা করা হত সোনা বা রুপোর সুতোয়, যা সাধারণ বুনন, ডাবল কাপড়, ল্যান্স এবং ব্রোকেডে বোনা হত। সাধারণ জনগণ সম্ভবত পশম, লিনেন, শণ কাপড় এবং নেটল কাপড় পরত।
প্রযুক্তির উন্নতি
মধ্যযুগের মাঝামাঝি সময়ে, বস্ত্র উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য রূপান্তর ঘটে। সুতো এবং কাপড় উৎপাদন একটি গিল্ড ক্রাফটে পরিণত হয়। উৎপাদন দ্রুত করার জন্য নতুন কৌশল উদ্ভাবিত হয় এবং প্রযুক্তির উন্নতি হয়। একাদশ শতাব্দীতে প্রথম অনুভূমিক তাঁতের প্রচলন ঘটে, যা পুরনো উল্লম্ব তাঁতের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ। ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে, অনুভূমিক তাঁতে বুনন ব্যাপক হয়ে ওঠে এবং একই সময়ে আমরা চরকা আবিষ্কার দেখতে পাই, যা সুতো উৎপাদনকে উল্লেখযোগ্যভাবে ত্বরান্বিত এবং উন্নত করে। কাপড় তৈরির প্রক্রিয়াটি বিশেষায়িতকরণে বিভক্ত করা হয়েছিল, যা উৎপাদন ত্বরান্বিত করেছিল এবং অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করেছিল।
বাণিজ্য ও ভ্রমণের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে, রেশম এবং তুলার মতো বিদেশি উপকরণগুলো মহাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তুলো ধীরে ধীরে সস্তা এবং প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হতে থাকে, যতক্ষণ না এটা প্রায় সকল সামাজিক শ্রেণির পোশাকে স্থান করে নেয়। এটা ইউরোপে প্রাথমিক উদ্ভিদভিত্তিক উপাদান হিসাবে লিনেনকে সরিয়ে দেয়। কখনও কখনও পশমের পরিবর্তেও ব্যবহৃত হত। তবে, অনেক ধরনের পোশাকের জন্য, যেমন ঠান্ডা আবহাওয়ার পোশাক এবং আনুষঙ্গিক, সামরিক ইউনিফর্ম, পুরুষদের স্যুট ইত্যাদিতে পশম অপূরণীয় প্রমাণিত হয়েছিল।
পশমের কাপড় তৈরির মূল কাঁচামাল হল ভেড়ার পশম। যদিও চমরিগাই গাই, লামা, ছাগল, উটের লোমও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ভেড়ার অনেক প্রজাতি আছে। তবে সকলের কাছে বস্ত্র উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত লোম নেই। শরীরের কোন অংশ থেকে তৈরি, পশুর বয়স এবং লিঙ্গের উপর নির্ভর করে লোমের গুণমানও পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
লৌহ যুগ থেকেই ভেড়ার পশম কাটার জন্য মানুষ স্প্রিং শিয়ার ব্যবহার করত। তার আগে, চিরুনি দিয়ে পশম তুলতে হত। আজ, বৈদ্যুতিক শিয়ারগুলো লোম কাটার প্রক্রিয়াটিকে অনেক সহজ করে তুলেছে। কাঁচা লোম বা চর্বিযুক্ত লোম কাটার পরপরই প্রক্রিয়াজাত করা হয়। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রক্রিয়া দিনে দিনে উন্নত হয়েছে।

আরও পড়ুন-কেরলের স্থানীয় নির্বাচনে ভরাডুবি হল বামপন্থীদের

উৎপাদনকারী দেশ
অস্ট্রেলিয়া এবং চিন বিশ্বের বৃহত্তম পশম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত। অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ব পশম বাজারে শীর্ষে। উচ্চমানের মেরিনো পশম উৎপাদনের জন্য পরিচিত। পাশাপাশি চিন ভোক্তা এবং উৎপাদক উভয় হিসাবে বিশ্বের পশম শিল্পের উপরও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, বাজারের গতিশীলতা, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং কৃষি অনুশীলনের মতো বিভিন্ন কারণে নির্দিষ্ট র্যাঙ্কিং এবং উৎপাদনের মাত্রা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে থাকে। অস্ট্রেলিয়া এবং চিনের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক, ইরান, ইরাক, ইংল্যান্ড, মরক্কো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত পশম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
শীতের কাপড়ের ঐতিহ্য ও ইতিহাস বিশেষ করে বাংলার প্রেক্ষাপটে খুবই সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময়। যদিও বাংলার শীত খুব কঠিন নয়। তবুও শীতকালে উষ্ণতার জন্য যেসব বস্ত্র ও পোশাক ব্যবহৃত হয়েছে শত শত বছর ধরে, তার পেছনে রয়েছে সংস্কৃতি, অর্থনীতি, জলবায়ু ও হস্তশিল্পের এক অপূর্ব মিশ্রণ। প্রাচীন বাংলায় শীতের প্রধান উষ্ণ বস্ত্র ছিল পশমী কাপড়, রেশমের শাল এবং সূচিকর্ম করা কাঁথা। পল্লব বংশের সময় থেকেই মসলিনের সঙ্গে শীতের জন্য মোটা সুতির কাপড় ও পশম মিশ্রিত কাপড় তৈরি হত।
মধ্যযুগে সুলতানি আমলে আরব, পারস্য ও তুর্কি প্রভাবে এসেছিল পশমিনা শাল, কাশ্মিরি শাল এবং দোশালা। ধনী পরিবারে শীতের প্রধান পোশাক ছিল কাশ্মিরি পশমিনা শাল ও দোশালা।
বাংলায় শীত
বাংলার গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি কাঁথা শীতের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্য। পুরনো শাড়ি, ধুতি, লুঙ্গি ইত্যাদি কাপড় একাধিক স্তরে জুড়ে সেলাই করে তৈরি হত এই উষ্ণ কাঁথা। শীতের রাতে শোয়ার সময় একাধিক কাঁথা গায়ে জড়ানো হত।
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলায় হালকা থেকে মাঝারি ঠান্ডা থাকে। ভোর ও রাতে তাপমাত্রা দ্রুত নেমে যায়। শীতে আর্দ্রতা তুলনামূলক বেশি থাকায় বাতাসে একটা স্যাঁতসেঁতে ঠান্ডা অনুভূত হয়, যা শুষ্ক দেশের মতো কনকনে না হলেও শরীরে বেশি লাগে। শহরাঞ্চলে কুয়াশা ও ধুলোবালির কারণে সকালগুলো ধূসর থাকে, রোদ উঠলে একটু উষ্ণতা পাওয়া যায়। আমাদের শীতে ভারী বরফ-ঠান্ডা না থাকায় লেয়ারিং সবচেয়ে কার্যকর। এক্ষেত্রে পশম দারুণ কাজ করে। এখনও বাংলা জুড়ে শীতের মরশুমে অত্যাধুনিক পশমের পোশাকের রমরমা দেখা যায়।
শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতার নাগরিকরাও শীতবস্ত্র কিনতে মুখিয়ে থাকেন। তাঁদের জন্য শীতের শুরু থেকেই কলকাতায় বাহারি সব পশমের পোশাক নিয়ে হাজির ভুটিয়ারা। প্রতি বছরের মতো এই বছরেও নিউমার্কেট, ওয়েলিংটন স্কোয়্যার-সহ কলকাতার অনেক জায়গায় অস্থায়ী স্টল সাজিয়ে অল্প দামে গরম পোশাকের পসার মেলে বসেছেন নেপাল ও ভুটান-সহ ভারতের সিকিম, হিমাচল প্রদেশ, দার্জিলিং, কাশ্মীরের মতো শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বোনা পশমের নরম কম্বল-সহ শীতের রকমারি পোশাকও বেশ প্রসিদ্ধ। রকমারি রঙের নরম পশমের শাল, হাত মোজা, সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার, টুপি, পঞ্চুর দারুণ চাহিদা।
মানতে হবে নিয়ম
পশমের সোয়েটার, জ্যাকেট শুধু পরলেই হল না, তার যত্নআত্তিও জরুরি। ঠিক ভাবে যত্ন না নিলে, কয়েক দিনের মধ্যে রোঁয়া ওঠা শুরু হবে। কাচা এবং শুকোনোর ভুলে নষ্ট হতে পারে সোয়েটারের জেল্লাও। সেটা যাতে না হয়, তার জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। পশমের পোশাক সব সময় যে দোকানেই কাচতে দিতে হবে এমন কোনও মানে নেই। ঘরেও ধুয়ে নেওয়া যায়। তবে গরম জলে ভুলেও ধোয়া চলবে না। কড়া ডিটারজেন্ট পশমের চরম শত্রু। তাই কম ক্ষারের তরল সাবান ব্যবহার করতে হবে। স্বাভাবিক তাপমাত্রার ভিজিয়ে রাখতে হবে জলে। তবে মিনিট পনেরোর বেশি নয়। তার পর সাবধানে অল্প ঘষে পরিষ্কার জলে বার দুয়েক ধুয়ে নিলেই হবে। সাবানের পরিবর্তে শ্যাম্পু বা শীতের পোশাকের জন্য বিশেষ কার্যকর এমন কোনও ডিটারজেন্টও ব্যবহার করা যায়।
পশমের পোশাক কাচার পর বেশি নিংড়ানো উচিত নয়। প্রয়োজনে কলের উপর রেখে জল ঝরিয়ে নিতে হবে। পশমের পোশাক ঝুলিয়ে শুকোতে না দিয়ে, ছাদে কিংবা বারান্দায় যেখানে ভাল রোদ আসে এমন জায়গায় মাটিতে তোয়ালে পেতে শুকোতে দিতে হবে। পশমের পোশাক ঘন ঘন ধোওয়া ঠিক নয়। বেশি ধুলে পোশাকের কোমলতা আর ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে যায়। ঘাম-যুক্ত পশমের পোশাক আলমারিতে তুলে রাখলে পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। রোদে শুকিয়ে তার পরেই আলমারিতে তোলা উচিত।
পশমের মোজা, মাফলার এবং টুপি শীতে প্রতিদিন ব্যবহার করলে দ্রুত ময়লা হয়ে যায়। তাই তিন-চার দিন পরপর উষ্ণ জলে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। এতে পশমের পোশাকের সুরক্ষা বজায় থাকবে এবং দীর্ঘদিন ভাল থাকবে।
পশমের জামাকাপড় থেকে অ্যালার্জি হয় অনেকের। পশম আসল সমস্যা নয়, সমস্যাটা হল অ্যালার্জির। শীতের দিনে গরম পোশাক, বিশেষত উলের সোয়েটার বা কম্বল নামানোর সময় অনেকের হাঁচি শুরু হয়। দীর্ঘ দিন ওয়ার্ড্রোবে বন্দি হয়ে রয়েছে এমন সোয়েটার বা জ্যাকেট নামিয়ে পরার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। এই সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘ডাস্ট মাইট অ্যালার্জি’। তাই গরম পোশাক নামানোর সময়ে সতর্ক থাকতে হবে।

আরও পড়ুন-যুবভারতীর বিপুল ক্ষতিতে উঠছে প্রশ্ন, দায় এড়াল ফেডারেশন ও আইএফএ

নিষিদ্ধ ঘোষিত
সম্প্রতি পশমের তৈরি পোশাক ব্যবহার নিয়ে কোনও কোনও জায়গা থেকে আপত্তি উঠতে শুরু করেছে। নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকের মঞ্চে পশমের তৈরি উপকরণ ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। এই নিয়ম ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকের আয়োজক দ্য কাউন্সিল অব ফ্যাশন ডিজাইনারস অব আমেরিকা দাপ্তরিকভাবে বিষয়টি ঘোষণা করেছে। সিএফডিএর সঙ্গে এই উদ্যোগে শামিল হয়েছে হিউম্যান ওয়ার্ল্ড ফর অ্যানিমেলস অ্যান্ড কালেকটিভ ফ্যাশন জাস্টিস। সিএফডিএ জানিয়েছে, তাদের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অংশগ্রহণকারীদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার জন্যই সেপ্টেম্বর ২০২৬ বেছে নেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই ফ্যাশনের এই মঞ্চে ফারের ব্যবহার খুবই কম দেখা গেছে। সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানিয়েছে প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। মনে করা হচ্ছে, এতে নিরীহ প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা কমবে। সিএফডিএ বিবৃতিতে বলেছে, আশা করছি এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ডিজাইনারদের প্রাণিকুল সম্পর্কে আরও গভীরভাবে ভাবতে সাহায্য করবে। নতুন এই নিয়মে যেসব প্রাণীকে কেবল পশমের জন্য মেরে ফেলা হয়, যেমন মিঙ্ক, শিয়াল, খরগোশ, কারাকুল ভেড়া, চিনচিলা, কায়োটি, কমন র্যাকুন ডগ— সেইসব প্রাণীর পশম-সহ চামড়ার আবরণ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে। তবে আদিবাসীদের যারা ঐতিহ্যবাহী শিকারপদ্ধতির মাধ্যমে প্রাণীর চামড়া সংগ্রহ করেন, তাদের জন্য কিছুটা ব্যতিক্রম নীতি থাকবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই প্রাণীর পশম-সহ নির্দয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ করে ফ্যাশন পণ্য তৈরির বিষয়ে সমালোচনা করে আসছেন প্রাণীপ্রেমীরা। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সেরা চার ফ্যাশন উইকের মধ্যে প্রথমেই লন্ডন ফ্যাশন উইক ২০১৮ সাল থেকে ফার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। এবার সেই পথে পা বাড়াল নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইক। গুচি, কোচ, শ্যানেলের মতো লাক্সারি ব্র্যান্ডগুলোতেও সাত বছর ধরে বন্ধ আছে ফারের ব্যবহার। তবে মিলান ও প্যারিস ফ্যাশন উইকে এখনও ফারের ব্যবহার চোখে পড়ে। বিশ্বখ্যাত মিডিয়া প্রতিষ্ঠান কোড নেস্ট, ‘এল’ ও ‘ইনস্টাইল’ ম্যাগাজিন সম্পাদকীয় নীতি তৈরি করে ফারের প্রচার এবং বিজ্ঞাপন বন্ধ রেখেছে।
ভালমন্দ দুটো দিকই আছে। এইসব সংস্থার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সর্বত্র পশমের তৈরি উপকরণ ব্যবহার নিষিদ্ধ হলে ভবিষ্যতে মুখ থুবড়ে পড়বে বৃহৎ এই শিল্প। কর্মহীন হবেন বহু মানুষ। সেটাও কিন্তু ভাবতে হবে।

Latest article