জমে উঠেছে নাট্যমেলা

জমে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নাট্যমেলা। মঞ্চস্থ হচ্ছে পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের নাটক। আছে মূকাভিনয়, পুতুলনাটক, অন্তরঙ্গ থিয়েটারও। শহরের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে জেলার নাট্যদলও। দর্শক সমাগম হচ্ছে ভালই। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে কলকাতা উৎসবমুখর। নাট্যমেলা ঘুরে লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

শীত-বসন্তের সন্ধিক্ষণ। নরম বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে টুকরো টুকরো সংলাপ। সাজঘরে তুমুল ব্যস্ততা। মঞ্চ আলোকালো। ছুটছে সময়। উঠছে অভিনয়ের ঢেউ। জুটছে দর্শকের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। উপলক্ষ চতুর্বিংশ নাট্যমেলা। এই মুহূর্তে চলছে কলকাতা পর্যায়। মহানগরের দর্শকরা দেখছেন জেলার নাটক। কলকাতার নাটক দেখেছেন জেলার দর্শকরা। এইভাবেই সরে যাচ্ছে মধ্যিখানের পর্দা। দূর হয়ে যাচ্ছে সমস্ত ভেদাভেদ। মিশে যাচ্ছে জেলা ও মহানগর। নাট্যমেলার হাত ধরে ঘটছে সংস্কৃতির মহামিলন।
৫ ফেব্রুয়ারি, কলকাতার রবীন্দ্র সদন প্রেক্ষাগৃহে সূচনা হল নাট্যমেলার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব হর ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির সভাপতি বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার, আকাদেমির সচিব দেবকুমার হাজরা প্রমুখ। আয়োজনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি।

আরও পড়ুন-স্কুলের গাফিলতি : পর্ষদ সভাপতি

স্বাগত ভাষণে বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘এর আগে পাঁচটি জেলায় নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দার্জিলিং, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর চব্বিশ পরগনা, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর। আজ থেকে শুরু হল কলকাতা পর্যায়ের নাট্যমেলা। শুধুমাত্র কলকাতায় আটকে না থেকে জেলায় জেলায় পৌঁছে যাওয়ার ভাবনাটা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নাট্যমেলায় সবাই আসুন। নাটক দেখুন। অন্যদের আসার কথা বলুন।’
বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব হর ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি এর আগে কোনও সরকারি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত থাকিনি। এসে ভাল লাগছে। একটা সময় নাট্যমেলা ছিল কলকাতা-কেন্দ্রিক। এখন জেলায় জেলায় পৌঁছে গেছে। এই উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য।’
বক্তৃতার শুরুতে দর্শকদের ‘নাটকের বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির সভাপতি বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেই একটি জেলায় আমরা অভিনয় করে এলাম। নাট্যমেলাতেই। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের কাছে। সেখানে দেখলাম এক অভূতপূর্ব ঘটনা। দর্শকরা ভিড় করে এসেছেন নাটক দেখার জন্য। দুপুর থেকে দাঁড়িয়ে। এতটাই তাঁদের উৎসাহ। যাঁরা এসেছিলেন, সবাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত নাটক দেখার সুযোগ পেলেন না। এটা দেখে ভেতরে ভেতরে আমার কষ্ট হল। তবে তাঁদের উন্মাদনা দেখে ভালও লাগল। এখন এইরকম উন্মাদনা চোখে পড়ছে সারা রাজ্যে জুড়েই।’

 


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি প্রকাশিত রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু সম্পাদিত দুই খণ্ডের সংকলন গ্রন্থ ‘সাধারণ বঙ্গ রঙ্গালয়ের সার্ধ-শতবর্ষ’। বক্তৃতায় মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘তথ্য সংস্কৃতি বিভাগ এই বছর ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করে এই নাট্যমেলা করছে। এর আগে জাতীয় নাট্য উৎসবে খরচ করেছিল ৮০ লাখ। মোট দেড় কোটি টাকা এক বছরে রাজ্য খরচ করেছে থিয়েটারের জন্য। এই জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই। অন্য কোনও রাজ্যে কোনও সরকার এত টাকা ব্যয়ে করেনি থিয়েটারের জন্য।’
কলকাতা পর্যায়ে দেখানো হচ্ছে পূর্ণ ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের নাটক। আছে মূকাভিনয়, পুতুলনাটক, অন্তরঙ্গ থিয়েটারও। সব মিলিয়ে ১২০টা নাটক দেখানো হচ্ছে। রবীন্দ্র সদন, গিরিশ মঞ্চ, মধুসূদন মঞ্চ, শিশির মঞ্চ, তৃপ্তি মিত্র নাট্যগৃহে। রবীন্দ্র সদন, গিরিশ মঞ্চ, মধুসূদন মঞ্চে প্রদর্শন শুরু হচ্ছে বিকেল তিনটেয়। দ্বিতীয় প্রদর্শন সন্ধে সাড়ে ছ’টায়। শিশির মঞ্চে প্রদর্শন শুরু বিকেল সাড়ে তিনটেয়। তৃপ্তি মিত্র নাট্যগৃহে প্রদর্শন শুরু সাড়ে চারটায়। দ্বিতীয় প্রদর্শন সন্ধে সাড়ে ছ’টায়। শহর কলকাতার পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে পশ্চিম বর্ধমান, নদীয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা প্রভৃতি জেলার বিভিন্ন নাট্যদল। আড্ডা জোন তৈরি হয়েছে একতারা মুক্তমঞ্চে। চলছে নাটুকে আড্ডা। অভিনয় নিয়ে, সাজসজ্জা নিয়ে, আলো ইত্যাদি নিয়ে কথাবার্তা বলছেন বিশিষ্ট নাট্যজনেরা। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটেয়। তার আগে সাড়ে তিনটে থেকে পরিবেশিত হচ্ছে লোকনাটক— খন, ডোমনি, আলকাপ, সুতো পুতুল, ডাং পুতুল, রং পাঁচালি, ভাঁড় যাত্রা, কুশান পালা। এ ছাড়াও আছে বহুরূপী, রণপা।

আরও পড়ুন-অরূপ-ইন্দ্রনীলের বৈঠকে কাটতে চলেছে জট

গগনেন্দ্র শিল্প প্রদর্শশালায় কিংবদন্তি নাট্যব্যক্তিত্ব বাদল সরকারকে নিয়ে আয়োজিত হয়েছে একটি বিশেষ প্রদর্শনী ‘বাদলদা’। এইবছর তাঁর জন্মশতবর্ষ। প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখেছেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ প্রমুখ। খোলা থাকছে প্রতিদিন দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
এবারের উদ্বোধনী নাটক ছিল বালি নোটো প্রযোজিত নাটককার মনোজ মিত্রের ‘আত্মগোপন’। নির্দেশনায় ময়ূরী মিত্র ও অমর চট্টোপাধ্যায়। এই নাটকের মধ্যে দিয়ে স্মরণ করা হয়েছে প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব মনোজ মিত্রকে। প্রায় পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছে এবং দর্শকদের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে। পাশাপাশি অন্য নাটকগুলিও লাভ করছে দর্শকপ্রিয়তা। কলকাতা পর্যায়ের নাট্যমেলা জমে উঠেছে। চলবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বিশিষ্টজন থেকে সাধারণ মানুষ, প্রত্যেকের মুখেই প্রশংসা শোনা যাচ্ছে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের।

Latest article