আলিপুরের ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে আজ, বৃহস্পতিবার কন্যাশ্রী দ্বাদশ বর্ষের অনুষ্ঠান হয়ে গেল। সন্দেশ কেক কেটে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) কৃতীদের হাতে এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই পুরস্কার তুলে দেন। এবার কন্যাশ্রী প্রকল্প রূপায়ণে বাঁকুড়া জেলা প্রথম স্থান অধিকার করেছে। দ্বিতীয় স্থানে পূর্ব বর্ধমান আছে। তৃতীয় স্থানে আছে পশ্চিম বর্ধমান। ঝাড়গ্রাম এবং উত্তর দিনাজপুর পেয়েছে বিশেষ পুরস্কার। কলকাতা জেলায় কন্যাশ্রীতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে বড়িশা গার্লস হাই স্কুল, দ্বিতীয় পুরস্কার জিতেছে বেহালার সারদা বিদ্যাপীঠ ফর গার্লস, তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে উচ্চ বালিকা বিদ্যামন্দির, উচ্চ মাধ্যমিক। কলকাতার কলেজগুলির মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পেয়েছে বঙ্গবাসী কলেজ, বিবেকানন্দ কলেজ ফর উইমেন এবং আশুতোষ কলেজ।
আরও পড়ুন-লিয়েন্ডার পেজের বাবা প্রয়াত, শোকজ্ঞাপন মুখ্যমন্ত্রীর
কন্যাশ্রী দিবসে উনেস্কো ও উনাইটেড ন্যাশন্সকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় জানালেন ৬২ টি দেশের ৫৫২ টি প্রকল্পের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কন্যাশ্রী। এর উপকার পেয়েছে ৯৩ লক্ষ পড়ুয়া। আমি চাই পরের বছর ১ কোটি হোক। বিশেষ অনুষ্ঠান হবে। ১৭ কোটি খরচ হয়েছে এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই। শুধু তাই নয়, নিজের কলেজে ভর্তির সময়ের সমস্যার কথা মনে করলেন তিনি। তিনি বলেন, ”আমি যে কষ্ট পেয়েছি, ছোটরা যেন তা না পায়। আজকের নতুন প্রজন্ম যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। সব সুবিধা পায়। আমরা যখন ছোট ছিলাম আমি দেখেছি বাবা মারা যাওয়ার পর গলার কত হার বিক্রি করে কলেজে ভর্তি হতে হয়। কিছু সুবিধা ছিল না।”
আরও পড়ুন-৯৩ লক্ষের বেশি ‘কন্যাশ্রী’, শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক
তিনি বলেন, ”আগে কন্যাশ্রী ছিল শুধু স্কুলে। আমি দেখলাম অনেক ছাত্রীদের বাবা মা বিয়ের চাপ দেন। দেবেন না। মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে দিন। তাঁদের আত্মনির্ভর হতে দিন। আজ সরকারি স্কুলে সবাই কন্যাশ্রী। কোন ভেদাভেদ নেই। কলেজেও কন্যাশ্রী ২ পান। স্মার্ট কার্ড আছে। আমার খুব গর্ব হচ্ছিল সেদিন যেদিন আমি নেদারল্যান্ডে ইউনাইটেড নেশন এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার মধ্যে প্রথম নাম ঘোষণা হল কন্যাশ্রীর। মেয়েরা শুধু পড়াশোনা নয়, ভোকেশনাল ট্রেনিংও করছে। মেয়েরা দেশ চালাচ্ছে। ২০১১ সালে ড্রপ আউটের সংখ্যা ছিল পৌনে ৫ পার্সেন্ট। কন্যাশ্রী চালুর পর প্রাথমিকে ছাত্রীদের ড্রপআউট শূন্য। যারা বাংলাকে নিয়ে সমালোচনা করেন তাদের বলি, স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন, নিচু থেকে লোক তুলে আনতে। আজ মেয়েরা দেখিয়ে দিয়েছে প্রাইমারিতে ড্রপআউট ‘জিরো’। সেকেন্ডারিতে ২০১১-১২ সালে ড্রপআউটের সংখ্যা ছিল ১৬.৩২ শতাংশ। এখন হয়েছে ২.৯ শতাংশ। তার মানে মেয়েরা পড়াশোনা করছে। উচ্চ মাধ্যমিকে আগে ছিল ১৫.৪১ শতাংশ। এখন হয়েছে ৩.১৭ শতাংশ। অনেকে এই সময়ে গ্র্যাডুয়েশন শেষ করে চাকরিতে ঢুকে যায়। এটা কি গর্ব করার ব্যাপার নয়? বিশ্বের ৫৫২ প্রকল্পের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কন্যাশ্রী প্রকল্প। এই প্রকল্পের ফলে স্কুলছুট কমেছে। কন্যাশ্রীর সাথে সবুজ সাথীও পাচ্ছে তারা। সবুজসাথী প্রকল্পে ১ কোটি ৩৮ লক্ষ সাইকেল দেওয়া হয়েছে। ১২ লক্ষ পড়ুয়াকে এই মাসের শেষের দিকে সাইকেল দেবো। এছাড়া বিয়ের সময় ২৫ হাজার টাকাও পাচ্ছে। একাদশ শ্রেণীতে আমরা ওদের স্মার্টফোন দিচ্ছি বিনামূল্যে যাতে নিজের পড়াশোনা নিজেরাই খুঁজে নিতে পারে। সেটার নাম দিয়েছি আমি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের একটি বইয়ের নাম ‘তরুনের স্বপ্ন’ সেই নামে। এছাড়া গবেষণা উচ্চমাধ্যমিক এসবের জন্য স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট ও স্কলারশিপ আমার দিচ্ছি। ইউজিসি সব বন্ধ করে দিলেও আমরা নিজেরা দিচ্ছি।”