সারা রাজ্য জুড়ে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন আজ রাজপথে। তাদের একটাই দাবি তিলোত্তমার বিচার চাই। আমিও তিলোত্তমার মৃত্যুর বিচার চেয়ে পথে নেমেছি মানবিক কারণে। বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে দিলাম জাস্টিস ফর আরজি কর গ্রুপে। এতটা পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। তা হলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে এই আন্দোলনের পেছনের মুখগুলো, যারা দূরে থেকে সব কিছু পরিচালনা করে চলেছে খুব নিপুণ ভাবে। যাদের দূরভাষে ভেসে আসা গোপন নির্দেশিকায় সম্ভবত ভেস্তে গেল বৃহস্পতি বারের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্মঘটি জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক।
আরও পড়ুন-আমরা করব জয়
একটু লক্ষ্য করে দেখবেন, এরা সামনে থেকে নাচ, গান, বক্তৃতা বা পথনাটক কিছুই করছে না, তবু আছে ছায়ার মতো। তাদের ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে এক এক দিনের জন্য প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ভাবনায় তারা প্রবেশ করে তাদের বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করছেন।
আপনি বলবেন কই না তো, আমায় কেউ কিছুই বলেনি। আমি তো নিজের ইচ্ছায় যাচ্ছি বিচারের দাবিতে। এটাই হল তথ্য প্রযুক্তির সুচারু ব্যবহার যেটা আপনি বা আপনার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে সিপিএম ও বিজেপি করে যাচ্ছে। আপনি যখন বুঝতে পারবেন তখন দেখবেন না জেনে অনেক ভুল কাজ করে ফেলেছেন।
ধরুন উত্তেজনা ছড়িয়ে একটা ভিড়কে কাজে লাগিয়ে মা-মাটি-মানুষের পতাকা পুড়িয়ে ফেলা হল। এবার ওদের লক্ষ্য হবে মা মাটি মানুষের কার্যালয়। তার পর নেতা মন্ত্রীর গাড়ি। আপনার পাড়ায় যে ছেলেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী, তার বাড়ি বা তার পরিবার আক্রান্ত হবে। এখন আপনি মনে করবেন আপনি তৃণমূল কংগ্রেসকে, মা- মাটি-মানুষকে সমর্থন করে কোনও ভুল করলেন না তো? এই বিষয়টাই ওরা আপনার মনে চুপিসারে ঢুকিয়ে দিয়ে চায়।
আমি দু-দকের বেশি সময় ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে আমি জানি বাম রাজনীতির মাথা কীভাবে কাজ করে। বামপন্থী রাজনীতির মাথা বা নেতৃত্ব সাধারণত গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীয়তার উপর ভিত্তি করে কাজ করে, যা একধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় নীতি নির্ধারণ ও কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ উভয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন-বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে জিন্না-স্তুতি শুরু হল ওপারে, বদলের বাংলাদেশ
তাই আপনি যদি ভেবে থাকেন সাধারণ মানুষের মতো করে লড়াই করে এদের বিরুদ্ধে আপনি খুব সহজেই জিতে যাবেন, তাহলে বলতেই হবে, আপনি ভুল ভাবছেন। কারণ বিগত দিনের ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ্য করে দেখুন, এরা আস্তে আস্তে মুখোশ ছেড়ে বেড়তে শুরু করে দিয়েছে। এর পর এরা সাধারণ মানুষের ভাবনার গভীরে পৌঁছে তার স্বাভাবিক ভাবনা ও বুদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। একে রাজনীতির ভাষায় বলে ‘The larger conspiracy’। সাদা বাংলায়, ‘ বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। তাই বলছি, সজাগ থাকুন। বিগত ১৩ বছর এরা রিসার্চ করে এই তিলোত্তমার বিচার চাই বিষয়টা কাজে লাগিয়ে আবার ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই বৃহত্তর ষড়যন্ত্র সাদা চোখে বোঝা সম্ভব নয়।
জেনে রাখুন, এটাই বাম ও রামের নিপুণ কৌশল। খেয়াল করলেই নজরে পড়বে, স্থানীয় বাম-ঘেঁষা ছেলে-মেয়ে যারা এলাকায় এতদিন খুব একটা পরিচিত ছিল না, আন্দোলনের রাশ এখন তাদের হাতে। আর আপনি অরাজনৈতিক মানুষ ভেবে তাদের কথায় পথে নেমে পড়ছেন। যারা এই বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে আপনাকে ব্যবহার করছে তারা কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের তল্পিবাহক। হাল্লা বোল, হাম ছিন কে লেঙ্গে আজাদি, দফা এক দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ— এগুলো শুনেও বুঝতে পারছেন না!
সাধু সাবধান!!