প্রতিবেদন : পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে বিরোধীদের লাগাতার কুৎসার জবাব আদালতে দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন (WB Election Commission)। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে তথ্য-পরিসংখ্যান সহ হলফনামা দিয়ে কমিশন জানিয়ে দিল, ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনের থেকে ২০২৩-এ কম মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে। একইসঙ্গে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কী ধরনের কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আদালতকে তাও জানিয়েছে কমিশন। বুধবার মক্কা থেকে পঞ্চায়েত ভোটের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। এই ঘটনায় কমিশন মিনাখাঁর বিডিও’র বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে চলেছে। বুধবার দিনভর এই বিষয় নিয়ে জোর আলোচনা চলে রাজনৈতিক ও আইনজীবী মহলে। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীরা তাদের কুৎসা অব্যাহত রেখেছে। কারণ যখন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার তুঙ্গে, সেসময় মানুষের দরজায় না থেকে বিরোধীরা রয়েছে আদালত ও কমিশনের দরজায়। বাকি যেটুকু সময় থাকছে তখন তাঁরা যাচ্ছেন টিভি চ্যানেলগুলির দরজায়৷ ফলে বিরোধীদের মধ্যে হতাশার বহিঃপ্রকাশ স্পষ্ট। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্বাচন কমিশন (WB Election Commission) আদালতকে যে তথ্য ও পরিসংখ্যান জানিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বে ১,৩৩,৬৭৩টি বৈধ মনোনয়নের মধ্যে ২৩,৬১৯টি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। শতাংশের হিসাবে যা ১৭.৬৬।
এবার ২০২৩ সালে ২,২৮,১৫৮টি বৈধ মনোনয়নের মধ্যে ২০,৬১২টি প্রত্যাহার করা হয়েছে। শতাংশের হিসাবে যা ৯.০৩। এই হিসেব জমা পড়ার পরই বিরোধীরা বুঝে যায় এতদিন তারা নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে হাওয়ায় কথা বলে যেভাবে বাজার গরম করছিল তা ধোপে টিকবে না। ফলে বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস-আইএসএফের রামধনু জোটের কুশীলবরা নতুন কৌশলে মাঠে নেমে পড়েছেন। তাঁরা এখন একসুরে বলতে শুরু করেছেন, এই পরিসংখ্যান ঠিক নয়। কিন্তু কেন? তার ব্যাখ্যা নেই তাঁদের কাছে। নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা যেখানে আদালতে হলফনামা দিয়ে একথা জানাচ্ছেন সেখানে তা বিশ্বাসযোগ্য নয় বিরোধী নেতারা তা বলছেন কোন যুক্তিতে? তারও ব্যখ্যা নেই।
আরও পড়ুন- চিকিৎসক থেকে অভিনেতা শুভেন্দু
এখানেই শেষ নয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। সেগুলি কী তাও জানানো হয়েছে কমিশনকে। এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা বলেন, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যদি দেখা যায় সেটা ইচ্ছাকৃত তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশন সূত্রের খবর, বিভিন্ন বিষয়ে যাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ-সহ গুরুতর অভিযোগ আসছে, তাঁদের শো-কজ করা হবে। মিনাখাঁ ছাড়াও ভাঙড় ১ ও ২ নম্বর ব্লক, উলুবেড়িয়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকজন বিডিওর বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা নিয়ে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী দলগুলি। উলুবেড়িয়ায় বিডিও বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সেখানে সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে দেওয়া তথ্য সাদা কালি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়। আদালত প্রথমে এই ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়।
পরে কমিশনের আবেদনে সাড়া দিয়ে সিবিআই তদন্ত খারিজ করা হলেও ওই ঘটনা নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। অন্যদিকে, ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কোনও বিশেষ দলের মনোনয়ন নেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সেই মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এ নিয়ে কমিশনকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। ফলে এবার তারা এই অভিযোগগুলির ভিত্তিতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী সোমবার আরও বিস্তারিত রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে চলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ফলে বিরোধীদের হাতে রইল পেন্সিল আর মুখের সামনে ফাও ফুটেজ খাওয়ার জন্য টিভি ক্যামেরা আর বুম।