প্রতিবেদন : মেডিক্যালের স্নাতক পাঠক্রমে ভর্তির পরীক্ষা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট বা নিটে বেলেগাম দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় দেশের একাধিক রাজ্য। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের জবাবাদিহি তলব করেছে। বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, কেন্দ্রকেই এই অনিয়মের দায় নিতে হবে। রাজনৈতিক সমালোচনার পাশাপাশি এবার নিটে দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ উঠল খোদ চিকিৎসক মহলেই। একাধিক চিকিৎসক সংগঠন বিষয়টি নিয়ে সরব। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর হস্তক্ষেপের আর্জি জানানো হয়েছে। দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে আইএমএ। অনিয়মের সুরাহা না হলে ধর্মঘটেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমবিবিএস ও বিডিএসে ভর্তির জন্য সর্বভারতীয় স্তরে প্রবেশিকা পরীক্ষা বা নিট আয়োজিত হয়। এই পরীক্ষা নিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় স্তরের জাতীয় পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থা বা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)। এবছর ৫ মে দেশের ৫৭১টি শহরে নিট পীরক্ষায় বসেন প্রায় ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী। লোসকভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের দিনই প্রকাশিত হয়েছে এবছরের নিট পরীক্ষার ফল। এনিয়েও সরব বিরোধী দল থেকে একাধিক চিকিৎসক সংগঠন। তাঁদের বক্তব্য, তড়িঘড়ি ভোটের ফলাফলের দিনই নিটের ফলপ্রকাশ হয়েছে, যাতে দুর্নীতির ছবি আড়াল করা যায়। আরও ১০ দিন পরে ফলপ্রকাশের কথা ছিল। লোকসভা ভোটের আড়ালে যাতে নিট-কেলেঙ্কারি ঢাকা পড়ে যায় সে জন্যই লোকসভার ফলপ্রকাশের দিনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর এনটিএ-র ভূমিকা এখন আতশকাচের নিচে।
আরও পড়ুন-৪ পণবন্দি মুক্ত, জানাল ইজরায়েল, গাজায় অসংখ্য পড়ুয়ার মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ
সর্বভারতীয় স্তরের নিট পরীক্ষায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির কাছে উচ্চপর্যায়ের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম। ঘটনাচক্রে এবছরের নিট পরীক্ষায় পূর্ণমান পেয়েছেন একসঙ্গে ৬৭ জন। তার মধ্যে বিজেপি শাসিত হরিয়ানার একটি নির্দিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্রের ৬ জন সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপকের তালিকায় রয়েছেন। চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, আগে হাতে গোনা কয়েকজন পূর্ণমান পেতেন। কিন্তু একধাক্কায় ৬৭ জন কীভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেলেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। চিকিৎসক সংগঠনগুলির দাবি, কোনওভাবেই এটা হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, পরীক্ষার ফরম্যাট অনুযায়ী ১৮০টি প্রশ্ন এবং প্রতি প্রশ্ন পিছু ৪ নম্বর থাকে। উত্তর সঠিক হলে যেমন ৪ নম্বর পাওয়া যায়, উত্তর ভুল হলে কাটা যায় ৫ নম্বর। অর্থাৎ মাত্র একটি উত্তর ভুল হলেই খুব ভাল পরীক্ষা দিয়েও ৭১৫ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে একসঙ্গে ৬৭ জনের পূর্ণমান পাওয়া নিয়ে সন্দেহ থাকে। এর পাশাপাশি ৫ নম্বর গ্রেস দেওয়া নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি ও ছত্তিশগড়ের বেশ কিছু পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দেরিতে শুরু হওয়ার অজুহাতে প্রায় ১৫০০ পরীক্ষার্থীকে এই গ্রেস নম্বর দেওয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ৫ নম্বর গ্রেস পাওয়ায় প্রায় ৪৪ জন পূর্ণমান পেয়েছেন। কোন নিয়মে এবং ঠিক কত দেরিতে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় এই গ্রেস নম্বর দেওয়ায় হল তারও কোনও হিসেব নেই। সব মিলিয়ে এবছরের মেডিক্যাল পড়ুয়াদের নিট পরীক্ষা নিয়ে অভিযোগের বন্যা।