রাজ্যে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে সোমবার বিকেল থেকে সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে একটি বিশেষ সিনেমার (The Kerala Story) প্রদর্শন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এই ধরনের সিনেমার মাধ্যমে আদতে বিরোধী রাজ্যগুলিকেই টার্গেট করছে বিজেপি। শুধু বাংলা নয়, তামিলনাড়ুতেও ইতিমধ্যে সিনেমাটির প্রদর্শন বন্ধ করা হয়েছে। তবে সেখানে রাজ্য সরকার নয়, শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই সিদ্ধান্ত মাল্টিপ্লেক্স অ্যাসোসিয়েশনের। ‘কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমাটির জন্য ওখানকার মানুষ অপমানিত হয়েছে। এবার ‘কেরালা ফাইলস’ তৈরি হল কর্নাটকের ভোটের আগে। কেরল সিপিএম শাসিত রাজ্য। এটা নিয়ে সিপিএমের সুর চড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু ওরা বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। তাই সাধারণ মানুষের জন্য জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই আওয়াজ তুলতে হচ্ছে। মনগড়া গল্পের ভিত্তিতে এইসব সিনেমা বানানো হচ্ছে। জননেত্রী বলেই দিয়েছেন, ‘‘আসলে ওদের লক্ষ্য—বাংলা সহ বিরোধী রাজ্যগুলিকে ছোট করে দেখানো এবং সেখানে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরি করা।” তাঁর জোরালো ঘোষণা, ‘‘বাংলায় কোনওদিন এই সংস্কৃতির উৎপত্তি হতে দেব না।”
এমতাবস্থায় বঙ্গের একজন সহনাগরিক হিসেবে কাস্তে হাতুড়ি তারার মাননীয় নীতিবাগীশ জ্যাঠামশাইয়ের প্রতি একটি খোলা চিঠি।
জ্যাঠামশাই! আপনি তো বিরাট প্রগতিশীল। তাই একটি ব্যান বা নিষিদ্ধকরণ করার বিপক্ষে আজ বিরাট প্রতিবাদ আপনার, তা সেই সিনেমা যতই সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক হোক না কেন।
তা জ্যাঠামশাই আপনি ক’টা ছোট প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান অনুগ্রহ করে—
১) দ্বিখণ্ডিত ব্যান কে করেছিল। বাক্-স্বাধীনতার প্রশ্নে সেদিন তো আপনাকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুনিনি।
২) রাশিয়ান সিনেমা টরাসকে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব থেকে বাদ দিতে কারা উদ্যোগী হয়েছিল মাননীয় জ্যাঠামশাই? লেনিনের একাধিক সঙ্গিনীর সঙ্গে যৌনজীবন কেন দেখানো হবে কিংবা সিনেমার পরিচালকের এত সাহস যে সিনেমায় লেনিনের পশ্চাদ্দেশ দেখাবে!! সেই নিয়ে সেদিন কারা যেন বাক্-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল বিকাশবাবু??
৩) নন্দনে সুমন মুখোপাধ্যায়ের হারবার্ট প্রদর্শন কারা বন্ধ করে দিয়েছিল যেন?
৪) ব্রাত্য বসুর নির্দেশনায় উইঙ্কল- টুইঙ্কল কিংবা শাঁওলী মিত্রের পশুখামার কারা যেন বন্ধ করে দিয়েছিল?
৫) আচ্ছা এতসব কঠিন বিষয়ে না গিয়ে একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান দেখি, আনন্দবাজার পত্রিকা অফিসে কারা ৫২ দিন পেপার ছাপিয়ে বিক্রি করতে দেয়নি মাননীয় জ্যাঠামশাই?
আজ মরাল হাই গ্রাউন্ড নেওয়ার আগে এই উত্তরগুলো যে বিকাশ ভট্টাচার্য এবং তাঁর দলকে দিয়ে যেতেই হবে।
বিজেপিকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনি না, যারা ক’দিন আগেই বিবিসির ডকুমেন্টারি ব্যান করে দিয়েছে, ইউটিউব থেকেও সরিয়ে দিয়েছে, পারজানিয়া থেকে ফানাহ একাধিক সিনেমা চলতে দেয়নি, দীপা মেহতার ফায়ার থেকে ওয়াটার, ভারতীয় সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে শুটিং সেটে আক্রমণ করেছে, লাল সিং চাড্ডা থেকে পাঠান সবই বয়কটের ডাক দেয়, তাদের কথার কোনও উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনই বোধ করি না।
অবশ্য বব ডিলানের কালজয়ী গানের অনুসরণে কবীর সুমনের গানে কবেই তো আমরা জানি সেই অমোঘ লাইনের অংশ
‘প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরওতো জানা।’
আরও পড়ুন: শাহপুত্রের ৮০ হাজার গুণ সম্পত্তি বৃদ্ধি, তবু গ্রেফতার নয় কেন?
পুনঃ রাজ্যে নিষিদ্ধ হওয়া ছবিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফিল্ম (The Kerala Story) বিশেষজ্ঞরাও। তাঁদের প্রশ্ন, আইসিস-এ ভারতীয় মহিলাদের যোগদানের বিষয়টি তুলে ধরতে হঠাৎ কেরলকেই বা কেন বেছে নেওয়া হল? বরং দেশে আইসিস সংক্রান্ত সব থেকে আলোচিত দু’টি মামলাই হল ডবল ইঞ্জিন রাজ্য কর্নাটকের। কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, আইসিস-এ যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ উপরের দিকে নাম রয়েছে উত্তরপ্রদেশেরও। গত পাঁচ বছরে বিজেপি শাসিত গুজরাত থেকে নিখোঁজ হয়েছে ৪০ হাজারের বেশি মহিলা। মধ্য প্রাচ্যের জঙ্গি শিবিরে নাকি পাঠানো হয়েছে তাঁদের।

