পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একের পর এক জনহিতকর প্রকল্প যেমন কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কর্মশ্রী আজ বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত। এত বঞ্চনা, এত বিদ্বেষ, এত কুৎসা সত্ত্বেও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর একের পর এক মাস্টার স্ট্রোকে বিরোধী রাজনৈতিক দল আজ কুপোকাত। সরকারি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসকে কীভাবে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে আসা যায় তা পশ্চিমবঙ্গ সরকার করে দেখিয়েছে ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্প করে, যার সুবিধাও মানুষ হাতেনাতে পেয়েছে। বাম জমানায় মানুষ সরকারি অফিসে যেতে ভয় পেত। সাধারণ মানুষের কাজ লাল সুতোর গেরোয় আটকে দিনের পর দিন পড়ে থাকত। সরকারি অফিস থেকে কাজ বের করে আনা ছিল চরম দুঃসাধ্যের। আজ সেই সরকারি অফিস মানুষের দুয়ারে বসে চটজলদি কাজ সম্পন্ন করছে, তাও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। তা একমাত্র সম্ভবপর হয়েছে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের উদ্যোগে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে। দুয়ারে সরকারের নবম পর্যায়ে এসে ৭.৭৫ লাখ শিবিরের মাধ্যমে প্রায় ১২ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে দুয়ারে সরকার প্রকল্প। এই ১২ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৯ কোটি মানুষ ইতিমধ্যেই পরিষেবা পেয়েছেন। যা এক কথায় অভূতপূর্ব।
আরও পড়ুন-লাইসিন, স্বাস্থ্যরক্ষায় নীরব সৈনিক
কৃষি, শিল্প ও পরিষেবা এই তিনটি ক্ষেত্রই পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে শুধু নয়, বৃদ্ধির হার জাতীয় ক্ষেত্রের থেকেও অনেকটাই বেশি। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের তথ্য অনুসারে সঠিক পরিকল্পনা নীতির ওপর ভরসা করে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি জিএসডিপি-এর হিসাবে ১৮ লক্ষ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। রাজ্য সরকার নিজের প্রচেষ্টায় বিচক্ষণতার সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে নিজস্ব আয় অর্জন করেছে। রাজ্যের নিজস্ব কর বাবদ আয় চারগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। মূলধনী ব্যয় যা কিনা কোনও রাজ্যের পরিকাঠামো কতটা উন্নত হল তার জানান দেয়, অর্থাৎ কোনও রাজ্যের উন্নতিতে রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, নানান শিল্প করিডর ইত্যাদি পরিকাঠামো ব্যাপকভাবে নির্ভর করে।
২০১০-১১ অর্থবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে মূলধনী ব্যয় ১৩ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২৮৯৬৩.০৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। সারাদেশ যেখানে বেকারত্বের জ্বালায় ভুগছে সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৪০ শতাংশ বেকারত্ব হ্রাস করেছে, যা কেন্দ্রের নীতি আয়োগও মেনে নিয়েছে। রাজ্যকে আর্থিক বঞ্চনা করেও যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার নানান সামাজিক প্রকল্প যেমন গৃহনির্মাণ প্রকল্প, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প, সামাজিক সুরক্ষা এবং কল্যাণমূলক প্রকল্পে বাজেটে বরাদ্দ অনেকটাই কমিয়েছে, সেইখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নানান সামাজিক প্রকল্পে ঢালাও বরাদ্দ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে মনরেগা প্রকল্প বন্ধ হওয়ার ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করেছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় টাকা বন্ধের ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দরিদ্র মানুষের স্বার্থে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প চালু করেছে। প্রথম ধাপে এক বা দুই হাজার নয়, প্রায় ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে বাংলার বাড়ি তৈরি করে দেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব তহবিলের ওপর ভর করে কন্যাশ্রী প্রকল্পে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে মহিলাদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছে, কর্মশ্রী প্রকল্পে প্রান্তিক মানুষের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছে, বাংলার বাড়িতে দরিদ্র মানুষের মাথায় ছাদ সুরক্ষিত হয়েছে, এবার পাড়ার স্বার্থ সুরক্ষিত করার পালা। তাই এবার ‘আমাদের পাড়া-আমাদের সমাধান’।
আরও পড়ুন-অভিষেকের প্রশ্নে সংসদে বেআব্রু হল মোদি সরকার
যেকোনও প্রকল্প অর্থাৎ কোথায় রাস্তা হবে, কোথায় উড়ালপুল হবে, কোনও স্কুলের ঘরটা ভেঙে পড়েছে, কোথায় একটি জলের কল দরকার, কোথায় ড্রেন হলে জল নিষ্কাশনের সুবিধা হবে এইরকম আরও কতরকম কাজ ঠিক হয় ওপরতলার ঠান্ডা ঘরে বসে, যাতে সুবিধার থেকে আফসোস অনেক সময় বেশি হয়ে যায়। সেই আফসোস যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে না থাকে তাই ভেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বড় পদক্ষেপ ‘আমাদের পাড়া-আমাদের সমাধান’। আসলে এমন অনেক ছোটখাটো সমস্যা আছে এলাকাভিত্তিক যাতে সাধারণ মানুষরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এইসব সমস্যা দেখার মতো সময় বা নজর অনেক সময় কর্তৃপক্ষের কাছে থাকে না। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু পাড়ায় কী কী সমস্যা হতে পারে সেই বিষয়ে কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর, সর্বদাই চেষ্টা করা হয়েছে সরকার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করার। তার ওপরই ভর করে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে পরিষেবা সঠিক সময়ে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছায়। যার ফলস্বরুপ ‘আমাদের পাড়া- আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের সূচনা। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হতে চলেছে এই প্রকল্প। যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কান্ডারি কোনও সরকারি অফিসার নয় বা কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারা নয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ। নির্দিষ্ট এলাকায় মানুষের কী চাহিদা তার ওপর ভর করেই নেওয়া হবে আগামীর পরিকল্পনা। পশ্চিমবঙ্গে কমবেশি প্রায় আশি হাজারের বেশি বুথ আছে। এই ৮০ হাজার বুথের প্রত্যেকটি বুথে কমবেশি কয়েকশো মানুষের বাস। অনেক সময় স্থানীয়ভাবে সরকারের কাছে নানান চাহিদা থাকে, চাহিদা পূরণের জন্য সরকার প্রতিটি বুথের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ করবে। এই বরাদ্দ ঠিক হবে বুথে বুথে মানুষের প্রয়োজনের ভিত্তিতে। সারা বাংলা জুড়ে প্রায় ২৭ হাজারেরও বেশি ক্যাম্প হবে। এই মহান কর্মযজ্ঞ চলবে ৬০ দিন ধরে এবং পরবর্তী ৩০ দিন ধরে সেইসব চাহিদার মূল্যায়ন হবে অর্থাৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হবে ঠিক ৯০ দিনের মাথায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রায় আট হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এই প্রকল্পে।
আরও পড়ুন-লিস্টনের জোড়া গোল, জিতল মোহনবাগান
এক কথায় বলা যায়, এই প্রকল্প এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে চলেছে। আগামী দিনে এই প্রকল্প যে মানুষের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নেবে তা হলফ করে বলা যেতে পারে। এখানেই শেষ নয়, বঞ্চনা- কুৎসাকে উপেক্ষা করেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেভাবে সাধারণ মানুষের স্বার্থে লড়াই করে যাচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।