রাজকুমারী বৈষ্ণবী
আমাদের জীবন থেকে কত কিছুই না হারিয়ে যায়। যা অনেক সময় ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। যেটুকু পড়ে থাকে তাকে নিয়েই চলে আঁকড়ে বাঁচার প্রচেষ্টা। তেমনই এক নিরন্তর প্রচেষ্টায় রত কিষাণগড়ের রাজকুমারী বৈষ্ণবী। অসম্ভবকে চাইলে যে ধরে রাখা যায় তারই প্রমাণ দিলেন বৈষ্ণবী। জয়পুর থেকে কিষাণগড়ের দূরত্ব মাত্র ১০০ কিমির। যোধপুরের রাজা উদয় সিংহের অষ্টম পুত্র এবং কিষাণগড়ের রাজকুমারী বৈষ্ণবী কুমারীর পূর্বপুরুষ রাজা কিষাণ সিংহ ১৬০০ সালের গোড়ার দিকে রাজস্থানে এই শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ছোট এই শহরটির দু’পাশে শৈল্পিক ভবনগুলোর কত গল্প বলে যায়। কিন্তু আজ আমি সেই শহরের গল্প নয়, শহরের রাজকুমারীর শৈল্পিক প্রয়াসের কথা বলব।
অসম্ভবের টানে
রাজরক্ত নিয়ে জন্ম তাঁর। চিন্তাভাবনাতেও সেটাই প্রকাশিত হত। একটা সময় পূর্বপুরুষদের শৈল্পিক সত্তার নবজাগরণ ঘটে তাঁর মধ্যে। তাঁর কাছে শিল্প হল ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা সংরক্ষণের উপায়।
বৈষ্ণবী জানান, এই দেশে অনেক শিল্প ও কারুশিল্প রয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু আজ আর নেই, সেই হারিয়ে যাওয়া শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। যদিও প্রাচীন রাজপরিবার, বড় শিল্পপতি এবং সরকারের এই শিল্প ও কারিগরদের সংরক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে তবু আমি মনে করি চাইলে নিজেরাও দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রক্ষায় অবদান রাখতে পারি।
তিনি পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠলেন লুপ্তপ্রায় শিল্পগুলির। রাজস্থানের বিশ্বখ্যাত ক্ষুদ্রাকৃতির চিত্রকর্ম সংরক্ষণের জন্য বেশ কয়েকজন স্থানীয় শিল্পীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। এমনকী ২০১০ সালে ৩৫০ বছরের পুরনো কিষাণগড় স্কুল দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে স্টুডিও কিষাণগড় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নকশা এবং শিল্প ইতিহাসের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈষ্ণবী কিষাণগড় শিল্পকে বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
শেষ বলে কিছু নেই
১৭ শতকের শেষের দিকে কিষাণগড়ে রাজদরবারের চিত্রকলার শুরু এবং ১৮ শতকের প্রথম দিকে তা বিকশিত হয়। ১৬৫৮ সালে আওরঙ্গজেব যখন সিংহাসনে বসেন তখনই ঘটে বিপত্তি। আওরঙ্গজেব মুঘল দরবারের সব শিল্পকর্ম নষ্ট করে দেন। তাই অনেক শিল্পী প্রাদেশিক দরবারে যোগ দেন। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে বাদশাহী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কিষাণগড়ের ক্ষুদ্রাকৃতি এবং ঐতিহ্যবাহী দৃশ্য শিল্প, হস্তশিল্পের জগতে ভাটা পড়ে।
কালের গ্রাসে হারিয়ে যেতে থাকে কিষাণগড়ের ক্ষুদ্রাকৃতির চিত্রকর্মগুলি। ঠিক সেই সময় হাল ধরেন তাঁদেরই বংশোদ্ভূত কন্যা বৈষ্ণবী। কথায় আছে, শেষ বলে কিছু নেই। পূর্বপুরুষদের শিল্প সাংস্কৃতিক সত্তাকে বাঁচিয়ে তোলেন তাঁর তুলির টানে। এমনকী ভারতের অন্যতম বিখ্যাত ক্ষুদ্রাকৃতি শিল্পের নামকরণ করা হয়েছে তাঁরই পূর্বপুরুষদের প্রতিষ্ঠিত শহর কিষাণগড়ের নামে।
নতুন করে শুরু
বৈষ্ণবী ব্রিটিশ মিউজিয়ামের প্রাক্তন ছাত্রী, যেখানে তিনি শিল্প ইতিহাসের উপর একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স করেছেন। যুক্তরাজ্যের SOAS বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিল্প ও প্রত্নতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন যেখানে তিনি এশিয়ান শিল্প নিয়ে পড়াশোনা করে এরপর যখন ভারতে ফিরে আসেন, তখন রাজকুমারী শিল্পকলা নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের পুরানো কর্মীরা আমাকে গল্প বলত যে কীভাবে কিষাণগড়ের বন্দেজ এত বিখ্যাত ছিল। যার কিছু উপাদান ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবিতে ব্যবহৃত হয়েছিল। তাঁরা বলেছিল যে কিষাণগড়ের কাগজ এবং সাবান প্রস্তুতকারকরাও খুব পরিচিত ছিল। আমি এই সাবান এবং কাগজ প্রস্তুতকারকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি কিন্তু খুঁজে পাইনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম লুপ্ত হয়ে গেছে। তবে, সৌভাগ্যবশত, আমি বিখ্যাত ক্ষুদ্রাকৃতির চিত্রশিল্পীদের খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছি। সেই সময়ে তাঁরা আসবাবপত্র রফতানি করার জন্য রং করতেন। আমি তাঁদের একত্রিত করে একটি স্টুডিও শুরু করি— যেখানে আমরা তাঁদের অর্থ প্রদান করি না, কিন্তু স্থায়ী কর্মসংস্থান দিই। আর এভাবেই স্টুডিও কিষাণগড়ের জন্ম হয়। শেষ থেকে হয় নতুনের শুরু।
কেন এই পথে
রাজকুমারীর শৈশবের পাতা উল্টে খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর প্রিয় দুটি শিল্পের স্মৃতি। যা তাঁর শৈল্পিক কেরিয়ারে ছাপ ফেলে। একটি হল কিষাণগড় দুর্গ অপরটি হল পরিবারের উদযাপন করা উৎসবগুলি। তিনি তাঁর শিকড়কে কখনও ভোলেননি। বৈষ্ণবী জানান, কিষাণগড় অন্যান্য রাজপুতানা রাজ্যের মতো বিশাল রাজ্য ছিল না, যেমন যোধপুর এবং জয়পুর। আমার পূর্বপুরুষরা সংস্কৃতিমনস্ক। তাঁদের একজন রাজপুত রাজপুত্র সাওন্ত সিং, যিনি কবি রাজপুত্র নামেও পরিচিত। তিনি ক্ষুদ্রাকৃতির চিত্রকর্মের সুন্দর কাজ এবং নাগরিদাস নামে কৃষ্ণের প্রতি ভক্তিমূলক (ভক্তি) কবিতা রচনা করার জন্য বিখ্যাত। আমার প্রপিতামহ, কিষাণগড়ের মহারাজা স্যার মদন সিং বাহাদুর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর পরিবারটি একটি উদযাপন করেন যাকে হিন্দোলা বলে। আমরা এখনও প্রতি বছর এটি করে চলেছি। আমি এই মহান ব্যক্তিদের গল্প এবং আমার পরিবারের ইতিহাস শুনে বড় হয়েছি। তাই, এই জিনিসগুলি আমাকে শিল্প ইতিহাস নিয়ে কেরিয়ার গড়তে অনুপ্রাণিত করেছে।
ব্যতিক্রম
কিষাণগড়ের সবুজে ঘেরা পরিবেশে বেড়ে ওঠার ফলে বৈষ্ণবী পেয়েছিলেন অনুপ্রেরণার রসদ। অনুপ্রাণিত হতেন দুর্গের ঝরোখা (বারান্দা), জালি (জাল), জটিলভাবে খোদাই করা তোড়ি (স্তম্ভ), বারান্দা ইত্যাদি থেকে। কিষাণগড়ের চিত্রকলা বাকি চিত্রকলা থেকে ভিন্ন। শিল্পীরা এই চিত্রকর্মে ঐতিহ্যবাহী রং ব্যবহার করে। সেই পাথরের রং কিন্তু তাঁরা ঘরেই তৈরি করেন। এ ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদ্রাকৃতির কাগজও ব্যবহার করেন। ইতিমধ্যে সোনা ও রুপোর পাতায় কাজ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন আধুনিক উপকরণেও কাজ করছেন। ঐতিহ্যকে ধরে রেখে নতুন-পুরনোর এই মেলবন্ধন এই চিত্রকর্মকে অন্য চিত্রকর্ম থেকে আলাদা করেছে।
লক্ষ্যে অটুট
বৈষ্ণবী আবেগের বশে এই পেশায় নিযুক্ত হলেও এখন লক্ষ্য তাঁর স্থির। তিনি তাঁর শিল্পকর্মকে বাণিজ্যিকভাবে আরও টেকসই করতে চান। সম্প্রতি, দিল্লির বিকানের হাউসে বৈষ্ণবী কুমারী এবং আর্ট সেন্ট্রিক্স স্পেসের প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক মণিকা জৈনের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতিপূর্বে, বৈষ্ণবী আরও বেশ কয়েকটি একক প্রদর্শনী করেছেন। কাঠমান্ডুতে ‘ডোমেনস অফ ওয়ান্ডার’ নামে একটি প্রদর্শনী— এতে পিচোয়াই চিত্রকর্মের পাশাপাশি ল্যান্ডস্কেপ এবং রাগিণী টোডির একটি সিরিজ ছিল। এর আগে তাঁরা চেন্নাইয়ে ‘কন্টেম্পোরারি টুইস্ট টু ট্র্যাডিশন’ নামে একটি প্রদর্শনী করেছিলেন। যেখানে তাঁরা মূলত পিচোয়াই চিত্রকর্ম, শ্রীনাথজি এবং অন্যান্য ভক্তিমূলক কাজের উপর মনোনিবেশ করেছিলেন। এছাড়াও তাঁদের একক শিল্প প্রদর্শনী ‘দ্য পাথ অফ গ্রেস’, যেখানে তাঁরা স্টুডিও কিষাণগড়ে তাঁদের বিভিন্ন ধরনের কাজ উপস্থাপন করেছিলেন।
পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলার প্রসারে যশোধরা রাজে বুন্দেলা বৈষ্ণবী আর বুন্দেলা যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাঁদের স্বপ্ন এবং লক্ষ্য এক। কেউ নিয়েছেন কিষাণগড়ের ক্ষুদ্রাকৃতির চিত্রকলার পুনরুজ্জীবনের ভার আবার কেউ ধরেছেন পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলার পুনরুজ্জীবনের রাশ।
শিল্পের কোনও সীমা নেই। যুগ যুগ ধরে বহু শিল্পের বহু চিত্রকলার আবির্ভাব হয়েছে এই পৃথিবীতে। প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র থেকে আজকের ডিজিটাল পেইন্টিংয়ের মধ্যে বয়ে গেছে বহু সময়ের স্রোত। তারই মধ্যে সৃষ্টি পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলার। সেই শিল্পকেও কালের ঘূর্ণিপাকে হারাতে বসেছিলাম আমরা। কিন্তু যশোধরা রাজে বুন্দেলা শেষরক্ষা করলেন।
পুরানো সেই দিনের কথা
অতীতে শিল্পের কদর মন্দ ছিল বললে ভুলই হবে। মুঘল আমলে যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হত। তবে ১৬৫৮ সালে যখন আওরঙ্গজেব সিংহাসনে বসেন তখন থেকেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যায়। তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেন না। অগত্যা উপায় না পেয়ে মুঘল দরবারের শিল্পীরা নতুন পৃষ্ঠপোষকদের খোঁজে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় পাহাড়ে চলে এসেছিলেন। সেখানে তাঁদের হতাশ হতে হয়নি বরং মিলেছে উষ্ণ অভ্যর্থনা। পাহাড়ি শাসক এবং হিমাচল প্রদেশের অভিজাতরা তাঁদের যথেষ্ট সাহায্য এবং সমর্থন দেন। এরপর সেখানে জন্ম নেয় পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলার।
আরও পড়ুন- এবার আটকে পড়া শ্রমিকদের ফেরাতে মহারাষ্ট্রে বিশেষ দল
কী এই পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলা
যে চিত্রকলায় রয়েছে ‘ভাগবত পুরাণ’, থেকে শুরু করে ‘ভাগবত গীতা’, ‘রামায়ণ’ এবং ‘গীত গোবিন্দ’-এর মতো হিন্দু ধর্মগ্রন্থের দৃশ্য, যেখানে ফুটে ওঠে রাম, কৃষ্ণ এবং রাধার মতো হিন্দু দেবতাদের প্রতিকৃতি। যেখানে স্থান পায় শাসক এবং ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের প্রতিকৃতি। পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলা বাকি আর পাঁচটা ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলা থেকে আলাদা। এই চিত্রকলা জানান দেয় গভীর রোম্যান্টিকতাকে, মান্যতা দিই রাধা-কৃষ্ণের ঐশ্বরিক প্রেমকে। এই শিল্পকলা মূলত ১৭শ থেকে ১৯শ শতাব্দীর মধ্যে উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব এবং জম্মু অঞ্চলের পার্বত্য রাজ্যগুলিতে দেখা যেত।
ক্ষয়িষ্ণু শিল্পকলার সংরক্ষণে
একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে হারাতে বসা এই শিল্পের পেছনে ‘আদা জল খেয়ে’ পড়লেন যশোধরা রাজে বুন্দেলা। এই শিল্পী একাধারে উদীয়মান শিক্ষাবিদ, অন্যদিকে বিলাসপুর স্কুল অফ পাহাড়ি মিনিয়েচার পেইন্টিং-এর উপর ডক্টর অফ ফিলজফির শীর্ষে, এমনকী পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলাও তৈরি করেন। ধামিতে তাঁর বাড়িতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সেগুলি শেখান। বর্তমানে, তিনি পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতির চিত্রকলার জন্য কমিশনে একটি ছোট কিন্তু নিবেদিতপ্রাণ দলের সঙ্গে কাজ করছেন।
শিল্পের প্রতি টান
বুন্দেলা শৈশব থেকেই সৃজনশীল। সে তাঁর কল্পনাপ্রবণ শিল্পমন ক্রমাগত অন্বেষণ করত। বুন্দেলা বলেন, ‘‘শিক্ষাগতভাবে আমি গড়পড়তা ছিলাম, কিন্তু আমার আসল আবেগ ছিল শৈল্পিক সাধনার মধ্যে। সৌভাগ্যবশত, আমার বাবা-মা অবিশ্বাস্যভাবে সমর্থন করেছিলেন, আমাকে প্রচলিত যে নিয়ম তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার পরিবর্তে আমার আগ্রহগুলি অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে আমি সেই আবেগকে একটি পেশায় রূপান্তরিত করেছি, একজন পেশাদার শিল্পী হিসেবে কাজ করেছি এবং আমার সবসময়ের স্বপ্নের সৃজনশীল জীবনযাপন করেছি।’’
তবে শিল্পকলার প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মায় যখন তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য সিমলায় যান। সেখান থেকে তিনি পাহাড়ি চিত্রকলার সাতটি প্রধান বিদ্যালয়ের সঙ্গে পরিচিত হন। প্রাণবন্ত রং এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি দেখে মুগ্ধ হন তিনি। এরপর সেই অভিজ্ঞতা যত বাড়ে আগ্রহ তত বাড়তে থাকে। বুন্দেলা পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতি শিল্প ছাড়াও কলমকারি, গোল্ড শিল্প এবং কালীঘাট চিত্রকলা-সহ অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলারও ভক্ত।
প্রায় নিভে যাওয়া প্রদীপের শিখার মতো পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলার পুনরুজ্জীবনে বুন্দেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন।
ধরনে বরণে
এক-একটি শিল্পের এক-একটি ধরন। রয়েছে ভিন্ন ইতিহাস, রয়েছে ভিন্ন ঐতিহ্য। যুগান্তরে বয়ে নিয়ে যায় কত না বার্তা।
বুন্দেলা জানান, পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতির ধরনটি সূক্ষ্ম এবং অভিব্যক্তিপূর্ণ, মনোমুগ্ধকর চিত্র, সূক্ষ্ম রেখা এবং নরম উজ্জ্বল রং-সহ। প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলি লীলাভূমি এবং কাব্যিক, ঢালু পাহাড়, ফুলের গাছ, নদী এবং প্রাসাদ দ্বারা পরিপূর্ণ যা একটি স্বপ্নের মতো পরিবেশ তৈরি করে। আবেগগুলি অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে এবং চিত্রগুলি প্রায়শই গভীর আধ্যাত্মিকতা এবং আনন্দকে প্রতিফলিত করে। শৈল্পিক করুণা, ভক্তিমূলক বিষয়বস্তু এবং আঞ্চলিক স্বাদের সংমিশ্রণ পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতিগুলিকে ভারতের শৈল্পিক ঐতিহ্যের একটি সত্যিই বিশেষ এবং লালিত অংশ করে তোলে।
শিল্পের প্রসার
শিল্প কখনও নিজের কাছে গচ্ছিত রাখার জিনিস নয়। তাই বুন্দেলা ও তার দল পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতির চিত্রকলার প্রসারে জন্য কাজ করছেন। এছাড়া এই চিত্রকলার প্রসারে সাতটি বিদ্যালয় রয়েছে : বাসোহলি, কুল্লু, মান্ডি, বিলাসপুর, কাংড়া, চাম্বা এবং গুলের।
তাঁর দলের কিছু সদস্য এখনও শেখার পর্যায়ে রয়েছেন, তাঁরা দক্ষতা এবং ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতির কৌশল সম্পর্কে ধারণা বিকাশ করছেন। অন্যরা আরও উন্নত স্তরে পৌঁছেছেন এবং এখন পেশাদার কাজ তৈরি করছেন।
বুন্দেলা পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতির ঐতিহ্যবাহী কৌশলগুলিতে দক্ষতা অর্জনে তাঁদের নির্দেশনা এবং সহায়তা দেন এবং তাঁদের কৌশলকে আরও পরিমার্জিত করতে সাহায্য করেন।
বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ
শিল্পের প্রতি কতটা ভালবাসা থাকলে মানুষ তাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচে। বাঁচিয়ে রাখে সেই শিল্পকে। পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলার প্রতি সেই টান সেই ভালবাসা বুন্দেলার চোখে-মুখে ফুটে ওঠে। যাঁরা ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলা ভালবাসেন তাঁদের সুবিধার্থে তিনি খুলেছেন হাউস হোমস্টে। এছাড়াও মনে যদি ক্ষুদ্রাকৃতি ভ্রমণের সুপ্ত বাসনা থাকে তাহলে একবার হলেও বুন্দেলার ‘মিনিয়েচার ট্যুর’ ঘুরে আসতে পারেন। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এই নারী পাহাড়ি ক্ষুদ্রাকৃতি চিত্রকলার প্রসারে যেভাবে কাজ করছে তা প্রশংসনীয়।