বাংলায় দাঙ্গা বাধাচ্ছে বহিরাগতরা, এই নিয়ে বার বার আগেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আজ চারদিনের জেলা সফরে পূর্ব মেদিনীপুরের সভা থেকে একই কথা বললেন তিনি। এদিন মঞ্চে উঠেই তিনি প্রথম দাঙ্গা নিয়ে সরব হন। তিনি বলেন, ‘সারাক্ষণ আমায় পড়ে থাকতে হয়। কখন বিজেপি গিয়ে দাঙ্গা করবে। এরা বোঝে না, বাংলার মানুষ দাঙ্গা ভালবাসে না। মানুষ দাঙ্গা করে না। বিজেপি দাঙ্গা করার জন্য গুন্ডা ভাড়া করে। এটা ক্রিমিনালদের নিয়ে অশান্তি করা। যে ছেলেটার ছবি আপনারা দেখছেন সে বন্দুক নিয়ে নৃত্য করছে রাম-নবমীর মিছিলে। রাম কখনও এমন বলেনি।’
আরও পড়ুন-‘পঞ্চায়েতে দক্ষ কর্মী চাই, ভাল মানুষ চাই’ পূর্ব মেদিনীপুর থেকে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
মঙ্গলবার সকালে বাড়তি নিরাপত্তা দেখা যায়। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা জলপথে দেখা হয়। কোস্টাল পুলিশের নজরদারি একটু বেশিই ছিল। দু’টি স্পিডবোর্ড করে জলপথে নজরদারি চালিয়েছেন তারা।
এদিন তিনি মঞ্চ থেকে নান্দিগ্রামের প্রসঙ্গ তুলে অনেক কিছুই বলেন। পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেন শ্রোতাদের। তিনি বলেন, ‘তমলুক থেকে চণ্ডীপুরে পৌঁছই। মার খেতে-খেতে এগোই। ঢিল খেতে- এগোলাম। নন্দীগ্রামে টিয়ার গ্যাস চালাল। তার আগে আমি সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে অনশন করেছিলাম। আমার শরীরের অনেক অঙ্গ ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল। আমার বারণ ছিল। আমি যেন রাস্তায় না বের হই। আমি নন্দীগ্রামে অজ্ঞান হয়ে যাই। নন্দীগ্রাম হাসপাতাল থেকে ওরা আমায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সমেত কলকাতায় পৌঁছে দিল। আমি তমলুক হাসপাতালে যাব বলে হাঁটতে শুরু করলাম।ওরা রাস্তায় বসে পড়ল আমায় আটকাতে। হাঁটতে-হাঁটতে তমলুক হাসপাতালে গেলাম। রাতে সাধারণ মানুষের থাকার হোটেলে থাকলাম। এক কাপড়ে বেরিয়েছিলাম। দাঁত মজনও ছিল না আমার সঙ্গে। ব্রাশ ছিল না। চিত্ত মাইতি ও তাঁর বউ শিখা মাইতি ছিলাম। সেই সময় চিত্ত মাইতি সব নিয়ে এসে সাহায্য করেন।’
আরও পড়ুন-‘দাঙ্গাবাজদের রেহাই নেই, ছেড়ে কথা বলব না আমরা’ বিরোধীদের নিশানা মমতার
এদিন তিনি বলেন, ‘আমি আনিসুরের মটোর বাইকে চড়ে গ্রামে-গ্রামে যাচ্ছিলাম। তখন সেখানে সিপিএম এসে উপস্থিত হচ্ছে। আর গালাগালি দিচ্ছে। এক অক্ষর থেকে বারো অক্ষর পর্যন্ত গালাগালি দিচ্ছিল। তার আগের দিন কোলাঘাটে পেট্রল বোমা রেখেছিল মারার জন্য। সেই সময় রাজ্যপাল গোপাল কৃষ্ণগান্ধী রাত্রিবেলা ফোন করে আমায় খবর দিয়ে বলেছিলেন, আপনি ওইখান থেকে চলে যান। ওরা পেট্রল বোমা মেরে উড়িয়ে। এরপর রাজ্যপালের কথা শুনে কোলাঘাট গেষ্ট হাউসে উঠলাম। দেখালাম বড়-বড় বাস দিয়ে গেস্ট হাউসের দরজা বন্ধ করা। আমি তো গ্রামের মেয়ে। জন্ম গ্রামে। আণি সাঁতার কাটতে পারি, গাছে উঠতে পারি। ধান কাটতে পারি, তুলতে পারি, মাছ ধরতে পারি। তাই ওরা কী করবে? আমি ডাবল ডেকার বাস বেয়ে উঠে লাফ দিয়ে ঢুকলাম। ওই রাতে লাগেজ নিয়ে ঢুকলাম। পরের দিন আমরা চালাকি করে ভিতরের রাস্তা দিয়ে এলাকায় গেলাম।’
আরও পড়ুন-অরুণাচল প্রদেশের ১১টি জায়গার নয়া নামকরণ চিনের, মোক্ষম জবাব দিল ভারতও
খেজুরি, তমলুকের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘খেজুরি, তমলুকের কথা মনে আছে তো? আমার মনে আছে আমি হলদিয়ায় একটি মিটিংয়ে গিয়েছিলাম।আমায় মাইক্রোফোন পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেয়নি। আমি কলকাতা থেকে মাইক নিয়ে গিয়েছিলাম। নন্দীগ্রামে সূর্যদ্বয়ের পর যখন আমায় রাস্তায় আটকে দেয়। আনিসুর বলে একটি ছেলে ছিল। সে এখন জেলে। আমি ওকে বলি তোর বাইক আছে? বলল হ্যাঁ। সেই সময় আণায় তমলুক-নন্দীগ্রামে যেতেই হত। কারণ তমলুক হাসপাতালে অনেকে ভর্তি। তার আগের দিন কালীপুজো ছিল। আমার মনে আছে, সুফিয়ান ফোনে আমায় বলে বন্দুকের শব্দ শুনুন দিদি। সুফিয়ান-আমায় বাদ দিয়ে নন্দীগ্রাম হয় না। সবাইকে নিয়ে চলতে হবে।’