খেলা শুরু করে দিয়েছে ওরা, সতর্ক হতে হবে আরও

ভুতুড়ে ভোটার আর ধর্মীয় বিভাজন, এই দুটিকে হাতিয়ার করে এবার বাজার গরম করতে চাইছে বিজেপি। মিথ্যেবাদী বিজেপির হাত থেকে বাংলাকে বাঁচাতে, দলের সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোটযুদ্ধে নামার শপথ নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। লিখছেন সাগ্নিক গঙ্গোপাধ্যায়

Must read

খেল খতম, পয়সা হজম। সেই একই কায়দায়, ভোট ফুরোলেই প্রতিশ্রুতি পালনের বালাই নেই। এটাই বিজেপির গ্যারান্টি। এটাই মোদির গ্যারান্টি।
ভোট বৈতরণী পার করার লক্ষ্যে বাংলার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আদলে ‘মুখ্যমন্ত্রী লড়কি বহিন’ প্রকল্প চালু হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। ভোট মিটতেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রং বদলাতে শুরু করেছে সেখানকার বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। শোনা যাচ্ছে, রাজ্যের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। তাই এই কোপ। লড়কি বাহিন প্রকল্প থেকে এক ধাক্কায় প্রায় ৫০ লক্ষ মহিলার নাম বাদ দিতে চলেছে মহারাষ্ট্র সরকার। এর আগে প্রায় ৯ লক্ষ নাম বাদ পড়েছিল। এবার টার্গেট প্রায় ৫০ লক্ষ। ‘মনমর্জির মাপকাঠি’। প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল মহাযুতি সরকার। তাদের কথায়, রাজ্যের মহিলাদের আর্থিক স্বনির্ভরতা বাড়াতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রাথমিকভাবে সুবিধা পেয়েছিলেন প্রায় ২ কোটি ৪৬ লক্ষ মহিলা। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর দফায় দফায় এই নাম বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু। তাহলে সবই কি ভোট টানার কৌশল?
এই সংবাদ কেবল এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, বিজেপি সরকার কথার খেলাপ করেছে। কারণ, কথা দিয়ে কথা না রাখাটাই বিজেপির দস্তুর। এটা এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, দেশের ১০০ কোটি মানুষের কাছে উদ্বৃত্ত অর্থ বলে কিছু নেই।

অর্থনীতির সহজ অঙ্ক হল, মধ্যবিত্ত ভোগ্যপণ্যের বাজারে টাকা না ঢাললে চাহিদা তৈরি হয় না। আর চাহিদা না থাকলে বাড়ে না উৎপাদন। ফলে বাজার অর্থনীতি ঘোরে না। অর্থনীতির এটাই ভিত। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা দেখিয়ে দিয়েছে, ১০০ কোটি দেশবাসীর সংসার চালাতেই আয়ের সবটা ফুরিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, তাদের হাতে উদ্বৃত্ত বলে আর কিছুই থাকছে না। ফলে ভোগ্যপণ্য কেনাকাটি তো দূরঅস্থ, সামান্যতম সঞ্চয়ও এখন আম জনতার কাছে অধরা থেকে যাচ্ছে। ইন্ডাস ভ্যালি অ্যানুয়াল রিপোর্টে সাফ দেখানো হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির ভারতে লাভের গুড় খেয়ে যাচ্ছে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ। দেশের ৫৭ শতাংশ সম্পদের দখল হাতে রেখে তারাই ধনী থেকে ধনীতর হচ্ছে। আর ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’ শ্রেণির তালিকা প্রতিদিন আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
কারণ? চরম মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব।

কেন্দ্রীয় সরকারি হিসেবও কিন্তু একেবারে এই অঙ্ক অস্বীকার করতে পারছে না। কারণ, পরিসংখ্যান মন্ত্রক তাদের সদ্য প্রকাশিত ‘টাইম ইউজ সার্ভে’তে ২০১৯ সালের সঙ্গে ২০২৪ সালের তুলনা করে দেখিয়েছে, পেটের তাগিদে দিনের অনেক বেশি সময় দৌড়তে হচ্ছে আম জনতাকে। পাঁচ বছর আগে গড়ে যেখানে ১৬৪ মিনিট কাজ করলেই অন্ন সংস্থান হয়ে যেত, এখন সেখানে গড়ে ১৮০ মিনিট খরচ করতে হয়। ফলে যে সময়টা তাঁরা পড়াশোনা বা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের জন্য খরচ করতেন, কমে গিয়েছে সেটাই। যে সময়টুকু খরচ করলে ভারতবাসীর রুজিরুটির ব্যবস্থা হত, তা আর যথেষ্ট হচ্ছে না। অন্য কাজ খুঁজে কিংবা ওভারটাইম করে সামাল দিতে হচ্ছে পরিস্থিতি। তারপরও সঞ্চয় বা ভোগ্যপণ্যের পিছনে খরচ তাঁরা করতে পারছেন না। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যাঁরা কোনও না কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাঁদের ধরেই সমীক্ষাটি চালিয়েছে কেন্দ্র। অথচ, মোদি জমানায় ২০ লক্ষ ভারতবাসী কাজ হারিয়েছেন, নোট বাতিল ও জিএসটির ধাক্কায় বহু সংস্থা বন্ধ হয়েছে, মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ের হার ৫০ বছরে সর্বনিম্ন, মূল্যবৃদ্ধির নিরিখে আয় কোভিডের আগের গড় পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা, পাঁচ বছরে জনসংখ্যাও বেড়েছে লাফিয়ে। সেই হিসেব ধরলে কেন্দ্র বিপাকে পড়তে বাধ্য। আর এরকম আবহে নাটক করে ভোট গুছিয়ে বিজেপি এখন মানুষের হাত থেকে নগদ টাকার জোগানও কেড়ে নিচ্ছে।

আরও পড়ুন- বিজেপির নতুন নাম এখন গেরুয়া কমরেড

মূল্যবৃদ্ধি-বেকারত্বের জ্বালায় আম জনতার জীবন থেকে সামাজিকতাও হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবারকে দেওয়ার মতো সময় কমেছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ঘরের কাজে সময় কমাতে বাধ্য হয়েছে মধ্য থেকে নিম্নবিত্ত। কাজের খোঁজেই হন্যে আজ ভারতবাসী। আর এই তথ্য খোদ মোদি সরকারের। তারাই বলছে, পরিবারের কাজের জন্য দু’ঘণ্টা সময় বের করতেও কালঘাম ছুটে যাচ্ছে আম জনতার। স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা কমছে। এখন সমাজের জন্য বিনা পারিশ্রমিকে গড়ে এক মিনিটের বেশি সময় দিতে পারছে না মোদির ভারত। রিপোর্ট থেকে ফের প্রমাণ হল, মোদি সরকার শুধু ধনীদের জন্যেই কাজ করে। গরিবের পকেট কেটে পুঁজিপতিদের সিন্দুক ভরে। গরিবের সমস্যা নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।
এই মিছে কথার সওদাগরদের আমরা আর ক’দিন সহ্য করব? কেনই বা করব?
এত কথা বলার কারণ একটাই। নির্বাচনী তথ্য বলছে, ২০১১ সালের পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়যাত্রা আরও প্রসারিত হয়েছে। রাজ্যের ক্ষমতায় টানা ১৫ বছরের পথে তৃণমূল কংগ্রেস। তাছাড়া রাজ্যের পুরসভা, পঞ্চায়েতেও তৃণমূল কংগ্রেসের আধিপত্য। এমনকী সর্বশেষ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও ২৯টি আসন জিতেছে জোড়াফুল শিবির। মা মাটি মানুষের এই জয়ের যাত্রাপথ আটকাতে প্রতি ভোটেই নানাবিধ কৌশল গেরুয়া শিবির নিয়ে এসেছে।

কিন্তু সেসবে কাজ হয়নি বলে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে অন্য অ্যাজেন্ডা নিয়েছে বিজেপি। হিন্দুত্বের জিগির তুলে সমাজে বিভাজন ঘটিয়ে ভোট বাক্সে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি। ভুতুড়ে ভোটার আর ধর্মীয় বিভাজন, এই দুটিকে হাতিয়ার করে এবার বাজার গরম করতে চাইছে বিজেপি।
ওদের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচাতে, দলের সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোটযুদ্ধে নামার শপথ নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।

Latest article