মোদির বুজরুকি নয়, এ হল দিদির গ্যারান্টি

কথা দিয়ে কথা রাখেন, তাই 'বাংলার বাড়ি' সবাই পাবেন। আবাস যোজনার সাফল্য শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। তিরিশ বছর বাদে ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদি ইন্দিরা আবাস যোজনার নাম বদলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা করে দেন। কিন্তু বঞ্চনার ইতিহাস বদলানো গেল না। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন করে সরকারি পদাধিকারীদের দিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে, আগামী দিনে সমস্ত গরিব মানুষের মাথার ওপর ছাদ গড়ার গ্যারান্টি দিচ্ছেন। দিল্লির মোদির মিথ্যাচারের সঙ্গে রাজ্যে দিদির আন্তরিকতার সেই পার্থক্য তুলে ধরছেন অধ্যাপক ড. রূপক কর্মকার

Must read

ভারতবর্ষে অধিকাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে, তাদের কাছে জীবিকা নির্বাহ করাই প্রথম ও একমাত্র চিন্তার বিষয়। সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে এমন অনেক পরিবার আছে যাদের বসবাসের জন্য নিজস্ব জমি থাকলেও মাথার ওপর মজবুত ছাদটুকু নেই। যার ফলে প্রতি বছর নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগে বহু নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়। ১৯৫৭ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে গ্রাম হাউজিং প্রোগ্রাম চালু করেন সাধারণ মানুষকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার (১৯৭৪-১৯৭৯) মাঝে দেখা যায় এই প্রকল্পে মাত্র ৬৭০০০ বাড়ি তৈরি করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন-২৩.৭৫ কোটিতে নাইট সংসারে ফের ভেঙ্কটেশ, বিদায় সল্ট, এলেন ডি’কক ও নরখিয়া

আবাস যোজনার সফলতা শুরু হয় ১৯৮৫ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর আমলে। তিনি প্রথম ইন্দিরা আবাস যোজনা চালু করেন এস সি, এসটি এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীদের বিনামূল্যে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির ব্যাপ্তি বাড়ানো হয় সমগ্র দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের জন্য। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইন্দিরা আবাস যোজনার নাম বদলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা করেন এবং ২ লক্ষ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে ২০২২ সালের মধ্যে গ্রামীণ এবং শহরের দরিদ্রদের জন্য ২ কোটি ঘর নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বলে রাখা ভাল এই প্রকল্পের ব্যয় কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উভয়ের দায়িত্ব। সমতল এলাকায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অনুদানের পরিমাণ ৬০:৪০ এবং উত্তর পূর্ব রাজ্য হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং জম্মু-কাশ্মীরের জন্য ৯০:১০ অনুপাতে খরচ করা হবে। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সরকার যত শক্তিশালী হয়েছে রাজনৈতিক ভাবে তাকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য বিরোধী পক্ষ ততই মাথাচাড়া দিয়েছে। আর আবাস যোজনার মতো জনমুখী প্রকল্পে যদি বাধার সৃষ্টি হয় তবে রাজনৈতিক ভাবে সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে বইকি। তেমনভাবেই দুর্নীতির অপপ্রচারে পশ্চিমবঙ্গে আবাস যোজনা যে বন্ধ হবে সেটাই স্বাভাবিক।
২০২২ সালের পর থেকে রাজনৈতিক জল অনেকদূর গড়িয়েছে, বারংবার কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল এসেছে, এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে রিপোর্ট পেশ করেছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বারংবার তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে, মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও কোন এক অজানা কারণে আবাস যোজনা শুরু করা যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ নদীমাতৃক রাজ্য আমরা সবাই জানি, বিশেষ করে উপকূলে অবস্থিত জেলাগুলি যেমন, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রাণহানিও ঘটে। তবে বিগত বছরগুলোতে যতবারই প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তৎপরতায় প্রাণহানি কমেছে কিন্তু সম্পত্তির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কারণ যতই সাধারণ গরিব মানুষগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে নিয়ে আসা হোক না কেন, তাদের যাবতীয় সবকিছু সেই অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে। মাথার ওপর পাকা ছাদ থাকলে তাদের প্রাণহানিও যেমন কমবে, সম্পত্তি ও সুরক্ষিত থাকবে। হত দরিদ্র মানুষগুলো যখন পাকাবাড়ির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল সেইসময় তাদের মাথায় যেন আবার বিপদের সঙ্কেত বাজতে শুরু করল।

আরও পড়ুন-অবৈধভাবে কয়লাচুরি রুখতে খনিমুখ ভরাট করছে প্রশাসন

১১ লাখ সুবিধাভোগী যাদের কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন করেছিল ২০২২ সালে তার জন্য ব্যয় হত প্রায় ১৩২০০ কোটি টাকা, এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ৭৯২০ কোটি টাকা এবং রাজ্য সরকার ৫২৮০ কোটি টাকা দিত৷ একসঙ্গে এত মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে সেটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনদরদি মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে দেখবেন? সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান যাতে উন্নত হয়, তার জন্য পুরো প্রকল্পটির বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাজ্য সরকার নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের জনপ্রিয় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও কথা দিয়েছিলেন, যে, কেন্দ্র আবাসের টাকা না দিলে রাজ্য সরকার সেই দায়িত্ব নেবে। সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় অনুদান না পেলেও রাজ্যের এই উদ্যোগ অন্যান্য রাজ্যের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন করে সরকারি পদাধিকারীদের দিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে, আগের নিয়ম যেমন মোটরচালিত দুই/তিন/চার চাকার গাড়ি থাকলে, যান্ত্রিক কৃষি যন্ত্রপাতি থাকলে, ৫০০০০ টাকার বেশি ক্রেডিট সীমা-সহ কিষাণ ক্রেডিট থাকলে, রেফ্রিজারেটর বা ল্যান্ডফোন থাকলে আবাসের ঘর পেতেন না, আবাস-এর সেই নিয়ম শিথিল করে নতুন করে আবাস যোজনার উপভোক্তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে সম্পূর্ণ করে ফেলেছে। এবার সংখ্যাটা ১১ লাখ নয় তা বেড়ে ১২ লাখ পরিবারের মুখের হাসি এবং পাকাবাড়িতে থাকার যে স্বপ্ন সেটাও আবার ফিরে এসেছে। শুধু ভূমি আছে তাদের জন্য নয়, ভূমিহীনদের জন্যও আবাস প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা করা হবে বলে সরকার ঘোষণা করেছে। ১৪০০০ হাজারেরও বেশি মানুষকে জমির পাট্টা প্রদানের মাধ্যমে আবাস যোজনার সুবিধা দেওয়া হবে। এই প্রকল্প শুধু একটি আবাসন প্রকল্প নয়, এটি রাজ্যের সাধারণ মানুষের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। আগামী মাসেই উপভোক্তারা আবাসের টাকা পেতে শুরু করবেন।

আরও পড়ুন-ওল্ড দিঘায় জগন্নাথের মাসির বাড়ির পথে গড়ে উঠতে চলেছে চৈতন্যদ্বার

‘বাংলার বাড়ি’ এই কর্মযজ্ঞ এখানেই থেমে থাকবে না। আগামী দিনে সমস্ত গরিব মানুষের মাথার ওপর ছাদ থাকবে এটাই ধ্রুবসত্য। ওই যে কথায় আছে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। আর সেই উপায় বাতলে দিয়েছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কথা দিয়ে তিনি যে কথা রাখেন সেটা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন। এই সিদ্ধান্তে বিরোধীদের কপালের চিন্তার ভাঁজ যে আরও চওড়া হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Latest article