প্রতিবেদন : সন্দেশখালি ষড়যন্ত্রের প্রথম পর্দা ফাঁস হয়েছিল ৪ মে। এবার দ্বিতীয় পর্ব। তা আরও বিস্ফোরক। ভিডিওয় প্রকাশ্যে এসেছিল সন্দেশখালির রাজনৈতিক জমি দখল করতে বিজেপির নীচ-ঘৃন্য রাজনৈতিক চিত্রনাট্য। তারপর বিজেপির প্রার্থীর বিস্ফোরক ভিডিও। প্রার্থী বলছে, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছিল ভুয়ো মহিলাদের। এখানেই শেষ নয়, মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন থেকে শুরু করে বিজেপি নেতারা এলাকার মহিলাদের সাদা কাগজে সই করিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ লিখে দেন। মিথ্যাচারের রাজনীতির আর এক পর্ব প্রকাশ্যে এল শনিবার রাতে। ৪৬ মিনিটের ভিডিওতে সন্দেশখালি-২-এর মন্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল আরও গভীর ষড়যন্ত্রের তথ্য সামনে এনেছেন। যেখানে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে মোদি-শাহর অঙ্গুলীহেলনে গদ্দার অধিকারীর দল দেদার টাকা ঢেলেছে চিত্রনাট্য সাজাতে। বন্দুক, বোমা, মদ কিনতে বিপুল টাকা দিয়েছে বিজেপি। ৭২ জন মহিলাকে বিদ্রোহী সাজাতে ২ হাজারের বেশি করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক দিনের খরচের জন্য নগদ দেওয়া হয়েছে। গঙ্গাধরের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বে এইভাবেই কথোপকথন এগিয়েছে।
আরও পড়ুন-সন্দেশখালি : তৃণমূল যাচ্ছে রাষ্ট্রপতির কাছে
প্রথম ব্যক্তি : আন্দোলন জারি রাখতে গেলে কিছু মোবাইল লাগবে। কটা দিলে চলবে?
গঙ্গাধর : দশটা মোবাইল দিলে আপাতত কাজ চলবে, প্রয়োজন তো অনেক… সন্দেশখালিতে টাকা না দিলে ১০ জন লোকও পাওয়া যাবে না। মুখ খোলার জন্য তো টাকা দিতে হবে।
প্রথম ব্যক্তি : ৭২ জন আন্দোলনকারী মহিলাকে কত টাকা করে দেওয়া হয়েছে?
গঙ্গাধর : ৫ হাজার টাকা করে মহিলাদের দেওয়া হয়েছে। জেলিয়াখালি- বীরমজুর-১ ও ২-এর মহিলাদের দেওয়া হয়েছে।
প্রথম ব্যক্তি : কীরকম ফান্ড হলে চলতে পারে?
গঙ্গাধর : এক লাখ হলে চলে যাবে। বাইকে করে গেলে তো তাদের তেল দিতে হবে। হাতে কিছু টাকা দিতে হবে। মদ দিতে হবে। কোলাঘাটে মিটিং হলে আমাতে তো ছেলেদের নিয়ে যেতে হবে। মোবাইলে পয়সা ভরে দিতে হবে। তেল দিতে হবে। না হলে ওরা আসবে কেন!
প্রথম ব্যক্তি : ভোট পর্যন্ত মদের সাপ্লাই কী রকম লাগবে? মহিলাদের জন্য আলাদা করে বলুন, পুরুষদের জন্য আলাদা করে বলুন। আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে তো লাগবে।
গঙ্গাধর : তিনটি অঞ্চলে প্রায় ৫০টা বুথ আছে। ওদের তো হাঁড়িয়া লাগবে, দেশি মদ লাগবে। ১০টা বুথের জন্য বলি!
প্রথম ব্যক্তি : না না আপনার মন্ডল। আপনার দায়িত্ব।
গঙ্গাধর : ৫ হজার টাকা করে যদি প্রতি বুথে ধরা হয়, ৫০টা বুথ। প্রায় আড়াই লাখ টাকা লাগবে।
প্রথম ব্যক্তি : মহিলাদের সংখ্যা কত মদ খাওয়ার ক্ষেত্রে?
গঙ্গাধর : ৩০ শতাংশ মহিলা ৭০ শতাংশ পুরুষ। মহিলারা আলাদা (এরমধ্যে আন্দোলনকারী মহিলারাও থাকবে) খাবে, পুরুষদের সঙ্গে কোনও মেশার ব্যাপার নেই। তবে ছেলেরা পিছন থেকে হেল্প করবে। ওটাই করুন, আপাতত কমই বললাম। প্রথম লোকসভাটা জিতি। পরে বিধানসভার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা করা যাবে। আপনারা আছেন যখন আমার একটু সুবিধা হল।
প্রথম ব্যক্তি : আর্মস সাপোর্ট কী লাগবে? মনিপুর আর কুরাকাটি তাইতো।
গঙ্গাধর : হ্যাঁ সন্দেশখালির জন্য লাগবে না।
প্রথম ব্যক্তি : কত আর্মস লাগবে? কী অস্ত্র লাগবে? পিস্তল-বোম আপনাদের এলাকায় কোন ধরনের জিনিসটা বেশি লাগবে।
গঙ্গাধর : পিস্তল বেশি লাগবে। মনিপুরে ২০ আর কুরাকাটির জন্য ৩০। ৫০ টা হলে ঠিক আছে।
প্রথম ব্যক্তি : এই যে ৫০টা পিস্তল যাদের হাতে দেবে তারা এটা ব্যবহার করতে অভ্যস্ত?
গঙ্গাধর : একদম অভ্যস্ত।
প্রথম ব্যক্তি : ম্যানপাওয়ার আপনার কাছে আছে?
গঙ্গাধর : ম্যানপাওয়ার আছে আমার কাছে।
প্রথম ব্যক্তি : বোমের কোনও সাপ্লাই লাগবে?
গঙ্গাধর : না বোমের সাপ্লাই লাগছে না। এই হলেই ঠিক আছে।
প্রথম ব্যক্তি : মোটামুটি কার্তুজ কত লাগবে?
গঙ্গাধর : এগুলো কী পর্যায়ের আছে? কোনটায় ৬টা থাকে, কোনটায় ১টা থাকে?
প্রথম ব্যক্তি : না সিঙ্গেল নাই। সব ৬টা।
গঙ্গাধর : ১২টা করে ধরুন। ৩৬০ মোট। ডাবল না থাকলে মুশকিল।
প্রথম ব্যক্তি : দাদা একটা জিনিস, কাজ হওয়ার পর কিন্তু মাল ফেরত দিতে হবে। এদের কাছে একটাও যদি থাকে, তাহলে কিন্তু চাপ।
গঙ্গাধর : না না, ঠিক আছে ফেরত যাবে। আপনাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এবার ওদেরকেও ওয়ান ম্যান করে ডাকতে হবে, বলতে হবে।
প্রথম ব্যক্তি : এই যে ধরুন ৩০ জন আছে, এদের মধ্যে তিনটে বা চারটে করে টিম করে দিলেন। তাদের মধ্যে একজন মাথা তার দায়িত্ব ডিস্ট্রিবিউশন আর কালেকশন দুটোই। আর ফায়ারিং যদি হয় তবে খোল কালেকশন করে ডেস্ট্রয় করতে হবে। খোল যেন কারো হাতে না পড়ে এটা মাথায় রাখতে হবে।
গঙ্গাধর : হ্যাঁ, ঠিক আছে।
প্রথম ব্যক্তি : তাহলে এখানে আপনার ৩০টা পিস্তল আর ওখানে ২০টা পিস্তল হলে আপনার হয়ে যাবে। আর আপনার এখন ১ লাখ টাকা ফান্ড হলে মোটামুটি আপনি চালিয়ে নিতে পারবেন।
গঙ্গাধর : হ্যাঁ, চালিয়ে নেব।
প্রথম ব্যক্তি : আর মদ মোটামুটি পার বুথ যদি ৫ হাজার টাকা করে ধরা হয় তাহলে মহিলা পুরুষ মিটে যাবে!
গঙ্গাধর : হ্যাঁ।
প্রথম ব্যক্তি : মহিলাদের আর কোন ডিম্যান্ড?
গঙ্গাধর : ডিমান্ড বলতে, যারা আন্দোলনকারী আছে তাদের আর্থিক দিকটা দেখলে একটু ভালো হয়।
আরও পড়ুন-আজ আন্তর্জাতিক মাতৃদিবস
প্রথম ব্যক্তি : মানে আন্দোলনকারীদের যে টাকা-পয়সা দেওয়া হচ্ছিল সেটা এখন বন্ধ আছে। সেটাকে রানিং করতে হবে, তাই তো?
গঙ্গাধর : হ্যাঁ ওটা রানিং করতে হবে।
প্রথম ব্যক্তি : ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
গঙ্গাধর : আপনারা যা করার করবেন।
প্রথম ব্যক্তি : আপনি এদের সাথে কথা বলবেন, কমিউনিকেট করবেন ডেকে এনে।
গঙ্গাধর : আমি সংগঠনের কথা বেশি বলব, ওটা কম। ওটা শেষে বলব।
প্রথম ব্যক্তি : নামের তালিকা দিন। (এবার গঙ্গাধর প্রথম ব্যক্তিকে বিভিন্ন জনের নাম, মোবাইল নম্বর ও এলাকার নাম দিতে থাকে)। এই যে আন্দোলনকারী এদের সব টাকা পয়সা দেওয়া হবে। এরা মন্ত্রী, এসডিও, বিডিওদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাবে। একটা ইস্যু তৈরি করতে হবে। এটা টানা চলতে থাকবে। ছোট-বড় নেতা যেই ঢুকুক তাদের ঘিরে ধরতে হবে।
এরপর গঙ্গাধর বেশ কিছু মহিলার নাম ও ফোন নম্বর দেয়। অঞ্জলি সিংহ, লতিকা সিংহ, সীমা সিংহ, শ্রাবন্তী সিংহ, শিবানী সিংহ, মালতি সিংহ। এরা সিংহপাড়ার। সন্দেশখালির তনিমা সরদার, সন্ধ্যারানি সরদার। আবার সন্দেশখালির কাটখালি নতুনপাড়ার বেশ কিছু মহিলার নাম দেয় গঙ্গাধর।
প্রথম ব্যক্তি : টিভিতে যাদের মুখ দেখা যাবে তাদের একটু আলাদা কেয়ার নিতে হবে। দ্বিতীয় নন্দীগ্রাম করতে হবে। তাই তো?
গঙ্গাধর : হ্যাঁ, দ্বিতীয় নন্দীগ্রাম।
কথোপকথনের প্রতিটি ছত্রে ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের চিত্রনাট্য পরিষ্কার। তৃণমূলকে রাজনৈতিকভাবে অপদস্থ করতে না পেরে ঘৃণ্য নীচতার রাজনীতি করেছে বাংলার গদ্দার-সহ বিজেপি নেতারা। মোদি-শাহর স্পষ্ট নির্দেশে।