প্রতিবেদন : নিজের গোটা রাজ্যনৈতিক-প্রশাসনিক জীবনে মনমোহন সিং (Manmohan Singh) ছিলেন আদ্যন্ত ‘মিস্টার ক্লিন’। ব্যক্তিগত সততা ছিল প্রশ্নাতীত। যদিও তাঁর জমানাতেই একাধিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে জর্জরিত হতে হয় কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারকে। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদের আক্রমণের তিরে বিদ্ধ হতে হয়েছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকেই। ব্যক্তিগতভাবে সৎ ও মৃদুভাষী পূর্বসূরিকে সবচেয়ে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন ৭ নম্বর রেসকোর্স রোডে তাঁরই উত্তরসূরি নরেন্দ্র মোদি। রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর বিতর্কের জবাব দিতে গিয়ে পূর্বসূরিকে নিশানা করে মোদি বলেছিলেন, ডক্টর সাহেবের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এত কেলেঙ্কারির একটি দাগও তাঁর গায়ে লাগেনি। বর্ষাতি পরে কী করে স্নান করতে হয়, তা তিনি জানেন!
আরও পড়ুন-কলকাতায় তৈরি হবে বিগ বাজার ও লেদার হাব, উদ্যোগী রাজ্য সরকার
তবে রাজধানীর রাজনৈতিক মহল সাক্ষী এর চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ এক ঘটনার। আপাদমস্তক ভদ্র, শান্ত, উচ্চমেধার রাজনীতিক মনমোহনকে কীভাবে অপমানিত হতে হয়েছিল তাঁর নিজের দলেই, সেই ঘটনা আজও অনেকের স্মৃতিতে টাটকা। অনেকেই বলেন, বিজেপি বা অন্যান্য বিরোধী দল নয়, মনমোহনকে সবচেয়ে বড় হেনস্থা করেছে তাঁর দল কংগ্রেসই। ২০১৩ সালে মনমোহন সিংকে সেই হেনস্থা প্রকাশ্যে করেছিলেন আজকের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনামাফিক কংগ্রেসের সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল বলেছিলেন, সাজাপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিদের আইনসভার পদে রাখার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে, সেটা একটা ফালতু কাগজের টুকরো। এক্ষুনি ওটা ছিঁড়ে ফেলা উচিত। নিজের প্রতিবাদী ভাবমূর্তি তৈরি করতে এবং মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকারকে হেয় করতে সর্বসমক্ষে অর্ডিন্যান্সের কাগজ ছিঁড়েও ফেলেন রাহুল। সেসময় কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন। আর ঘটনাচক্রে তিনি ছিলেন বিদেশসফরে। সেদিন রাহুল গান্ধী নিজের দলের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ন্যূনতম শিষ্টাচার দেখাননি। অথচ স্বভাবসিদ্ধ শিষ্টাচারের দৃষ্টান্ত রেখে রাহুলের মন্তব্যের প্রত্যুত্তর দেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। বিরোধীদের ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখেও আগাগোড়া বিরল শিষ্টাচার অক্ষুণ্ণ রেখে গিয়েছেন ভারতের আধুনিক উদার অর্থনীতির জনক।