ভারতের অঙ্গ, তবু সেখানকার স্বাধীনতা দিবস নয় ১৫ অগাস্ট। দেশের স্বাধীনতার ১৪ বছর পর স্বাধীনতা পেয়েছিল এখানকার মানুষ। হ্যাঁ, অবাক মনে হলেও এটাই বাস্তব। সেই রাজ্যের নাম গোয়া।
তাও ইংরেজদের থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য লড়তে হয়নি। লড়তে হয়েছিল পর্তুগিজ শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। ভারতীয় সেনা রীতিমত জয়েন্ট অপারেশন চালিয়ে গোয়াকে পর্তুগিজ শাসন থেকে মুক্ত করে।
আসলে পর্তুগিজ সরকারকে বারবার বললেও গোয়া ছাড়তে চাইছিল না তারা। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাকে রণে নামতেই হয়। ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৬১ সাল। গোয়া, দমন ও দিউয়ে ঢুকে পড়ে ভারতীয় সেনা। নাগাড়ে আক্রমন চালায় ভারত। সামলাতে পারেনি পর্তুগিজ সেনা। ৪০ ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। ১৯ ডিসেম্বর হার স্বীকার করে নেয় পর্তুগিজ বাহিনী। ওইদিন গোয়া সাড়ে ৪৫০ বছর পর বিদেশি শাসন মুক্ত হয়।
আরও একটু পিছনে যাওয়া যাক। গোয়ায় পর্তুগীজ শাসনের শুরুটা হয়েছিল বহু আগে। সে ১৫১০ সালের কথা। ওই বছর মার্চ মাসে পর্তুগীজ আলফান্সো দ্যা আলবুকর্ক গোয়া দখল করে নেন। কার্যত ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছিলেন তিনি, কারন ওই আক্রমণকে রোখার মত কেউ ছিল না। এরপর ভারতীয় রাজা ইউসুফ আদিল খাঁ গোয়া আক্রমণ করেন। পর্তুগীজদের তাড়ান। সাময়িকভাবে সেখান থেকে পর্তুগীজরা গেলেও আলবুকর্ক আরও সৈন্যবহর নিয়ে এসে ফের হামলা চালান। গোয়া হাতছাড়া হয় ভারতের।
এরপর ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংরেজরা ভারতে পুরো দখল নেওয়ার পরে গোয়ায় স্বাভাবিকভাবেই পর্তুগীজ আধিপত্য কমে যায়। ১৯৪৭ সালে ইংরেজ বিদায় নিতেই ফের তারা জাঁকিয়ে বসে সেখানে। ভারতের গোয়া ছাড়ার আবেদনে কোনও পাত্তাই দিত না তারা। শেষ পর্যন্ত জলে, স্থলে , অন্তরীক্ষে হামলার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।
গোয়ায় আকাশপথে হামলা নেতৃত্বে ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল এরলিক পিন্টো। সঙ্গে স্থল ও নৌসেনাও ঘিরে ফেলে গোয়া। যুদ্ধ হয়। তবে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি ভারতকে। দ্রুতই নিজেদের হার নিশ্চিত বুঝে ১৯৬১’র ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন পর্তুগীজ গভর্নর ম্যানু বাসেলো ডি সিলভা ভারতের সামনে সমর্পণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। গোয়া ফিরে পায় ভারত। ৩০ মে, ১৯৮৭ সালে গোয়াকে পূর্ণ রাজ্যের তকমা দেওয়া হয়, লাগু হয় ভারতীয় সংবিধান।