(গতকালের পর)
বিজেপি নেতারা আশা বা দুরাশা পোষণ করেছিলেন, যদি সংখ্যালঘু ভোটের সামান্য কিছু অংশ কংগ্রেস-বাম জোটের পক্ষে চলে যায়, তাহলে ফলাফলে অনেক চমক সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু তাঁদের সেই প্রত্যাশা দিবাস্বপ্নই রয়ে গেল। রাজ্য বিজেপির সংগঠন কোথায়? তাঁরা কোর্টে ছােটেন, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার করেন এবং টিভি চ্যানেলে গলা ফাটান। দুই-তৃতীয়ংশ বুথে দলটির কোনও কর্মী নেই, যাঁরা দলীয় পতাকা হাতে নেবেন। ভুল, বিকৃত তথ্য দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতৃত্বের উপর অসন্তুষ্ট শোনা যায়। তৃণমূল কংগ্রেস থেকে যাঁরা বিজেপিতে এসেছেন, তাঁদের সংগঠনই বিজেপির সংগঠন। এ ছাড়া যেখানে আরএসএস-এর স্থানীয় প্রভাব রয়েছে সেখানে বিজেপি-র কিছু সংগঠনিক প্রভাব রয়েছে। এই অতি-সীমিত ও নড়বড়ে সংগঠন নিয়ে কি ভোট-বৈতরণী পার হওয়া যায়?
আরও পড়ুন-তৃণমূল ভবনে উপনির্বাচনের তিন প্রার্থী, নিলেন প্রতীক
কংগ্রেস-বাম জোটের নির্বাচনী ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার, বোঝাই যাচ্ছিল। প্রকৃত কংগ্রেসি এবং প্রকৃত বামপন্থী মনোভাবাসম্পন্ন কেউই এই জোট মেনে নিতে পারেননি। তাই প্রথম থেকেই এই জোট নির্বাচনী রাজনীতিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পরাজয় প্রত্যাশিত ছিল। তিনি বরিষ্ঠ সাংসদ ছিলেন এবং বহরমপুরে তাঁর সমাজসেবামূলক অনেক কাজ রয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে তিনি যেভাবে এবং যে ভাষায় প্রতিদিন মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করছিলেন, বোঝা যাচ্ছিল না, তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কে— বিজেপি না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? মানুষ এটা ভালভাবে নেননি। ইউসুফ পাঠানের পরিবর্তে অন্য কেউ দাঁড়ালেও এবার অধীরবাবু হারতেন। এ-ছাড়া বহরমপুরের আনাচে-কানাচে কান পাতলে শোনা যায়, নির্বাচনের সময় আরএসএস-এর একটি অংশের অধীরবাবুর পিছনে প্রচ্ছন্ন মদত থাকে (সংবাদের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি)। মনে রাখতে হবে সুব্রত মুখার্জি এবং সোমেন মিত্র ছাড়া অধীরবাবুর পক্ষে কংগ্রেস রাজনীতিতে পা রাখা সম্ভব ছিল না। সময়টা ঠিক মনে নেই। মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন অধীরবাবুকে জেলা থেকে বহিষ্কার করেছিল। সুব্রতদা এবং সোমেনবাবু অধীরবাবুকে সঙ্গে নিয়ে বহরমপুরে আসেন। জেলা শাসকের বাংলো এবং সারকিট হাউসের উলটোদিকের মাঠে বিশাল জনসভায় সুব্রতাদা হুমকি দিয়ে বলেন— ডিএম, এসপি-র হিম্মত থাকে তো অধীরকে গ্রেফতার করুন। মনে পড়ছে, সুব্রতদা সুরেন ঠাকুর রোডের বাসা থেকে যখন বের হচ্ছেন, আমি সঙ্গে ছিলাম। সোমেনবাবু গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। গাড়ির মধ্যে অধীরবাবু বসেছিলেন। সুব্রতদা গাড়িতে উঠবার আগে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন— ‘বহরমপুরে যাচ্ছি। একটা হেস্তনেস্ত করে ফিরব।’
আরও পড়ুন-মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর বাংলোর কাছে সরকারি ভবনে আগুন
অধীরবাবু, মনে পড়ে সে-দিনের কথা?
আজ কিনা সিপিএম-কে তোয়াজ করবার জন্য মমতাকে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ করলেন। ফল তো পেলেন। আর, সিপিএম-কে রাজনৈতিকভাবে বিশ্বাস করা যায় না। কমিউনিস্টদের ইতিহাস হল বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস।
বিজেপির মধ্যে তাত্ত্বিকদের সঙ্গে ভুঁইফোঁড়দের আকচা-আকচি অব্যাহত। মাঝে মাঝেই তার ভরবেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবমিলিয়ে সংগঠনহীন দিশাহারা অবস্থা। এই অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করার সামর্থ্য নেই, তারা করতে পারেও নি। কেবল সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলে মাঝেমধ্যে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির মরিয়া প্রয়াস অব্যাহত। বাংলার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এদের ওপর আস্থা রাখবেন কোন যুক্তিতে? এবারে তো রাখেননি, আগামীতেও রাখবেন না। জয়তু মা-মাটি-মানুষ। জয়তু জননেত্রী।
(শেষ)