প্রতিবেদন : কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা অব্যাহত। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ মিলছে না। কিন্তু অব্যাহত রাখতে হবে উন্নয়নের কাজ। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পর নিজ উদ্যোগে গ্রামীণ সড়ক সংস্কারে উদ্যোগী হল নবান্ন। জাতীয় কৃষি এবং গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক নাবার্ড (NABARD) এর আর্থিক সহায়তায় রাজ্য সরকার চলতি আর্থিক বছরে ১১৪০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য খরচ হবে প্রায় ১০৩৪ কোটি টাকা। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর জাতীয় গ্রামোন্নয়ন তহবিলের মাধ্যমে এই রাস্তা তৈরির কাজ করবে। এই প্রকল্পের জন্য নাবার্ডের সঙ্গেও ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের আলোচনা হয়েছে। নাবার্ড সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে আরআইডিএফ খাতে রাজ্যকে এই টাকা দেবে। এই প্রকল্পের কাজের বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। রাজ্যের সব জেলাতেই গ্রামীণ সড়ক তৈরির কাজ হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। ২০১১ সাল থেকে এ-পর্যন্ত রাজ্যে সাকুল্যে এক লক্ষ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা তৈরি হয়েছে। যা বাম আমলের মোট পরিমাণের তিন গুণ। বিগত অর্থবর্ষে গ্রামীণ সড়ক যোজনায় এখনও পর্যন্ত ৩৬ হাজার ২৫৯ কিলোমিটার সম্পূর্ণ নতুন রাস্তা তৈরি ইতিমধ্যে সার্বিক গ্রামীণ উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প নিয়েছে রাজ্য। এই বছরের শুরুতেই গ্রামীণ উন্নয়নের কাজের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে ১১৪০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের কাজ। এতে বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের দাবি পূরণ হতে চলেছে বলেই পঞ্চায়েত দপ্তরের আধিকারিকদের মত।
সূত্রের খবর, বর্তমানে পূর্তমন্ত্রী পুলক রায় পঞ্চায়েত মন্ত্রী থাকাকালীনই এই প্রকল্প সংক্রান্ত ফাইলে স্বাক্ষর করে এসেছেন। এই প্রকল্পের কাজের ডিপিআর তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। কম-বেশি সব জেলাতেই কিছু কিছু করে এই কাজ করা হবে বলে জানা গিয়েছে দপ্তর সূত্রে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের সহায়তায় নেওয়া গ্রামীণ সড়ক প্রকল্পের নাম নিয়ে জটিলতার জেরে এই খাতে বাংলাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করেছে মোদি সরকার। এই নিয়ে চড়ছে রাজনৈতিক পারদ। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত মেলেনি এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের প্রদেয় অর্থ। সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিকল্প উপায় খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন রাজ্য প্রশাসনকে। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা বরাদ্দ বন্ধ করে দিলেও উন্নয়ন যে থমকে থাকবে না সে-বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দেন। আবার কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রকের পরিদর্শনকারী দল বিভিন্ন জেলাতেও পরিদর্শন শুরু করেছে ১০০ দিনের কাজ গ্রামীণ সড়ক যোজনার প্রকল্প সঠিকভাবে রাজ্যে কার্যকরী হচ্ছে নাকি তা দেখার জন্য। সেই সময়ই রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের তরফে এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। নবান্ন সূত্রে খবর, পুজোর আগেই গ্রামীণ রাস্তাগুলির নির্মাণ ও সংস্কার যে অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ছিল তা নিয়ে একমত ছিল নবান্নের শীর্ষ মহল। তার জন্যই এই বিপুল পরিমাণ টাকার জোগান কী হবে তা পেতে চাইছিল নবান্ন। সূত্রের খবর ইতিমধ্যেই নাবার্ড (NABARD) এই ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে মৌখিকভাবে সম্মতিও দিয়েছে রাজ্যকে। সেক্ষেত্রে এই অনুদান পেয়ে গেলেই পুজোর আগেই গ্রামীণ রাস্তাগুলি সংস্কার ও নির্মাণের কাজ রাজ্যে শেষ করে দিতে চাইছে রাজ্য তার ইঙ্গিত মিলেছে বলেই সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: সম্পত্তি বৃদ্ধির তালিকায় থাকা বিরোধীদের নাম প্রকাশ্যে আনল তৃণমূল কংগ্রেস
ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আসন সংরক্ষণ-সহ একাধিক পদক্ষেপের জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর কয়েক দফার নির্দেশও দিয়েছে জেলাগুলিকে। সেক্ষেত্রে আগামী বছরের গোড়াতেই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করছে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহল।