বড়দিনের ৩ বড় ছবি

বড়দিনের উৎসবের আবহে গতকাল মুক্তি পেল তিনটে ছবি। পরিচালক অভিজিৎ সেনের 'প্রজাপতি ২', পরিচালক অরিন্দম শীলের 'মিতিন একটি খুনির সন্ধানে' এবং পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'লহ গৌরাঙ্গের নাম রে'। তিনটি ছবিই সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের তিন বিষয়কে তুলে ধরল। কেমন হল তিন ছবি? কে টানল দর্শক? লিখলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী এবং ­জিনা বন্দ্যোপাধ্যায়

Must read

বড়দিনে মিতিনের দুর্দান্ত অভিযান
বড়দিনের কনকনে ঠান্ডায় মুক্তি পেল পরিচালক অরিন্দম শীলের জমজমাট থ্রিলার ‘মিতিন একটি খুনির সন্ধানে’। এক সরগরম খুনের কিনারা করতে আবার শহরে হাজির হলেন মিতিন মাসি। ফেলুদা, ব্যোমকেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মিতিন মাসি এবার একনম্বরে। আট থেকে আশি সবাই মিতিনকে দেখতে হলের বাইরে। শীত ছুটির আমেজে সবাই মিলে দেখার ছবি। লম্বা লাইন টিকিটের। এই ছবি অরিন্দম শীলের মিতিন মাসি সিরিজের তৃতীয় ফ্রাঞ্চাইজি। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের সৃষ্টি গোয়েন্দা মিতিন অর্থাৎ প্রজ্ঞাপারমিতা মুখোপাধ্যায় চরিত্রটি পাঠকদের দারুণ পছন্দের আর সেই চরিত্রে কোয়েল মল্লিকও ঠিক ততটাই জনপ্রিয়। এবারে মিতিন করবে ব্যবসায়ী পিনাকী বাসুর খুনের অনুসন্ধান। ছবিতে মারকাটারি অ্যাকশন করেছেন কোয়েল মল্লিক। চোখ ফেরানো দায়। গোটা গল্পে গানের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। পরতে পরতে রয়েছে চমক। রুদ্ধশ্বাস তদন্ত। টুইস্ট ধরাই যাবে না। অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর করেছেন রথীজিৎ ভট্টাচার্য। কোয়েল ছাড়া এই ছবিতে রয়েছেন রোশনী ভট্টাচার্য, লেখা চট্টোপাধ্যায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহেব চট্টোপাধ্যায়,
গৌরব চক্রবর্তী, দুলাল লাহিড়ী প্রমুখ। ছবির সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রযোজনায় সুরিন্দর ফিল্মস প্রাইভেট লিমিটেড।

আরও পড়ুন-বড়দিনকে কেন্দ্র করে বিজেপি রাজ্যগুলিতে গুন্ডামি-ভাঙচুর-অসভ্যতা, এখানে উৎসব, ওখানে হামলা

বাবা-সন্তানের গল্পে মধ্যবিত্তের
চেনা আবেগেই ভরসা ‘প্রজাপতি ২’
বাঙালির চিরাচরিত মধ্যবিত্ত আবেগে শান দিল অতনু রায়চৌধুরী নিবেদিত অভিজিৎ সেন পরিচালিত ‘প্রজাপতি ২’। টিজার থেকে ট্রেলারে সিঙ্গেল ফাদারের গল্প আর মধ্যবিত্ত মূল্যবোধের টানাপোড়েন ধরা পড়েছিল। গোটা সিনেমা জুড়েই সেই অনুভূতির ছোঁয়া। সেরা প্রাপ্তি শিশুশিল্পী অনুমেঘা। সিনেমা জুড়ে তার মিষ্টি অভিব্যক্তি আর অভিনয় মন ছুঁয়ে যায়। কাঙ্ক্ষিত ক্লাইম্যাক্স না হলেও স্পষ্ট বোঝা গেল সাংসদ-অভিনেতা আর এই ছবির সিক্যুয়েল বানাতে চান না।
দেব, মিঠুন চক্রবর্তী, শকুন্তলা বড়ুয়া, ইধিকা পাল, জ্যোতির্ময়ী কুণ্ডু, অনুমেঘা কাহালি, অপরাজিতা আঢ্য, খরাজ মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক অভিনীত ‘প্রজাপতি ২’ কিন্তু আগের গল্পের (প্রজাপতি) সিক্যুয়েল নয়। মা-হারা ছোট মেয়েকে নিয়ে প্রবাসী বাবার জীবন যাপনের মুহূর্তের সঙ্গেই ধরা পড়েছে শহর কলকাতায় পড়ে থাকা মধ্যবিত্ত বৃদ্ধের ছেলের জন্য বাড়তে থাকা চিন্তার ছবি। চক্রবর্তী বাড়ির বর্ষীয়ান কর্তা বিদেশে থাকা ছেলেকে যতটা ভালবাসেন, মেয়েকে নিয়েও তাঁর সেই একই আবেগ কাজ করে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেল। এই সিনেমায় প্রত্যেকটা চরিত্রকে নিজের নিজের জায়গা থেকে সঠিক মনে হলেও পরিস্থিতির নিরিখে তাঁদের ভাবনাগুলো কোথাও যেন সময়ের সঙ্গে টাল খেতে থাকে। কখনওবা তাল কাটে চিরাচরিত মানসিকতার চলনে। প্রথম স্ত্রীর (ইধিকা) মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে জয় চক্রবর্তী (দেব) বাকি জীবন কাটাতে চান, কিন্তু কলকাতায় তাঁর বাবা-মার দুশ্চিন্তা কমে না। ছেলে তবু দ্বিতীয়বার বিয়েতে নারাজ। অগত্যা বাবা (মিঠুন চক্রবর্তী) হাজির হন বিদেশে, ছেলের কাছে। নাতনির সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন বৌমা আনতে বদ্ধপরিকর তিনি। হাসি-মজার মাঝে আচমকাই বদলে যায় পরিস্থিতি। শাকিবুলের (অনির্বাণ চক্রবর্তী) কলকাঠিতে চাকরি হারায় জয়। তারপর… বাবা-ছেলে একসঙ্গে শুরু করেন স্বপ্ন ছোঁয়ার লড়াই। যদিও তার জন্য খুব একটা বেশি স্ক্রিনটাইম নেই। তবে লন্ডনের গল্প যে কলকাতাতে সমাপ্ত হবে তা বেশ বোঝা যায়। বাবা-সন্তানের ভালবাসার কাহিনি তুলে ধরতে চেয়েছিল ‘প্রজাপতি ২’। তাই হয়তো নামের সঙ্গে মিলিয়ে কাঙ্ক্ষিত ক্লাইম্যাক্সের পথে না হেঁটে পরিবারের শিকড়কে আঁকড়ে ধরার কথা বলতে চেয়েছেন অভিজিৎ। জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মিউজিক মোটামুটি। নচিকেতার গান মনে ধরে। কয়েকটি দৃশ্যে দেখা যায় সাংসদ-অভিনেতা পার্থ ভৌমিক ও পরান বন্দ্যোপাধ্যায়কে। খরাজ, অনির্বাণ স্বল্প পরিসরে যথাযথ। মধ্যবিত্তের চেনা পারিবারিক আবেগ আর মূল্যবোধে অনুভূতিপ্রবণ হওয়া ছাড়া এ ছবিতে আর বিশেষ কোনও প্রাপ্তি নেই।

আরও পড়ুন- যোগীরাজ্যে হাঁটতে বেরিয়ে খুন আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

লহ গৌরাঙ্গের নাম রে
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বহুচর্চিত ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ও গতকাল বড়দিনেই মুক্তি পেল। এই ছবির জন্য বহুদিন ধরেই কৌতূহল জমেছিল দর্শক মহলে। তবে এই ছবি সবধরনের দর্শকদের জন্য নয়। পিরিয়ডিক ড্রামা দর্শক আলাদা। প্রেক্ষাগৃহের সামনে দাঁড়ালেই বোঝা গেল। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন অবলম্বনে তৈরি এই ছবিতে একসঙ্গে তিনটে সময়কালকে তুলে ধরেছেন পরিচালক।
এখনকার সময় থেকে শুরু করে উনিশ শতকের সময়কালও উঠে এসেছে। এই পর্বগুলো সম্পর্কে একটু জানা থাকলে বুঝতে আরও সুবিধে হবে। মহাপ্রভুর অন্তর্ধান রহস্য উসকে দেবে এই ছবি। রামকৃষ্ণ পরমহংস, নিত্যানন্দ মহাপ্রভু, নটি বিনোদিনী, বিষ্ণুপ্রিয়া, নাট্যাচার্য গিরিশ ঘোষ— কে নেই এই ছবিতে? সেই সঙ্গে রয়েছে এই সময়ের চরিত্রেরাও। ছবিতে অভিনয় রয়েছেন অভিনেতা, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, ইশা সাহা, পার্ণো মিত্র, দিব্যজ্যোতি দত্ত, আরাত্রিকা মাইতি প্রমুখ। আশা করি দর্শক সেটাই উপভোগ করবেন।

Latest article