মণীশ কীর্তনিয়া, দিঘা: দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণশৈলী থেকে পুজো, সাজসজ্জা থেকে প্রভুর ভোগ— সবকিছুই হচ্ছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে। মন্দিরের প্রবেশপথেই রয়েছে তিনটি চোখজুড়ানো দীপস্তম্ভ। পুরীর মতো এই মন্দিরেও রয়েছে চারটি দুয়ার। পুরো মন্দিরটি তৈরি হয়েছে রাজস্থানের গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে। রাজস্থানের বাসিন্দা অন্তত ৮০০ জন কারিগর দিনরাত এক করে এই মন্দির গড়ে তুলেছেন। পুরীর মতোই দিঘার এই মন্দিরও কলিঙ্গ স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হতে চলেছে। মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলেই প্রথমে চোখে পড়বে তিনটি দীপস্তম্ভ। যা মন্দিরের স্থাপত্যে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে।
আরও পড়ুন-হাজার বছর ধরে বাংলার স্থাপত্যের নিদর্শন হয়ে থাকবে দিঘার এই মন্দির
পুরীর মতো দিঘার মূল মন্দিরে প্রবেশের জন্যও রয়েছে চারটি দ্বার। মন্দিরের সিংহদ্বারের সামনে রয়েছে কালো রঙের অরুণ স্তম্ভ। কালো পাথরে দিয়ে ৩৪ ফুট লম্বা আঠারোমুখী এই অরুণ স্তম্ভটি তৈরি করা হয়েছে। স্তম্ভের মাথায় অরুণা মূর্তি। অরুণ স্তম্ভের সামনের সিংহদ্বারে ঢুকলেই পুরীর মতোই সোজাসুজি জগন্নাথদেবের মূর্তি দেখতে পাওয়া যাবে। পূর্ব দিকের মন্দিরের সিংহদ্বারের বিপরীতে রয়েছে ব্যাঘ্রদ্বার, উত্তরে হস্তিদ্বার ও দক্ষিণে অশ্বদ্বার। মন্দিরের প্রথমে রয়েছে ভোগ মণ্ডপ। তার চারটি দরজা। এ ছাড়াও রয়েছে নাটমন্দির, যা ১৬টি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। নাটমন্দিরের দেওয়ালে রয়েছে কালো পাথরে তৈরি ছোট ছোট দশাবতারের মূর্তি। নাটমন্দিরের পর চারটি স্তম্ভের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে জগমোহন। জগমোহনের পরেই দেখা যাবে গর্ভগৃহ বা মূল মন্দির। সেখানেই সিংহাসনে বিরাজ করছেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। ভোগমণ্ডপ ও নাটমন্দিরের মধ্যে রয়েছে গরুড়স্তম্ভ। পুরীর মতো এখানেও রয়েছে লক্ষ্মীমন্দির।
আরও পড়ুন-পাকিস্তানে শান্তি কমিটির সভায় বিস্ফোরণে মৃত ৭, আহত বহু
প্রভু জগন্নাথের ভোগ রান্নার জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। তা হল ভোগশালা। তবে পুরীর ভোগশালার মতো এখানে ঝরনা বা গঙ্গাজল পাওয়ার সুযোগ না থাকায় ভোগ রান্নার জন্য বিকল্প জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দিঘার মন্দিরের জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার যে মূর্তিতে পুজো হবে তা নিমকাঠের তৈরি। শাস্ত্রীয় আচার মেনে আগামী ৩০ এপ্রিল বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হবে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চুড়োয় রয়েছে ধ্বজা। যা প্রতিদিন বদলানো হয়। সেই নিয়ম মেনে দিঘার মন্দিরের চুড়োতেও থাকছে ধ্বজা। যা প্রতিদিন নিয়ম মেনে পরিবর্তন করা হবে। এই কাজ করার জন্য পুরী থেকে দক্ষ লোকজনকে আনা হয়েছে।