ভরা আষাঢ়। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। ভিতরে হইহই করে চলছে বইমেলা। কোথায়? খোদ কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ায়। কফিহাউসের তিনতলায়। একটি আলো ঝলমলে ঘরে। বাংলা বইয়ের প্রচারে এ এক অভিনব উদ্যোগ। বছরভর বাংলায় নানা বইমেলা হয়। তবে কোনও নির্দিষ্ট থিমের উপর বইমেলা সম্ভবত এই প্রথম। ‘বরষার বই-তরণী’ শীর্ষক ছিমছাম ইন্ডোর বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে শুধুই থ্রিলার।
আরও পড়ুন-নাবালিকাকে উদ্ধার করল পুলিশ
বিভিন্ন বয়সের উৎসাহী পাঠকের ভিড়। প্রবীণ এবং নবীন লেখকদের বই দেখছেন। পছন্দ করছেন। কিনছেন। সুসজ্জিত তাকে সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা যেমন আছে, তেমনই আছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু, সমরেশ বসুর গোগোল। বুদ্ধদেব গুহর ঋজুদা যেমন আছে, তেমনই আছে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ভাদুড়ি, সুচিত্রা ভট্টাচার্যর মিতিনমাসি। ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের জগুমামা যেমন আছে, তেমনই আছে অভিজ্ঞান রায়চৌধুরীর অনিলিখা। বইগুলোর চাহিদা দারুণ। এছাড়াও নারায়ণ সান্যাল, প্রফুল্ল রায়, অদ্রীশ বর্ধন, অনীশ দেব, ইন্দ্রনীল সান্যাল, বিনতা রায়চৌধুরী, স্মরণজিৎ চক্রবর্তী, জয়ন্ত দে, দীপান্বিতা রায়, সৈকত মুখোপাধ্যায়, দেবারতি মুখোপাধ্যায়, অর্পিতা সরকার প্রমুখের বই সংগ্রহ করছেন অনেকেই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক-সাংবাদিক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সরকার এবং গিল্ডের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় বইমেলা হয়। বইমেলা হয় শহরে এবং জেলায় জেলায়। প্রবল করোনার পরে বইমেলা সম্ভব হচ্ছিল না। তখন আমরা উত্তর কলকাতার হৃষীকেশ পার্কে বইমেলার আয়োজন করেছি। কলেজ স্ট্রিট পাড়া উজাড় করে সমর্থন দিয়েছে। বইমেলা সফল হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘একটা ইন্ডোর বইমেলা করার পরিকল্পনা আমাদের ছিল। সেটা থিমেটিক বইমেলা। নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে। সেটা আজ বাস্তবায়িত হল। এরপরে বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের বইমেলা আয়োজিত হবে। বহু ক্লাব-সংগঠন আগ্রহী। শিশুসাহিত্যের উপর একটি বইমেলা করার পরিকল্পনা আছে।’’ তাঁর ‘উপন্যাস সমগ্র’, ‘বাঘবিধবা’, ‘সংকেত’, ‘বাছাই বিশ’ ঘরোয়া বইমেলায় অনেকের হাতে হাতেই ঘুরছে। লেখকের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা গেছে উৎসাহী পাঠকদের।
জনপ্রিয় দুই গোয়েন্দা ফেলুদা, ব্যোমকেশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও তাঁকে দেখা গেছে সোনাদা এবং দীপক চ্যাটার্জির চরিত্রে। পুলিশ অফিসারের চরিত্রও ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথায় কথায় জানালেন, ‘‘আমরা বাঙালিরা গোয়েন্দা গল্প পড়তে ভালবাসি। এইরকম আয়োজন পাড়ায় পাড়ায় হলে, আমার ধারণা ভাল সাড়া পাওয়া যাবে। যাঁরা বইপাড়ায়, কফিহাউসে আসেন, তাঁরা এই বইমেলা ঘুরে যেতে পারেন।’’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে ‘থ্রিলার কেন ডাকে?’ শীর্ষক আড্ডা-চক্র মাতিয়ে তোলেন গৌরব চক্রবর্তী, দীপান্বিতা রায়, দেবারতি মুখোপাধ্যায়, সঞ্জয় ভদ্র, রাজর্ষি গুপ্ত। দর্শক শ্রোতার উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো।
আরও পড়ুন-টেক্সাসে হড়পা বান, ভাসিয়ে নিয়ে গেল সামার ক্যাম্পের অন্তত ২০ জন ছাত্রীকে
প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও উপচে পড়েছে ভিড়। রহস্য-রোমাঞ্চ, গোয়েন্দা গল্প-উপন্যাস সংগ্রহ করেছেন বহু পাঠক। ‘আড্ডা-চক্র : থ্রিলার কেন ডাকে?’ মাতিয়ে তোলেন দেবাশিস দত্ত, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, অর্পিতা সরকার, প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত। ছিলেন প্রকাশক শঙ্কর মণ্ডল ও চলচ্চিত্র পরিচালক অরিন্দম শীল। সবমিলিয়ে জমে উঠেছে মেলা। সমস্ত বইয়ে রয়েছে ২৫ শতাংশ ছাড়। সঙ্গে ফ্রি বুকমার্ক। অংশ নিচ্ছে আনন্দ পাবলিশার্স, দে’জ পাবলিশিং, পত্রভারতী, দীপ প্রকাশন, অভিযান পাবলিশার্স, বুকফার্ম, নিউ ভারত সাহিত্য কুটির, অরণ্যমন প্রকাশনী, শব্দ প্রকাশন, বুকলুক পাবলিশিং, বেঙ্গল ট্রয়কা পাবলিকেশন, সিসৃক্ষা, জে এন চক্রবর্তী অ্যান্ড কোং, মহুয়া পাবলিশার্স, সঞ্জীব প্রকাশন, কিশলয় প্রকাশন, বসাক বুক স্টোর, পতিতপাবন পাবলিশার্স, সেন ব্রাদার্স, শপিজেন বাংলা, স্মেল অফ বুকস, ভবিষ্যৎ প্রকাশন, পত্রপাঠ প্রকাশন, প্রজ্ঞা পাবলিকেশন।
আজ রবিবার। সংবাদ প্রতিদিন এবং দীপ প্রকাশন আয়োজিত তিনদিনের বইমেলার শেষ দিন। খোলা থাকছে দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। হোক বৃষ্টি। ঝরুক জল। পাঠকের উৎসাহে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়বে না।