লখিমপুর খেরি : চারজনকে পিষে মারার পরেও একজনও গ্রেফতার হল না লখিমপুর খেরির ঘটনায়৷ দেশজুড়ে নিন্দা৷ দেশজুড়ে প্রতিবাদ৷ কিন্তু নিশ্চল পাথরের মতো আচরণ করছে যোগী সরকার৷ পুলিশ দিয়ে, প্রশাসনের হুমকিকে হাতিয়ার করে ৪৮ ঘণ্টা ধরে চলছে ‘সরকারি অপারেশন’৷ সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, ঘটনা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি দেশের প্রধানমন্ত্রী৷ লখিমপুরের কাছেই তিনি মঙ্গলবার গিয়েছিলেন সড়ক যোজনার অনুষ্ঠানে৷ কৃষক হত্যার কথা ছিল না তাঁর মুখে৷
আরও পড়ুন : ঘাটালে মৃত শিশুর পরিবারের হাতে ২ লাখ টাকার চেক তুলে দিলেন দেব
সোমবার রাতে লখিমপুর খেরিতে পৌঁছেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল৷ মঙ্গলবার সকালে মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে শোকার্তদের বাড়িতে যান৷ যাওয়ার পথে বারবার বাধা৷ তবে সে বাধা অতিক্রম করেই কাকলি ঘোষদস্তিদার, সুস্মিতা দেব, দোলা সেন, প্রতিমা মণ্ডল এবং আবিররঞ্জন বিশ্বাস পৌঁছন ভগবন্তপুর ও দারহায়৷ প্রতিনিধি দলের স্পষ্ট বক্তব্য, মানুষ ফুঁসছেন৷ খুনের বদলা তাঁরা ব্যালটে দিতে প্রস্তুত৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তা ঠারে ঠারে বুঝিয়ে দিতে তৈরি৷ খুনিদের আড়াল করার কারণে মানুষের আস্থাই চলে গিয়েছে সরকারের উপর থেকে৷ আর সরকার চাইছে, টাকা দিয়ে নিহতদের পরিবারের মুখ বন্ধ করতে রাখতে৷
মঙ্গলবার লখিমপুর ঘটনার নতুন ট্যুইস্ট নিশ্চিতভাবে দুটি ভিডিও৷ দশ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রর গুণধর ছেলে আশিস গাড়ি চালিয়ে দিয়েছে কৃষকদের জমায়েতের মধ্যে৷ অন্যদিকে, আর একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ঘটনার পর কৃষকরা আশিসকে ধাওয়া করতেই গাড়ি ফেলে দৌড় দেয় খুনির দল৷ মজার ব্যাপার হল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলছেন, তাঁর ছেলে নাকি ঘটনাস্থলে ছিলই না৷ মন্ত্রীর এই দাবিকে চরম স্বৈরাচারী মনে করছে রাজনৈতিকমহল৷ কী করে আশিস মিশ্র এখনও দিনের আলোয় ঘুরে বেড়ায় সেটাই সকলের প্রশ্ন৷ বিরোধীরা বলছেন, উত্তরপ্রদেশে আসলে জঙ্গলরাজ চলছে৷ সন্ন্যাসীর বেশে খুনির হাতেই এখন দেশের বৃহত্তম রাজ্যের শাসনভার, বলছেন সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব৷
রবিবারের ঘটনায় আটজনের মৃত্যু হয়৷ একজনও গ্রেফতার না হওয়ার মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে৷ শিবকুমার ত্রিপাঠী ও সি এস পাণ্ড নামে দুই আইনজীবীর দাবি, শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে হোক সিবিআই তদন্ত৷ এদিনই গ্রেফতার করা হয়েছে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কাকে৷ লখনউ বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয় ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে৷ প্রতিবাদে তিনি বিমানবন্দরেই ধরনায় বসেন৷
মঙ্গলবার মৃতদের দেহ নিয়ে বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে পড়ে৷ ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৯ বছরের যুবক লাভপ্রীত সিংয়ের৷ পরিবার সাফ জানায়, যতক্ষণ না ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসবে তাঁরা দেহ সৎকার করবেন না৷ এই আওয়াজ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে৷ লখিমপুরের ঘটনা নিয়ে শিবসেনা মুখপত্র ‘সামনা’ও একহাত নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে৷ দেশে এতবড় একটা হত্যাকাণ্ড হওয়ার পরেও কী করে তিনি মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন সে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে৷ সব মিলিয়ে লখিমপুর ঘটনায় ‘ভীষণ’ বেকায়দায় বিজেপি৷