অসীম চট্টোপাধ্যায়, দুর্গাপুর : ১৯৯৮ সালের ১২ ডিসেম্বরের হিমপড়া রাতে সিপিএমের ঘাতক বাহিনী কাঁকসার বিদবিহার পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুর গ্রামে চালায় নারকীয় সন্ত্রাস। ২৩ বছর আগের সেই ঘটনা মনে পড়লে এখনও আতঙ্কে চোখ বোজেন গ্রামের মানুষ। শুধুমাত্র বিরোধী দলকে সমর্থন করার অপরাধে গ্রামের কয়েকটি পরিবারের উপর সেদিন চলে প্রাণঘাতী হামলা। প্রবল আক্রোশে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের ঘরবাড়ি।
আরও পড়ুন-খুন তৃণমূল নেতা
কাঁকসা থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ দেবজ্যোতি সাহার নেতৃত্বে একের পর এক বাড়িতে পেট্রল দিয়ে পোড়ানো হতে থাকে আসবাবপত্র। বেশ কয়েকজন মহিলাকে পাশের জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁদের উপর চালানো হয় বর্বরোচিত অত্যাচার। শোনা যায় পরপর কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ। চাপ-বাঁধা অন্ধকারের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিন যুবক। প্রায় ঘণ্টা তিনেক ধরে চলে তাণ্ডব। সিপিএমের ভৈরব বাহিনীর ওই নারকীয় হত্যালীলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কাঁকসার জোনাল সিপিএম সম্পাদক বীরেশ্বর মণ্ডল, কৃষকনেতা নারায়ণ শ্যাম-সহ সিপিএমের বেশ কিছু জেলা নেতার বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন-হলদিয়ায় নতুন বন্দর
পুলিশ ও হার্মাদ বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান চারজন তরতাজা যুবক। কাঁকসা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি দেবদাস বক্সী বলেন, সিপিএমের ভৈরব বাহিনীর হিংস্রতা সেদিন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল তা ভাবলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়। শঙ্কর ঘোষ নামে গুলিবিদ্ধ এক যুবককে লাউদোহা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় হার্মাদরা।
২০ ডিসেম্বর অজয় নদীর চর থেকে তাঁর টুকরো টুকরো দেহাংশ উদ্ধার হয়। সেদিন শহিদ হন শঙ্কর ছাড়াও অমর গোস্বামী, নবগোপাল ডোম, লক্ষ্মীনারায়ণ ঘোষ। বাংলার ইতিহাসে এই ঘটনা দ্বিতীয় সাঁইবাড়ি হত্যালীলা হিসাবে কুখ্যাত। দেবদাসবাবু বলেন, ওই হত্যালীলার পর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রতি বছর ১২ ডিসেম্বর বাসুদেবপুর গ্রামে শহিদ দিবস পালন হয়। গ্রামে বসেছে চার শহিদের মর্মর মূর্তি। রবিবার জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক শহিদ তর্পণে যোগ দেবেন বলে জানান দেবদাসবাবু।