প্রতিবেদন : আগামিকাল নবান্ন অভিযানে ব্যাপক অশান্তি-অরাজকতা সর্বোপরি নাশকতার ছক কষেছে বিরোধীরা। পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নাম করে এই অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। আসলে লাশের রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি-সিপিএম। ঘৃণ্য এই ষড়যন্ত্রকে সামনে এনে এর তীব্র প্রতিবাদ করল তৃণমূল কংগ্রেস। সোমবার বেলা ১১টায় তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে দুটি ভিডিও-সহ বিস্ফোরক সব তথ্য সামনে এনেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এদিন দলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ একের পর এক তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরে ছদ্মবেশীদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, মিছিলের মধ্যে পুলিশের ছদ্মবেশ ধরে গিয়ে গুলি চালানো হতে পারে যাতে রাজ্যের বদনাম করা যায়। তৃণমূল ভবনে দেখানো দুটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, দুজন লোক (ছবিতে দেখতে পাওয়া দুজনকে পরে আটক করেছে পুলিশ। এরা হল সৌমেন চট্টোপাধ্যায় ও বাবলু গঙ্গোপাধ্যায়। দুজনেই ঘাটালের বিজেপি নেতা) নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন এবং তাঁদের স্পষ্ট বক্তব্য, ২৭ তারিখ নবান্ন অভিযানে লাশ না পড়লে জোরদার অশান্তি পাকানো যাবে না। এ-বিষয়ে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছে তৃণমূল। তদন্ত করছে সিবিআই। মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। এখন যদি অভিযান করতে হয় তাহলে সেটা করা উচিত সিজিও কমপ্লেক্সে, নবান্নে নয়। এর থেকেই স্পষ্ট বিরোধীরা দেহ নিয়ে শকুনের রাজনীতি করছে। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য স্পষ্ট বলেন, নবান্ন অভিযানের জন্য পুলিশের কাছে কোনও রকম আবেদন করা হয়নি। সুতরাং এই অভিযান সম্পূর্ণ বেআইনি। এ-বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্লেখ করেন চন্দ্রিমা। জয়প্রকাশ মজুমদার জানান, নাশকতার ছক তৈরি হচ্ছে। এ-বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কুণাল ঘোষের কথায়, রাজ্যে নির্বাচনে জিততে না পেরে এখন দেহ নিয়ে শকুনের রাজনীতি করছে রাম-বাম। আরজি করের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়, মর্মান্তিক। যে বা যারা এই ঘটনার পিছনে রয়েছে সেই দোষীদের চরম শাস্তি দাবি করে কুণাল বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের ঘটনা ঘটলেও সেখানে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয় না। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করার জন্যই এই ঘটনা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছে বিরোধীরা। এটা মহিলাদের প্রতি অসম্মান। এ-বিষয়ে বাংলার মেয়েদের সজাগ হওয়ার বার্তা দেন তিনি।
আরও পড়ুন-ন্যক্কারজনক! নিম্নরুচির রাজনীতি ধর্ষণের হুমকি অভিষেক-কন্যাকে
দলের স্পষ্ট বক্তব্য, পুলিশের ভুয়ো পোশাক তৈরি করে এরা নিজেরা গুলি চালানো বা এমন কিছু করার চেষ্টা করছে যাতে সরকার এবং পুলিশ সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হয়। সবচেয়ে বড় কথা, একটা গন্ডগোলের পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে ফলে আমরা বলছি, আগামিকালের এই কর্মসূচির ডাক বেআইনি, অবৈধ। কাল পরীক্ষা রয়েছে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াত এবং শান্তিতে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যারা ছাত্রসমাজ বলে, তারা পরীক্ষার দিনে এই অরাজকতা তৈরি করতে পারেন আদৌ? হতে পারে এটা? গোটাটাই শকুনের রাজনীতি হচ্ছে। এর একটা আইনগত দিকও আছে। যদি সত্যি ন্যায়বিচারের দাবিতে মিছিল হয় আমরাও তো বলছি উই ওয়ান্ট জাস্টিস। কলকাতা পুলিশ চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একজনকে ধরেছে। সিবিআই এতদিন ধরে কী করছে! বাংলার যে প্রান্ত থেকে যত ন্যায়বিচারের মিছিল শুরু হবে সব ক’টার শেষ সিজিও কমপ্লেক্সের গেটে হওয়া উচিত। কারণ তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে সিবিআই। সাফ কথা কুণাল ঘোষের। তিনি বলেন, সারা দেশে যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তা লজ্জাকর। দিনে ৯০টা ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে সারা দেশে সেখানে কোথাও পদত্যাগের কোনও প্রশ্ন নেই, আর এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা ভারতবর্ষের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে ‘নবান্ন চলো’ বলা হচ্ছে। এটা অবৈধ ডাক-বেআইনি ডাক। গন্ডগোল তৈরির জন্য ডাক। ডেডবডি চাই বলে এরা আলোচনা করছে, এমন কিছু চাই নইলে আমরা রাজনীতি করতে পারব না। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। সবরকম সতর্কতা থাকবে এই অপশক্তির চক্রান্ত রুখতে। আমরা কোনও অবস্থায় এসব সফল হতে দেব না। অন্য রাজ্য থেকে লোক ঢুকছে কিনা সেদিকেও নজর রাখতে হবে।