প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা শুধু ভারতীয়দের উপর নয়। মানবতার উপর হয়েছে। আমরা একমত। কিন্তু একই সঙ্গে জানতে চাইছি, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর দেশের নানা প্রান্তে বিজেপির উস্কানিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনের ওপর যে হামলা চালানো হল, যেভাবে তাঁদের সম্পর্কে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ মূলক মন্তব্যের জিগির তোলা হল, সেটা সম্প্রীতির উপর হামলা নয়?
আপনার সরকার যে আমাদের রাজ্যকে ভাতে মারার ব্যবস্থা করছে, সেটা মানবতার বিরুদ্ধে আক্রমণ নয়?
বাংলা আপনার কেন্দ্রের সরকারের কাছে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা পায়। আগে সেই টাকা দিন, তার পর বড় বড় কথা বলুন, বাত্তেলা করুন।
আজ বাংলা নিরাপদ বলে আপনি প্রতিবার ঠিক নির্বাচনের আগে এখানে আসেন। আসেন বাংলার মানুষকে ভুল বোঝাতে, কুৎসা রটাতে, ষড়যন্ত্র করতে। বুকনি দিয়ে চলে যান। অতই যদি মানুষের প্রতি দরদ, তবে মণিপুরে যাচ্ছেন না কেন? ওখানকার পরিস্থিতি যেরকম অগ্নিগর্ভ, আপনার তো আগে ওখানে যাওয়া উচিত ছিল।
এত বড় বড় কথা বলেন। সেনাকে স্যালুট করতে যাচ্ছেন না কেন? ভয় পান নাকি? বিদেশে তো এত ঘুরতেন। প্রচার হওয়া উচিত সেনার। তা নয়। প্রচার হচ্ছে মোদির। অথচ অপদার্থ মোদি সরকার এখনও জঙ্গিদের গ্রেফতার করতে পারেননি কেন? সব কি কেবল দেখানোর জন্য?
মোদিজি! মনে আছে আপনার, ১০০ দিনের কাজে আপনারা কাজ করিয়ে নিয়েছেন, গরিব মানুষকে টাকা দেননি। আমরা সব দিলাম। আর আপনি ন্যাকা সেজে ঘুরছেন। এ বিষয়ে ট্যাঁফুঁ করছেন না কেন? কেন চার বছর ধরে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের টাকা বন্ধ করেছেন? বাংলার স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব ভেঙে দিতে চাইছেন, তাই না!
আগে তো নিজেকে চা-ওয়ালা বলতেন। পরে বললেন, পাহারাদার! আর এখন সিঁদুর বেচতে এসেছেন? বাংলা জানতে চায়।
অভিযানের নাম আপনারা দিলেন ‘অপারেশন সিঁদুর’। এই নাম দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে। যে সময় তৃণমূল কংগ্রেসের মতো বিরোধীরাও দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, সেই সময় নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে নরেন্দ্র মোদি রাজনীতির হোলি খেলতে এসেছেন। আপনাদের লজ্জাও করে না!
আর একটা কথা। আমরা সিঁদুরকে সম্মান করি। মহিলারা তাঁর স্বামীর হাত থেকে সিঁদুর পরেন। মোদি সেই সিঁদুরকে অসম্মান করছেন। মনে রাখবেন মোদি। আপনি সকলের স্বামী নন। নিজের স্ত্রীকে সিঁদুর পরাচ্ছেন না কেন? অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এ কথা জানতে চাইছি আমরা।
আরও পড়ুন-ঝড় নিয়ে সুন্দরবনে মাইকিং এসডিও দফতরে কন্ট্রোল রুম
উনি বিভাজনের রাজনীতি করছেন। কেন আজ ওঁকে অসম থেকে লোক নিয়ে আসতে হল? তার মানে উত্তরবঙ্গের মানুষ ওঁকে চিনে গিয়েছেন। ওঁর উপর আর মানুষের বিশ্বাস নেই। এজন্যই আলিপুরদুয়ারে নরেন্দ্র মোদির সভায় সামনের ও মাঝের সারিতেও বহু আসন ফাঁকা ছিল। যত সংখ্যক চা শ্রমিক প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আসার কথা ছিল, তাঁদের বেশিরভাগই আসেননি। শাক দিয়ে আর কতদিন মাছ ঢাকবেন মোদিজি! ঘোমটা দিতে গিয়ে তো পশ্চাৎ-দেশ বেআব্রু হয়ে যাচ্ছে। লজ্জা আছে আপনাদের?
পহেলগাঁও হামলার পর এতদিন অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে, এখনও কেন ওই ঘটনায় যুক্ত থাকা কোনও জঙ্গিকে ধরা গেল না? জবাব আছে নরেন্দ্র মোদির কাছে? বিজেপি আসলে মিথ্যের ব্যবসা করছে। ফেক ভিডিও দিয়ে বাংলার দুর্নাম করা হচ্ছে। আসলে বিজেপি-শাসিত রাজ্যেই দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি।
এত বড় নেতা মোদি জি, আপনি। অথচ আমেরিকা বললেই চুপ হয়ে যান! কেন?
কোনও কিছুতে দুর্নীতি ধরা পড়লে সরকারকে পদক্ষেপ করতে হয়। কিন্তু যখন আপনার গুজরাতে, মধ্যপ্রদেশে পাকিস্তানের চরবৃত্তি করার জন্য কেউ ধরা পড়েন, তখন আপনারা কী করেন? চুপ করে বসে থাকেন। আর কী ই বা করবেন!
সর্বভারতীয় স্তরের নানা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, নিট পরীক্ষায় দুর্নীতি, ৪৫ শতাংশ বেকারত্বের হার, এসবের পেছনে কে বা কারা, মোদিজি? আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখাও।
দেশের হয়ে বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা যখন বিদেশে গিয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, তখন আপনি এখানে রাজনীতি করতে এসেছেন? এটা রাজনীতি করার সময়? আপনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি আমরা। পারলে কালকেই ভোট করুন। দেখিয়ে দেব কত ধানে কত চাল। বাংলায় ভোট আসছে। কিন্তু তার এখনও দেরি আছে। তত দিন আপনি ক্ষমতায় থাকবেন কি থাকবেন না, সেটা আগে খেয়াল রাখুন। জেনে রাখুন, বাংলা কোনও দিন বিজেপির দালালি করবে না।
কর্নেল কুরেশি বলেছেন, এই দেশটা সেকুলার, ধর্মনিরপেক্ষ। আমরা সকলে মিলে মাতৃভূমির জন্য লড়ছি।
হিংসা-অরাজকতা, মহিলাদের সম্মানহানি, বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং গরিবের অধিকার কেড়ে নেওয়া, এসব তো মোদি সরকারের একচেটিয়া কৃতিত্ব।
মুর্শিদাবাদ, মালদহে যা হয়েছে তার পিছনে রয়েছে বিজেপি। ওরা অশান্তি করার মাস্টার। দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাতেই মা-বোনেরা সুরক্ষিত। বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের নিরন্তর ঘটে চলা একাধিক ঘটনা তার প্রমাণ। রাজ্যে মা মাটি মানুষের সরকার ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমিয়েছে। আর বিজেপির ডবল ইঞ্জিন ৪০ শতাংশ বেকারত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। তার পরেও বড় বড় কথা! মোদি কি জানেন, ২৬ হাজারের চাকরি গিয়েছে কোর্টের নির্দেশে। আমাদের সরকারের জন্য নয়। আর কোর্টে গিয়েছিল সিপিএম-বিজেপি। এত সামাজিক প্রকল্প কোথাও নেই। এত মানুষ কোথাও সুবিধা পান না। এর পরেও আপনার মিথ্যে কথা কেন শুনব, মোদিজি?
আগের বার বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এটা বাংলার মানুষকে অপমান নয়? মুখ্যমন্ত্রী যদি কথাই বলতে না-পারেন, তা হলে মুখ দেখাতে কেন যাবেন? মধ্যাহ্নভোজ খাওয়ার জন্য তিনি কোথাও যান না, বিজেপি নেতাদের মতো। আইপিএল ফাইনাল কলকাতা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম করেছেন আর সব খেলা ওখানে নিয়ে চলে যাচ্ছেন! আসল অঙ্ক কী, সেটা বুঝতে কারও আর বাকি নেই।
বছর ঘুরলে ভোট। তখনই তবে ‘খেলা হবে’ ।