একথা আর অস্পষ্ট নেই যে, মোদি সরকারের আমলে, বিজেপির সৌজন্যে, গোটা দেশে এখন নির্বুদ্ধিতা, ধর্মান্ধতা, ব্যর্থতার চাষের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে জোরদারভাবে।
একথা আর গোপন করার উপায় নেই যে, অসমের নলবাড়ি, ছত্তিশগড়ের রায়পুর, কেরলে, উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে স্কুল, চার্চের সামনে হাজির হয়ে সান্তাক্লজ ধ্বংস করা, বাচ্চাদের ক্যারল গান বন্ধ করে গুন্ডাগিরি করা হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিটি উৎসবের কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একথা আড়াল হবে কোন যুক্তিতে যে, শৃঙ্খলাহীনতা, অসৌজন্য এবং অশালীন শব্দের অবাধ ব্যবহারের উৎসব, আইনশৃঙ্খলার চরম দুর্বলতা, প্রশাসন চালাতে না জানা এবং ধর্মান্ধতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার সম্যক উদাহরণ, প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভারতও হয়ে উঠছে প্রতিদিন। ভারত থেকে যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক রাষ্ট্র গঠন করেছে এবং পরবর্তীকালে সুষ্ঠুভাবে প্রশাসন চালানো কিংবা আর্থ সামাজিক পরিকল্পনা নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয়ে যাদের একাংশের ধ্যানজ্ঞান হয়েছে ভারত বিরোধিতা তথা ধর্মান্ধতা। ঠিক সেইসব দেশকেই গ্রাস করেছে চিরকালীন অশান্তি। আর তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতও মেতেছে অধোগমনের নেশায়। পাকিস্তান, বার্মা, বাংলাদেশ সকলেই ভারত থেকে বিচ্ছিন্নতা চেয়েছিল। বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কিন্তু ৮০ বছর পরও তারা কোনও রাষ্ট্রের কাছে বা বিশ্ব মানচিত্রে সমীহ আদায় করে নিতে পারেনি। তাদের প্রসঙ্গে আন্দোলন, হত্যা, শাসককে দেশছাড়া করা, নির্বাচনে কারচুপি, স্বৈরাচার, অরাজকতা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি ছাড়া বিশ্বের উন্নত দেশগুলি আলোচনাই করে না।
এর মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই মা মাটি মানুষের সরকারের নেতৃত্বে নিয়ত আলোর পথের যাত্রী হয়ে ওঠার অবিরাম প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
২০১৩-’১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি বেকারত্ব ইস্যুতেই যুবসমাজের মন জয় করেছিলেন। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রথমবারের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল নেহরু-গান্ধী পরিবার এবং কংগ্রেস সরকার। তাঁর অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস সরকারগুলির অকর্মণ্যতার কারণে এবং সদিচ্ছার অভাবেই যুবসমাজের এই দুর্দশা। কেন্দ্রে সরকার গঠনে যুবসমাজের সমর্থন ভিক্ষা করেছিলেন মোদি। তিনি কথা দিয়েছিলেন, তাঁর সরকার এই যুবসমাজের প্রত্যেকের হাতে হাতে কাজ দেবে। তার ফলে এই বেকার বাহিনীই, যারা দেশের ‘বোঝা’ বলে গণ্য হচ্ছে, তারাই হয়ে উঠবে সম্পদ সৃষ্টির, দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারিগর। বছরে কত চাকরি দেবে মোদি সরকার, সেই পরিসংখ্যান বহু চর্চিত, তার উল্লেখ আজ নিষ্প্রয়োজন। শুধু এটুকু বলা যায়, আরও একাধিক প্রসঙ্গে বেকারত্ব দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু যে জিনিসটা আজও পাওয়া যায়নি তা হল পর্যাপ্ত সংখ্যায় চাকরি। অথচ বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় দফতর এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি শূন্যপদের অভাবে সমস্যায় রয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় নিয়োগ হয় না রেলে এবং ব্যাঙ্কগুলিতেও। অন্যদিকে, ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য করে স্বনির্ভর হওয়ার পথও সুগম করেনি মোদি সরকার। এই শ্রেণির কাছে ব্যাঙ্কঋণ এখনও দুর্লভ, ওই সঙ্গে আছে জিএসটির অত্যাচার। মোদি সরকার বস্তুত তেলা মাথাতেই তেল ঢেলে যাওয়ার অভ্যাসেই ডুবে আছে। খেলাপির খেলায় চ্যাম্পিয়ন সরকার বাহাদুর। বৈষম্যবৃদ্ধির এর চেয়ে ‘উৎকৃষ্ট’ উদ্যোগ আর কী হতে পারে।
কিন্তু সব রাজ্য সরকারের পক্ষে তো আর চোখ বুজে চুপ করে থাকা সম্ভব নয়। সীমিত ক্ষমতার মধ্যে তারা চাকরি/কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রসঙ্গে সবার আগে আসে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নাম।
অথচ, এটাও আর অজানা নেই যে ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ সরকারকে জব্দ করার কৌশলী গেরুয়া রাজনীতির কাছে অনেকাংশে সমস্যায় পড়ছে তারা। যেমন নবান্ন যখনই কোনও বড়সড় নিয়োগে উদ্যোগ নিচ্ছে তাতে বাগড়া দিতে ব্যগ্র হয়ে পড়ছে বিরোধীরা। তার পিছনে গেরুয়া বাহিনীর প্ররোচনা যে যথেষ্ট তা নানাভাবে প্রকট হয়ে পড়ে। অনেক ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অবশেষে ফের কিছু নিয়োগ দিতে তৎপর হয়েছে। যেমন রাজ্য জুড়ে ১৩,৪২১টি পদে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পথে আরও একধাপ এগিয়েছে তারা। ইস্যুটি রাজ্য মন্ত্রিসভায় নথিভুক্ত হয় বুধবার। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বিষয়টিতে ছাড়পত্র দিয়েছেন আগেই। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল ১৯ নভেম্বর। তাতেই জানানো হয়েছিল শূন্যপদের সংখ্যা এবং পোর্টাল খোলার বিষয়টি। বুধবার তাতেই সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অতঃপর ঘোষিত হয়েছে ইন্টারভিউ গ্রহণের দিনক্ষণ। পর্ষদ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষকদের ইন্টারভিউ নিতে চলেছে বছরের শেষ দু’দিনে। প্রার্থীদের তরফে বিদেশ গাজি, বহু প্রতীক্ষিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরোটা বিধানসভা ভোটের আগেই সম্পন্ন করে ফেলার দাবি জানিয়েছেন। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক শূন্যপদ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। বাকি শূন্যপদগুলি রয়েছে মূলত হুগলি, বাঁকুড়া, কলকাতা, পূর্ব বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা এবং বীরভূমে। রাজ্য জুড়ে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার। অবশ্য প্রাথমিকে শূন্যপদ বাড়িয়ে অন্তত ৫০ হাজার করার দাবি জানিয়ে রেখেছেন টেট পাশ প্রার্থীরা। অন্যদিকে, শীঘ্রই একাদশ-দ্বাদশ স্তরেও কিছু শিক্ষক নিয়োগে তৎপর এসএসসি। এরপরেই শুরু হবে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। এখানে শূন্যপদ ২৩,২১২টি। পাশাপাশি শিক্ষাকর্মীও নিয়োগ করবে এসএসসি। সেই সংখ্যাটি প্রায় সাড়ে আট হাজার। আরও একাধিক বিভাগেও নিয়োগ সংক্রান্ত ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভা। কিছু পদকপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদকেও চাকরি দেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সব মিলিয়ে একটি আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
অর্থাৎ, উপমহাদেশের নেতিবাচকতার মধ্যে ব্যতিক্রমী শিখা আগলে রেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
এই কারণেই আজ এ-রাজ্যে কাঁথা স্টিচের শাড়িতেও ‘উন্নয়ন পাঁচালি’! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের একাধিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের ছবি সুচ-সুতোয় ফুটিয়ে তুলে পৌষমেলায় সবার নজর কাড়ছেন মমতাজ। কোনও শাড়িতে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, কোনও শাড়িতে ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’। কোনও শাড়িতে আবার ‘পথশ্রী’ কিংবা ‘সবুজসাথী’। দেদার বিকোচ্ছেও সেইসব শাড়ি।
বাংলায় নারীর ক্ষমতায়ণে ‘দিদি’র ইতিবাচক ভূমিকাকে মর্যাদা দিতেই ‘প্রকল্প-পাঁচালি’ শাড়িতে ফুটিয়ে তুলছেন মমতাজ।
শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠে চলছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা।
বোলপুরেরই ভূমিকন্যা মমতাজ। জেলার হস্তশিল্পীদের কাছে চেনা নাম। একাধিক সরকারি পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। রাজ্য সরকারের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছেন বিদেশেও। মমতাজের হাত ধরে কর্মসংস্থানের দিশা পেয়েছেন জেলার বহু মহিলা হস্তশিল্পী। গত বছর মমতাজের কাঁথা স্টিচে নবদুর্গার কারুকাজ করা একটি ওয়াল হ্যাঙ্গিং বিস্মিত করেছিল মেলায় আগত পর্যটকদের। শিল্পীর দাবি, সেটি বিক্রি হয়েছে ৩৩ লক্ষ টাকায়! দু’বছর চারমাস ধরে সুচ-সুতোয় ফুটিয়ে তুলেছিলেন নবদুর্গা। এবছরও তসরের শাড়িতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলার আদিবাসী নৃত্যের দৃশ্য।
এই যেখানে পরিস্থিতি ও বাস্তবতা, সেখানে বাংলা বিরোধী, বাঙালি বিদ্বেষী খুনি ধর্ষকদের কেন ভোট দেবে বাংলা।
তাই, চতুর্থবার আবার মা-মাটি-মানুষের সরকার।
আরও পড়ুন-মোদি জমানায় ইস্তফা ২৩ হাজার জওয়ানের

