প্রতিবেদন : নন্দীগ্রামে ১০,৪৫৭ ভোটে হারের জ্বালা কিছুতেই ভুলতে পারছে না বিজেপি ও গদ্দার অধিকারী। সেই আক্রোশ থেকেই নন্দীগ্রামে বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণ চালাল বিজেপির গুন্ডারা। এঁদের মধ্যে গুরুতর আহত ১৪ জনকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভর্তি করা হল কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে। বিজেপির সন্ত্রাসে নন্দীগ্রাম ১ ও ২-এ এখনও তৃণমূলের বহু কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া। প্রতি মুহূর্তে হামলার আতঙ্কে রয়েছে মহিলা-শিশুরা। এই নৃশংস হামলার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার নন্দীগ্রামে প্রতিবাদ মিছিল করবে তৃণমূল কংগ্রেস (Nandigram- TMC Rally)। শুক্রবার সকালেই নন্দীগ্রাম রওনা দেবেন মন্ত্রী শশী পাঁজা, দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সহ কয়েকজন। আজ নন্দীগ্রামে দলের ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থকদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করবেন নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার বিকেলে এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে নন্দীগ্রামের আহত ১৪ জনকে শুধু ভর্তি ভর্তি করানোই নয়, তাঁদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ছিলেন শশী পাঁজা ও কুণাল ঘোষও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারে বারে খোঁজ নিয়েছেন আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই অরূপ বিশ্বাস ট্রমা কেয়ারে ভর্তি ১৪ জনের জন্য জামাকাপড়, প্রয়োজনীয় খাবার-দাবারের সব ব্যবস্থা করেন। হাসপাতাল সুপার সহ চিকিৎসক দলের সঙ্গে কথা বলেন। আহতদের পরিবারের সদস্যদেরও আশ্বস্ত করেন। তৃণমূল নেতৃত্ব বলেন, ভয় পাবেন না, দল সর্বতোভাবে আপনাদের পাশে আছে, থাকবে। এই ১৪ জনের মধ্যে বয়াল ২-এর তৃণমূলের এক বিজয়ী মহিলা প্রার্থীও রয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে দাঁড়িয়েই মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, এমএ পাশ করা ২৫ বছরের এই তরুণী হামলায় এতটাই আতঙ্কিত তা বলার নয়। শুধু তাই নয়, তাঁকে ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর কথায়, অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠার সময় সে নিজের জেতার সার্টিফিকেটটা সঙ্গে নিয়ে এসেছে। বিজেপি জয়ী প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে সার্টিফিকেট কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলছে। এই বিজেপি সিপিএমের হামলার কায়দা রপ্ত করেছে। কলকাতা পুলিশের কাছে ওই তরুণী দুষ্কৃতীদের নাম-সহ লিখিত অভিযোগ করেছেন। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, বিজেপি আসলে দিশাহারা হয়ে গিয়েছে। ওদের রাজ্য সভাপতি বলছেন, সিপিএম-কংগ্রেস ভোট কেটেছে বলে বিজেপি হেরেছে। এদিকে আবার লোডশেডিং বিরোধী দলনেতা বলছে, ভোট হয়নি। এরা গোহারা হেরে গিয়ে ভুল বকছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, দলবদলু গদ্দার নন্দীগ্রামে ১০,৪৫৭ ভোটে হার মেনে নিতে পারছে না। তাই নন্দীগ্রাম ১ ও ২-এ ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। গণনাকেন্দ্র থেকে ফিরছিল। আচমকা বহিরাগত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে হামলা চালানো হয়। বিশেষত মাথায় আঘাত করা হয়েছে। অনেকের হাত-পা ভেঙেছে। নাক-মুখ ফেটেছে। বীভৎস ভাবে মারা হয়েছে। বয়াল ২-এর আমাদের বিজয়ী প্রার্থী ২৫ বছরের মেয়েকে বিজেপির গুন্ডাবাহিনী তুলে নিয়েই যাচ্ছিল। বলা হয়েছে ‘‘চল শুভেন্দুদা ডাকছে”। না গেলে ধর্ষণ করে দেব। কুণালের সংযোজন, নন্দীগ্রাম ১-এর ভেকুটিয়া, সোনাচূড়া, গোকুলনগর, হরিপুরে হামলা চালিয়েছে। নন্দীগ্রাম ২-এর আমদাবাদ, বিরুলিয়া, বয়াল ২-এও নৃশংস হামলা চালিয়েছে বিজেপি। এরা এতটা নির্লজ্জ, তৃণমূল কংগ্রেস করেন বলে এক মহিলাকে গাছে বেঁধে মেরেছে। শুক্রবার নন্দীগ্রামে প্রতিবাদ মিছিল করব আমরা। আমাদের যাঁরা ঘরছাড়া, তাঁদের ঘরে ফেরাব। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, নন্দীগ্রামে বিজয় মিছিলের নামে পাঁচ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও অনেকের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বাড়ি লুঠ হয়েছে। দলের তরফে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। তারা সংযম দেখাচ্ছে। দলের সকলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন আইন হাতে তুলে না নেয়। পুলিশকে সবটা জানানো হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস শান্তি চায়। কিন্তু বিজেপি হারের হতাশায় রক্তাক্ত করছে নন্দীগ্রামকে (Nandigram- TMC Rally)।
আরও পড়ুন- মোদি সরকারের লজ্জা! মণিপুর নিয়ে উদ্বেগ ইউরোপীয় সংসদের