প্রতিবেদন : বাংলায় প্রচারে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে মিথ্যাচার করলেন তার এক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা জবাবে তাঁকে ধুইয়ে দিল তৃণমূল (TMC)। বুঝিয়ে দেওয়া হল বিজেপি ও তার কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা আগে আয়নায় মুখ দেখুক নিজেরা। অতীতে দুর্নীতি নিয়ে যে সব বড়-বড় কথা প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন সে-কথার কোনও মূল্য নেই তা তাঁরা নিজেরাই প্রমাণ করেছেন গদ্দার অধিকারী, হিমন্ত বিশ্বশর্মা, অজিত পাওয়ারদের দলে নিয়ে। মুখে বলেছেন না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা। অথচ কাজের বেলায় করেছেন তার ঠিক উল্টো। দুর্নীতিগ্রস্তদের কোলে নিয়ে ঘুরছেন মোদি-শাহ। এদিন বালুরঘাটের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ঠিক মতো জায়গাটির নামটুকুও উচ্চারণ করতে পারেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁকে বলতে শোনা যায় ‘বেলুড়ঘাট’! এই ঘটনায় তীব্র কটাক্ষ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণের সেই বিকৃত উচ্চারণে বলা বেলুড়ঘাট বক্তব্যের ভিডিও দেখিয়ে বলেন, যারা বাংলাকে জানে না, জায়গার নাম উচ্চারণ করতে পারে না, তারা আবার ৩০টি আসন পাবে বলে দাবি করে। কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, বিজেপির টার্গেট ক্রমশ কমছে। আগে বলেছিল ৩৫টি আসন পাবে। এখন বলছে ৩০টি। এরপর আরও কমবে। কমতে কমতে তলানিতে ঠেকবে। তৃণমূল কংগ্রেস লোকসভায় বাংলায় ৩০ থেকে ৩৫টি আসন পাবে। আমরা সেটাকে ৩৭-৩৮-এর দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছি। বিজেপি তো এখনও ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থীই দিতে পারেনি! ওরা এআই প্রযুক্তিতে প্রার্থী তৈরি করুক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন সন্দেশখালি, ভূপতিনগর, সিএএ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। তার পাল্টা জবাবে তৃণমূলের (TMC) বক্তব্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগে উত্তর দিন কেন এনআইএ এসপি ধনরাম সিং ও বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি গোপনে বৈঠক করছে। বিজেপি তৃণমূলের বুথস্তরের নেতা-কর্মীদের তালিকা এনআইকে দিয়ে এসেছে। সেই অনুযায়ী কাজ করছে এনআইএ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই চক্রান্ত-বৈঠক ফাঁস করে দিয়েছেন। অমিত শাহ আগে এর কৈফিয়ত দিন। কেন এখনও পর্যন্ত এনআইএ-র এসপিকে সরানো হয়নি। তাকে শুধু লোক দেখানো দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। এনআইএ নির্দিষ্ট করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাক, তাদের এসপির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন- গদ্দারকে মানহানির মামলার হুঁশিয়ারি পার্থর
উত্তরের দুটি জেলায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি তৈরির অনুমতি কমিশন দেয়নি কেন? এর পিছনে বিজেপির ঘৃণ্য রাজনীতি কাজ করছে। সাফ কথা মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ২০২১-এ হারের পর থেকেই প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছে বিজেপি। ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা গায়ের জোরে আটকে রেখেছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলি হাহাকার করছেন। আগে এইসব প্রশ্নের উত্তর দিন অমিত শাহ। এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও সাংবাদিক বৈঠকের মাঝখানেই এদিন দেখানো হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলায় যখন এসেছেন তখন কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী এর আগে প্রচারে এসে বলেছেন, আবাসের বাড়ি তৈরির জন্য বাংলাকে হাজার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই ভিডিওতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যায়, প্রধানমন্ত্রী শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জানান বাংলাকে আবাসের কত টাকা দিয়েছে? তৃণমূলের চ্যালেঞ্জ এই খাতে যদি ১০ পয়সাও দিয়ে থাকেন তবে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু মিথ্যাচার করে আর বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করে ভোট পাওয়া যাবে না। সাফ কথা চন্দ্রিমার।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টে সন্দেশখালি নিয়ে সিবিআইকে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কুণাল ঘোষ বলেন, এ-বিষয়ে রাজ্য সরকার ও প্রশাসন যা করার করবে। এরপরই তাঁর তীব্র কটাক্ষ, আদালত ও বিচারব্যবস্থার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তাঁরাই শেষ কথা বলবেন আইনের দিক থেকে। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের কোনও কোনও বিচারপতি যদি ঘনঘন সিবিআইয়ের রায় দেন তবে সেই রায় নিয়ে সন্দেহ জাগে মনে। কারণ, প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছেন, বুকে অন্য বিশ্বাস নিয়ে বিচারপতির আসনে বসে কীভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশে রায় দেওয়া যায়। তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টে তাঁর দু’এক জন ছায়া রেখে গিয়েছেন। কুণালের সংযোজন, এরপর এই ধরনের বিচারপতিরা রায় দেওয়ার সময় অর্ডার কপির উপরে লিখে দেবেন, ভবিষ্যতে আমার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কোনও বাসনা নেই। কেননা, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে কোনও কোনও বিচারপতি অদূর ভবিষ্যতে বিজেপিতে যাবেন বলে সেই অনুযায়ী তাদের হয়ে পারফর্ম করছেন।
এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিএএ কটাক্ষের জবাবে চন্দ্রিমা বলেন, উনি অনুপ্রবেশের কথা বলছেন। যদি অনুপ্রবেশ হয়েও থাকে তার ব্যার্থতা তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। বিএসএফ আপনার। আপনি কেন আটকাতে পারেননি। ভোটের মুখে সিএএ নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যাদের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে, আধারকার্ড রয়েছে তারা সকলেই নাগরিক। নতুন করে কেউ আবেদন করবেন না। আবেদন করলেই তার সব সুযোগ-সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। এরপর তাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? ভূপতি নগর নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একহাত নিয়েছে তৃণমূল। দলের স্পষ্ট বক্তব্য, এনআইএ বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে পর্দার আড়ালে ষড়যন্ত্র করছে। এখন সেই খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তদন্ত এড়াতে আদালতে গিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে, তাদের মারধর করা হয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। সেই তদন্ত করতে হলেও তো পুলিস ডাকবে। ভূতে সাক্ষী দেবে নাকি!