বিজেপি হঠাও ত্রিপুরা বাঁচাও, মহানগরী থেকে জেলায় জেলায় মহাপ্রতিবাদ

Must read

প্রতিবেদন : ত্রিপুরায় ফের আক্রান্ত তৃণমূল কংগ্রেস। মিথ্যে মামলায় জেলে পাঠানো হল দলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষকে। এ ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠল মহানগরী। সোমবার সন্ধ্যায় হাতে মোমবাতি নিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। মিছিলে শামিল হলেন টলিউড তারকা, খেলোয়াড়, কলাকুশলী থেকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। এদিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ রবীন্দ্রসদন থেকে শুরু হয় এই মোমবাতি মিছিল। মিছিলের নেতৃত্ব দেন অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, মনোজ তিওয়ারির মতো রাজ্যের মন্ত্রীরা। সঙ্গে ছিলেন দলীয় নেতৃবৃন্দ। শুরু হতেই মিছিলে পা মেলান পথচলতি অসংখ্য সাধারণ মানুষ। রবীন্দ্রসদন থেকে শুরু হয়ে ময়দানে গান্ধীমূর্তিতে গিয়ে শেষ হয় মিছিল। সেখানে ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের অগণতান্ত্রিক কাজকর্মের কড়া সমালোচনা করেন অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেনরা। অন্যান্যদের সঙ্গে মিছিলে হাঁটলেন অভিনেত্রী-বিধায়ক লাভলী মৈত্র, অভিনেতা-বিধায়নক কাঞ্চন মল্লিক, নীল, তৃণা, গায়ক সৈকত মিত্র, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরজিৎ, খেলোয়াড় মানস ভট্টাচার্য, মেহতাব হোসেন, রহিম নবি, গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া-সহ আরও অনেকে। গণতন্ত্র যেখানে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে সেখানেই গর্জে উঠেছেন বাংলার বিদ্বজ্জনরা। সোমবার তা আরও একবার দেখা গেল মহানগরীর বুকে।

ক্ষোভে উত্তাল হয় হাওড়াও। ত্রিপুয়ায় সায়নী ঘোষকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গর্জে উঠল হাওড়া। শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্রই হল প্রতিবাদ মিছিল। তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সাধারণ মানুষও সেই মিছিলে শামিল হয়ে এই অনৈতিক গ্রেফতারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন। হাওড়া শহরে মিছিলের নেতৃত্ব দিলেন সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়। গ্রামীণ এলাকায় উলুবেড়িয়ায় তৃণমূলের হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি রাজা সেনের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল হল। ছিলেন হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ব্লক স্তরের নেতারা। উলুবেড়িয়া স্টেশন রোড থেকে এসডিও অফিসের সামনে পর্যন্ত যুব তৃণমূলের উদ্যোগে ওই প্রতিবাদ মিছিল হয়। বিকেলে হাওড়া ময়দানের কাছে বঙ্কিম সেতুর নিচে থেকে মিছিল শুরু হয়। ফাঁসিতলামোড়, পিলখানা, নন্দীবাগান হয়ে সালকিয়া চৌরাস্তায় এসে মিছিল শেষ হয়। মিছিল যত এগোতে থাকে ততই মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মিছিল থেকে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সায়নী ঘোষকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়। সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘ত্রিপুরায় সায়নী ঘোষকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার ও তৃণমূল কর্মীদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যেভাবে সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছেন তাতে ত্রিপুরাতেও ভোটের বাক্সে যোগ্য জবাব পেয়ে যাবে বিজেপি। মানুষই ওদের এই রাজ্যের মতো ত্রিপুরাতেও প্রকৃত শাস্তি দিয়ে দেবেন।’’ লক্ষণীয়, এদিনের প্রতিবাদ আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়েছেন পথচলতি সাধারণ মানুষও। অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, ত্রিপুরায় বিজেপি যেভাবে বিরোধী শক্তির কণ্ঠরোধ করতে চাইছে তা গণতন্ত্রের লজ্জা। এভাবে চলতে থাকলে সারা দেশেই বিজেপি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে অদূর ভবিষ্যতে। তৃণমূল নেতা অরূপ রায় জানিয়েছেন, আন্দোলন এখানেই থেমে থাকবে না। বিজেপি যতদিন না পর্যন্ত তাদের বর্বর আচরণ, বর্গিরাজ বন্ধ করছে ততক্ষণ পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস তীব্র গণআন্দোলন চালিয়ে যাবে। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রদর্শিত পথে চলবে আপসহীন সংগ্রাম।

আরও পড়ুন : বড় ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল দুই শিবিরে

উত্তরপাড়াতেও ত্রিপুরায় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী সায়নী ঘোষকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে এবং তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদে উত্তরপাড়া শহর তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকে এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিল হল। কালো পতাকা ও প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার প্রশাসক দিলীপ যাদব, উত্তরপাড়া শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঘোষ এবং উত্তরপাড়া শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি সন্দীপ দাস।

সোমবার রাজ্য বিজেপির সদর দফতরেও মুরলীধর সেন লেনে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কংগ্রেস। এই বিক্ষোভ কর্মসূচিকে বানচাল করতে প্ররোচনা দেয় বিজেপির কিছু কর্মী ও নেতা। কিন্তু সে প্ররোচনায় পা দেননি কর্মীরা। ত্রিপুরায় ফের আক্রান্ত হয়েছে তৃণমূল। বিজেপির দলদাস পুলিশ অন্যায়ভাবে হেনস্তা করছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের। রবিবার তা চরমে ওঠে তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষের গ্রেফতারিতে। এর প্রতিবাদে সোমবার সকালে কলকাতায় বিজেপির সদর দফতর মুরলীধর সেন লেনে বিক্ষোভ দেখালেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি হাতে ‘বিজেপি হঠাও, ত্রিপুরা বাঁচাও’ স্লোগান দেন তাঁরা। আন্দোলনরত তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা বলেন, বাংলায় গণতন্ত্র রয়েছে। সে কারণেই বিজেপি পার্টি অফিস রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা দখলদারি করে না। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, যুবনেত্রী সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের নির্দেশে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা বানচাল করতেই এই চক্রান্ত। এই আন্দোলনের আঁচ পৌঁছেছে রাজধানী দিল্লিতেও। বিজেপির এই ঘৃণ্য রাজনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষও সরব। তাই বিজেপি সদর দফতরে বহু সাধারণ মানুষ গণতন্ত্র হত্যাকারী বিজেপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় দলের সমর্থকরা।

Latest article