ভাইরাস থেকে বাঁচতে

শুরু হয়ে গেছে ঋতু পরিবর্তন। দিনে গরম রাতে ঠান্ডা, আবার কখনও কখনও অকাল-বর্ষা। তাপমাত্রার এই নাচনে ঘরে-ঘরে সর্দি, কাশি, ঘুস-ঘুসে জ্বর লেগেই রয়েছে। বিশেষ করে ছোটদের। তাপমাত্রার তারতম্যে বাড়বাড়ন্ত ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন শিশুকে জানালেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

এবার কালীপুজোর আগে থাকতেই আবহাওয়ায় বেশ নরম ভাব। পাখা জোরে চললে একটু শীত-শীত করছে, এসি বেশিক্ষণ চললে মনে হচ্ছে বন্ধ করে দিই, আবার বন্ধ করেও বেশিক্ষণ থাকা যাচ্ছে না। স্নানের সময় গায়ে ঠান্ডা জল ঢাললে যেন একটু ছ্যাঁক করে উঠছে। এখন একটু জলটা তাতিয়ে নিলেই ভাল হয়। শুরু হয়ে গেছে আবহাওয়ার পরিবর্তন। সদ্য হওয়া নিম্নচাপ সুগ্রীব দোসর হয়ে ঝামেলা বাড়িয়ে দিল বইকি!
ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত
হেমন্তে হঠাৎ ইতিউতি জল ঝরার শব্দ। অনিয়মের ঝড়-বৃষ্টির ফলে ঘরে-ঘরে জ্বর বা জ্বর-জ্বর ভাব। সঙ্গে গা-হাত-পায় অসহনীয় ব্যথা, গলা খুস-খুস ভাব, হাঁচি। ভাইরাসের বাড়বাড়ন্তে ভাইরাল জ্বর, সংক্রমণ এখন ঘরে ঘরে।
বিশেষজ্ঞের মতে ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা এবং ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাতাসে ভাইরাসের বাড়বৃদ্ধির জন্য আদর্শ। যদিও তাঁরা বলছেন এমন ঘুস-ঘুসে জ্বর নিয়ে বিশেষ চিন্তার কারণ নেই। তিন থেকে পাঁচদিনেই এর প্রকোপ কমে যায় তবে যদি হাইফিভার বা জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি থাকে তাহলে রক্ত পরীক্ষা করে নিলে ভাল। এমনটা ছোটদের হলে তাদের স্কুলে না পাঠানোই ভাল কারণ শিশুদের থেকেই এই সংক্রমণ দ্রুত ছড়ায়।

আরও পড়ুন-প্রকৃতি সংরক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবার পিছনে ভারত, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে মুখ পুড়ল কেন্দ্রের

আসলে ঋতুপরিবর্তনের সময় ফি-বছর কমবেশি এমনটা হয়। এটা নতুন কিছু নয় কারণ ঠান্ডা এবং গরমে যখন রোগ প্রতিরোধ শক্তি ঝিমিয়ে পড়ে তখন ভাইরাস আরও বেশি আক্রমণ করে। শীতের শুরু হোক বা গ্রীষ্মের শুরু এই ধরনের সংক্রমণের সম্ভাবনা সবসময় বেশি। তাই ঋতু পরিবর্তনে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
শিশুরাই আক্রান্ত বেশি
আসলে এই সময় যে ভাইরাসগুলো আক্রমণ চালায় তারা হল অ্যাডিনো ভাইরাস, হিউম্যান মেটা নিউমোনো ভাইরাস এবং হান্টা ভাইরাস।
এই সময় বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে কিন্তু জ্বর, সর্দি, নাক দিয়ে জল পড়া এমন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। আর জ্বর একবার এলে কী বড় কী ছোট চট করে ছাড়তে চাইছে না। ছোটদের মূলত যে ভাইরাস আক্রমণ করছে তার নাম রেসপিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাস। একবার জ্বর এসে গেলে করণীয় কিছু নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হালকা উপসর্গ থাকতেই ওষুধপত্রে সুস্থ হয়ে উঠবে শিশু।
শিশুর সুস্থতায়
এখন থেকেই খুব ছোটদের মাথায় টুপি পরিয়ে সন্ধের পর বাড়ির বাইরে বের করুন। কানটা যেন ঢাকা থাকে। গায়ে গরম জামার এখনই দরকার পড়ছে না তাও সদ্যোজাত বা ছমাস এক বছরের শিশু নিয়ে সন্ধের পর বেরলে গায়ে একটা পাতলা সুতির কাপড় দিয়ে হালকা মুড়ে বের করুন। ঠিক এই সময়টাই ঠান্ডা লাগার প্রবল সম্ভাবনা বোঝাই যাচ্ছে তাই সতর্কতা জরুরি। গা-ছাড়া দিলে ভোগান্তি।
* এমনিতেই ছোট শিশুদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি খুব দুর্বল হয় ফলে চট করে ফ্লু, সর্দি ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। তাই একটু সন্ধের পর বাইরে কম বের করুন। সকালে বা রাতের খাবার জলটা একটু তাতিয়ে খেতে দিলে খুব ভাল। স্নানের জলও হালকা গরম হলেই ভাল।
ছ-মাস পেরিয়েছে যেসব শিশুর তাদের বছরে একটা ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া শিশুর চার্ট অনুযায়ী টিকাকরণ হচ্ছে কি না সেটা অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যা যা ভ্যাকসিন জরুরি দিয়ে ফেলতে হবে।
হামের ভাইরাস বা রুবেলা ভাইরাসের কারণে এই সময় শিশুরা সংক্রমিত হয়। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, চোখ-মুখ একটু ফুলে থাকে।
ঋতু পরিবর্তনে শিশুদের কানে সমস্যা বেশি হয়। কানের সংক্রমণে ঝুঁকি বাড়ে, শুনতে অসুবিধে হয়, হঠাৎ কানে ব্যথা শুরু হয়। বমি-বমি ভাব থাকতে পারে।
ফিড করে যে শিশু তাকে বসানোর ভঙ্গিমায় খাওয়ান কারণ কানে অনেক সময় দুধ ঢুকে যায়। শিশুর কান-নাক এই সময় ভাল করে পরিষ্কার রাখুন। আবহাওয়া যত পরিবর্তিত হবে তত ভাইরাস আরও সক্রিয় হবে, আর্দ্রতা কমতে থাকবে, বাতাসে ধুলোবালি বেশি উড়বে ফলে সর্দি-কাশির পাশাপাশি হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসের প্রকোপ দেখা দেবে কিছুদিন পর থেকেই। ত্বকের শুষ্কতা বাড়ার জন্য বিভিন্ন চর্মরোগ ও অ্যালার্জি হবে।

আরও পড়ুন-দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে গুগলের হার, ২৪০ কোটি পাউন্ড জরিমানা

এখন যেন শিশু বেশি না ঘামে। ছোট বলেই একদম এখন থেকেই চাপাচুপি দিতে শুরু করে দেবেন না। রাতে এসি যদি এখনও চালান তবে শিশুর গায়ে পাতলা একটা কাপড় দিয়ে রাখুন নচেৎ নয়।
যে বাচ্চা এখনও ব্রেস্ট মিল্ক খাচ্ছে তাকে বারে বারে তা খাওয়ান। বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। ফলে শিশুর সহজে ঠান্ডালাগা, কাশি, সর্দি হয় না বা ঋতু পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে না।
ডায়াপার সময় মেনে বদলে দিন। এই সময় শিশুর মাথা ন্যাড়া না করাই ভাল এতে ঠান্ডা বেশি লেগে যেতে পারে।
ফ্রিজের খাবার এই সময়টা একটু এড়িয়ে তাজা রান্না করা খাবার দিন ছোটদের।
শীতের শুরুতে সাধারণত সর্দি-জ্বর বা ভাইরাল ফ্লু হলে ছোট ছোট সমস্যায় পড়ে শিশুরা।
নাক বন্ধ হয়ে যায়, নাক দিয়ে জল পড়ে সমানতালে, শরীর চুলকোয়, খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। দমবন্ধভাব, শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয়, শোঁ-শোঁ শব্দ, ঘুম থেকে উঠে বসে। ডায়ারিয়া দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকেরা সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দেন না। কাফ সিরাপ ও অ্যান্টি সিস্টামিনজাতীয় ওষুধে শিশু সুস্থ হয়ে যায়।
২ মাসের কমবয়সি শিশুদের শ্বাস নেওয়ার হার প্রতি মিনিটে ৬০ বারের বেশি, ২ মাস থেকে ১২ মাস বয়সি শিশুদের প্রতি মিনিটে ৫০ বারের বেশি ও বারো মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সি শিশুর প্রতি মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে তাকে শ্বাসকষ্ট বলা হয়। তাই খেয়াল রাখুন, কারণ, ঋতু পরিবর্তনের সময় শিশুর নিউমোনিয়াও হতে পারে। নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে দ্রুতগতির শ্বাস-প্রশ্বাস দেখা যায়।
আবহাওয়া পরিবর্তনে বা শীতের শুরুতে অ্যালার্জির সমস্যা হয়। এই কারণেও অনেক সময় অ্যাজমা দেখা দেয়। ডাক্তারের পরামর্শমতো চললে একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব খুব সহজেই।

Latest article