তামাক শরীরের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর?
দুটো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, তামাকজাত কিছু দ্রব্য আছে, যেগুলো মুখের মধ্যে রাখা হয়। যেমন খৈনি, গুটখা ইত্যাদি। এর ফলে ওরাল ক্যানসার হতে পারে। দ্বিতীয়ত, ধূমপান। এর ফলে হতে পারে ফুসফুসের ক্যানসার, হাঁপানি। মনে রাখতে হবে, এখন ইনফেকশনের পাশাপাশি কিন্তু নন ইনফেকশন ডিজিজ অনেক বেশি হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে আগের থেকে অনেক বেশি। ছোটদের মধ্যে হাঁপানির প্রবণতা বাড়ছে। তার অন্যতম প্রধান কারণ যানবাহন থেকে বেরোনো ধোঁয়া, ধুলো এবং অবশ্যই ধূমপান। ছোটরা তো ধূমপান করে না। তাহলে কীভাবে ক্ষতি হচ্ছে? ক্ষতির কারণ, অনেক পরিবারে বড়রা ছোটদের সামনে বসে অথবা বদ্ধ ঘরে ধূমপান করেন। এরফলে ছোটদের ক্ষতি হয় বেশি। নাক-মুখ দিয়ে সিগারেট, বিড়ির ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করে। পাশাপাশি ক্ষতি হয় সেই সমস্ত বড়দের, যাঁরা ধূমপান করেন না। এইক্ষেত্রে তাঁরা পরোক্ষ ধূমপায়ী হয়ে যান। প্রত্যক্ষ ধূমপায়ীর তো ক্ষতি হয়ই। কোভিডের সময় ধূমপায়ীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাবে, তাঁরাই বেশিদিন ভেন্টিলেশনে ছিলেন এবং তুলনামূলক ভাবে বেশি মারা গেছেন। ধূমপায়ীদের মধ্যে ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন থাকলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন-ধর্মীয় সার্কিট গড়ে পর্যটন
মহিলাদের কী ধরনের সমস্যা দেখা দেয়?
পাশ্চাত্যের অনুকরণে ধূমপান এখন সোশ্যাল স্ট্যাটাসে পরিণত হয়েছে। ইদানীং কালে মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে ধূমপানের প্রবণতা। নিজেদের স্বাবলম্বী ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেখাতে গিয়ে অনেক মহিলাই লাগামহীন জীবনযাপন করছেন এবং ধূমপানের আশ্রয় নিচ্ছেন। এর ফলে মহিলাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ইনফার্টিলিটি ও গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষতি হচ্ছে। কম শিক্ষিত মহিলারা গুড়াখু ব্যবহার করেন। পানের সঙ্গে জর্দা মুখে দেন।
আরও পড়ুন-পুরুলিয়ায় ফিল্মসিটি
তামাকজাত দ্রব্য নিঃসঙ্গতা এবং মানসিক অবসাদ দূর করতে পারে?
নিঃসঙ্গতা এবং মানসিক অবসাদ কাটানোর জন্য অনেকেই তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন। বিশেষত ধূমপান। কিন্তু এর ফলে কাজের কাজ কিছুই হয় বলে মনে হয় না। বরং শারীরিক ক্ষতিই বেশি হয়। বহু মানুষ কায়িক পরিশ্রম করেন। তাঁদের মধ্যে বেশি দেখা যায় খৈনি, গুটখার ব্যবহার। খৈনি, গুটখা কতটা এনার্জি বাড়ায় জানা নেই, তবে ক্ষতি করে অনেকটাই। এখন অনেকেই হুঁকো খান। তাঁরা মনে করেন জল এবং ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে আসে বলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এর ফলেও যথেষ্ট ক্ষতি হয়। প্রিম্যাচিওর কার্ডিয়াক ইস্যু এবং ওরাল ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে। শ্বাসনালির ব্যাধি একে অপরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে ছড়াচ্ছে ফাংগাল ইনফেকশন।
তামাকের আসক্তি থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়?
আরও পড়ুন-“টেন্ডারে স্বজনপোষণ চলছে” বাঁকুড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
তামাকের আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে গেলে প্রতিদিন শরীরচর্চা করতে হবে। দূর করতে হবে মানসিক অবসাদ। চর্চা করতে হবে সুস্থ সংস্কৃতির। কথা বলতে হবে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। যাঁরা নেশা করেন, তাঁদের সঙ্গ এড়িয়ে চলতে হবে। দিনের মধ্যে যে সময়টায় তামাকের প্রতি আসক্তি ছিল, যেমন খাবার পর, বাথরুমে যাবার আগে, সেইসময় সচেতনভাবে অন্য কোনও কাজ করতে হবে। বাড়াতে হবে মনের জোর। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আশ্রয় নিতে হবে বিকল্প ব্যবস্থার। আর একটা বিষয়, ধূমপানের ফলে শরীরে ভাঙন হয়। ধূমপান ছেড়ে দিলে অনেক সময় ওজন বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। সেইক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন, ধূমপান ছেড়ে দিয়ে শ্লথ, ভারী হয়ে গেছি। আগেই বরং ভাল ছিলাম। এই ভাবনাটা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ ধূমপান খুব ক্ষতিকারক। যে কোনওরকম তামাকজাত দ্রব্য শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই এইগুলো থেকে দূরে থাকাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তার ফলে নিজে যেমন সুস্থ থাকা যাবে, তেমন সুস্থ রাখা যাবে সঙ্গে যাঁরা থাকেন, তাঁদের।
আরও পড়ুন-নির্বাচনী আদর্শ আচরণ বিধির মধ্যেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে নোটিশ নির্বাচন কমিশনের
সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে?
সারা পৃথিবীতে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে বছর বছর বহু মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। অনেকেই মারা যান। এই তালিকায় পুরুষের পাশাপাশি আছেন মহিলারাও। আমাদের দেশে মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু, ফুসফুস এবং সাধারণ চিকিৎসকদের সংগঠন বিভিন্ন জনস্থাস্থ্যমূলক সচেতনতা বিষয়ক অনুষ্ঠান, সেমিনারের আয়োজন করছে। গতকাল, ৩১ মে বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবসে এই ধরনের বহু অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। তামাকজাত দ্রব্যের কুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়েছে। সাহায্য নেওয়া হয়েছে গণমাধ্যমের। চিকিৎসকরা প্রকাশ করেছেন নিজেদের ভাবনা। তবে কোনও একটি বিশেষ দিনে নয়, এই প্রক্রিয়া চলে সারা বছর ধরেই। এর ফলে মানুষ এখন আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন।