কুণাল ঘোষ, লন্ডন (মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): আজ, বৃহস্পতিবার লন্ডনের মাটিতে বিশ্ব দরবারে বিকল্প দর্শনের কথা তুলে ধরবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে সেখানে বক্তব্য রাখবেন তিনি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোড়ন পড়ে গিয়েছে পড়ুয়াদের মধ্যে। অক্সফোর্ডের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে বাংলার কথা, বাংলার মানুষের কথা বলবেন বাংলার ঘরের মেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংরক্ষিত আসন বুক হয়ে গিয়েছে আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই। ওয়েটিংয়ের লম্বা লিস্ট। এখন হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে অনলাইনেও যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য শোনা যায়! সব থেকে বড় বিষয়, অসংখ্য পড়ুয়া দেখা করতে চান বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু সময়াভাবে সেই অনুরোধ কতটা রাখা যাবে এখুনি বোঝা যাচ্ছে না। তবে অক্সফোর্ডে বক্তৃতার ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে তৈরি হয়ে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেটি হল যদি কেউ ভুল বুঝে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিংবা তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য কোনওরকম প্রশ্ন করেন, তার উত্তর জবাব দিতে তৈরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এই বিষয়টিকে আদপেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না তিনি। সর্বোপরি এ-বিষয়ে ভাবতেও রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী। তবে কেউ বল বাড়ালে আমি ছক্কা মারব। স্পষ্ট কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee)।
আরও পড়ুন-ডি’ককের ব্যাটে প্রথম জয় নাইটদের
এমনিতেই লন্ডনে ব্যাপক জ্যাম। অক্সফোর্ড পৌঁছতে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় লাগবে। সব মিলিয়ে আজকের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে হইহই ব্যাপার চারিদিকে। লন্ডনের সময় অনুযায়ী আজ বিকেলে ৫টায় (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে দশটা) অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে সমারোহ অনুষ্ঠান শুরু হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও থাকবেন কেলগ কলেজের সভাপতি, অধ্যাপক জোনাথন মিচি এবং কলেজেরই ফেলো এবং বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোগী লর্ড করণ বিলিমরিয়া। এ ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আজ অক্সফোর্ডের বক্তৃতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে উঠে আসবে তাঁর হাত ধরে বদলে যাওয়া বাংলার কথা। ২০১১ সালে বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১৩ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের পিছিয়ে পড়া মানুষকে সামনের সারিতে এনেছেন। মহিলাদের সশক্তিকরণের জন্য আলাদা ভাবে নজর দিয়েছেন। পঞ্চায়েতে থেকে পার্লামেন্টে মহিলাদের সব থেকে বেশি উপস্থিতি তাঁর দলের। বাম আমলে অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়া বাংলাকে নতুন দাঁড় করিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা সত্ত্বেও ৯৪টি সামাজিক প্রকল্প চালু করেছেন, যা বদলে দিয়েছে বাংলার মানুষের জীবনযাপনের মান। শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, আইটি, কর্মসংস্থান— সবক’টি সামাজিক ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের মধ্যে বাংলা এখন এগিয়ে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক-পরিযায়ী শ্রমিক, সকলের জন্য তৈরি করেছেন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুরক্ষা বলয়। পড়ুয়াদের স্মার্টফোন থেকে ল্যাপটপ। কন্যাশ্রী থেকে সবুজসাথী। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে বিনামূল্যে চিকিৎসা। বার্ধক্যভাতা থেকে বিধবাভাতা। এ সবই আজ বাংলার মানুষের জীবনচর্চার অঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের পাহাড় থেকে সাগর। জঙ্গলমহলের আদিবাসী, লোধা, শবরদের জন্য ভাবনা। তাদের জঙ্গলের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। সমাজের মূল স্রোতে এনে বাঁচতে শেখানো। এই সব অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামেদের সৌজন্যে বন্ধ্যা হয়ে যাওয়া বাংলায় এনেছেন শিল্পের জোয়ার। বড় শিল্পের সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পেও এখন এগিয়ে বাংলা। রাজ্যের শিল্প সম্মেলন (বিজিবিএস) এখন রীতিমতো আন্তর্জাতিক মানের ইভেন্ট হয়ে উঠেছে। বাংলা এখন বিনিয়োগের অন্যতম সেরা গন্তব্য। বাংলা আজ, বৃহস্পতিবার টেলিভিশন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখবে তাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অক্সফোর্ড বক্তৃতা শোনার জন্য।