শিকল ভাঙার গান
কালো রাতের গর্জন শুনে, শুধু কাঁদবে? হার মানবে? নাহ্— সে যে শুধু শিউলি ফুল নয়। সীমানা ভেঙে রুখে দাঁড়ায়, ঝড় উঠলে বুক উঁচিয়ে, শিকল খুলে আকাশ ছোঁয়। সে নারী, আজকে আর গৃহকোণে বন্দি নয় সে, স্রোতের মতো বয়ে চলে, কখনও ল্যাবরেটরি তো কখনও ফ্যাশন শোয়ে, কলম হাতে সত্য খোঁজে, নতুন সূর্য নিজেই জ্বালে। সাম্যের লড়াইয়ে আধুনিক নারীরা কোনও অংশে পিছিয়ে নেই— তবুও বেশ কিছু কাজ বা কর্মক্ষেত্র আজও সমাজে ‘পুরুষদের জন্য’ই একথা বলা হয়। ইটস আ ম্যানস জব! কিন্তু নারীর মনের জোর কতটা, সে খোঁজ ওরা রাখে না। সেজন্যই বোধহয় আজকের নারীরা সমাজের বুকে বাঁধা ‘স্টেরিওটাইপ’-এর বাঁধন আলগা করে তথাকথিত ম্যানস জবেও নিজেদের জয়যাত্রা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। তাঁদের মধ্যেই বেশ কিছু অদ্বিতীয়ার গল্প আমরা শুনব।
ঈপ্সিতা চক্রবর্তী
বারে ঢুকে দেখি, আলো ঝলমলে। গ্লাসের ভেতরে চাঁদ জ্বলজ্বলে! বারটেন্ডার হাসে, চোখ টিপে বলে— আজ রাতটা যাবে নেশায় গলে! পান করো, ভুলে যাও যত, এখনই তো জীবন, নেই দ্বিতীয় শত! এই বার বলতেই বোঝায় পুরুষ আধিপত্যের কাহিনি; তার উপর বারটেন্ডারের কথা বললে তো পুরুষ ছাড়া নারীর কথা ভাবাই অসম্ভব। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেই দেখিয়েছেন ঈপ্সিতা চক্রবর্তী।
মদ পরিবেশনের সময় ওরা হাসে না কেন? এই প্রশ্নই প্রথম ঈপ্সিতাকে বারটেন্ডারের বিষয়ে উৎসাহী করে তোলে। তিনি দেখেছিলেন, বারটেন্ডার সবসময় ছেলেরাই হয়। তারপর বিহাইন্ড দ্য বারের হাইজিনের কথা ভেবেই মিক্সোলজির উপর তাঁর আগ্রহ বাড়ে। দেখা করেছিলেন তখনকার কলকাতা পার্ক স্ট্রিটের বোডেগা বারের অ্যাওয়ার্ড উইনিং হেড বারটেন্ডার উত্তম সিংয়ের সঙ্গে; তাঁর কাছেই ঈপ্সিতার হাতে খড়ি। লেট নাইটের ব্যাপারে মায়ের একটু আপত্তি থাকলেও বাবার উৎসাহ কম ছিল না! নিজের সৃজনশীলতা ও বুদ্ধি খাটিয়ে ঈপ্সিতা আজকে কলকাতার স্কিনি মস্ জ্যাজ ক্লাবের হেড মিক্সোলজিস্ট। নামীদামি রেস্টুরেন্টে বারটেন্ডার হিসেবে তিনি এখন ‘ঈপসি হু গেটস ইউ টিপসি’ নামেই রাজ করছেন।
শাতভী বাসু
প্রায় এক দশক আগের কথা, যখন বারটেন্ডার বলতে প্রায় একশো ভাগই পুরুষ-প্রধান ছিল, তখন এই ধরনের অপ্রচলিত পেশায় মেয়েদের কথা উঠলেই সমাজের ভ্রু কুঁচকে যেত! এই ধরনের নিম্নরুচির দৃষ্টিকোণের পরিবর্তন আনতেই সেলিব্রেটি বারটেন্ডার শাতভী বসু— বাসু আধুনিক নারীদের উৎসাহ জুগিয়ে চলেছেন। প্রায় তিন দশক হয়ে গেল অত্যন্ত সাহস এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি বারে মদ পরিবেশন করে আসছেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা বারটেন্ডার। তিনি মনে করেন, সমাজ ব্যবস্থার নামে যে ধরনের স্টিগমার বেড়ি পরিয়ে মেয়েদের স্বাধীনতা ও সৃষ্টিশীলতাকে দমিয়ে রাখা হয়, তার বাইরে মেয়েদের বেরিয়ে আসতে হবে। তবেই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে, আর তারাও নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারবে। একথা মাথায় রেখে তিনি মুম্বইয়ে ১৯৯৭ সালে এসটিআইআর অ্যাকাডেমি অব বারটেন্ডিং প্রতিষ্ঠা করেন।
রিচা কর
নারীদের জন্য একটি অন্তর্বাস ব্র্যান্ড তৈরির ভাবনাটি তাঁর বাবা-মা সহজভাবে নিতে পারেননি। তাঁরা মনে করেছিলেন যে অনলাইনে পোশাক, বিশেষ করে মেয়েদের অন্তর্বাস বিক্রি করা লজ্জাজনক এবং সমাজের লোকেরা তাঁদের মেয়ের পেশা নিয়ে উপহাস করবে। তবে সমস্ত প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে রিচা কর ২০১১ সালে ‘জিভামে’ চালু করেন; নিজের সমস্ত সঞ্চয় এবং বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ধার করা ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে। বিটস পিলানির ছাত্রী জামশেদপুরের রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে রিচার লিঙ্গারি ব্যান্ড আজকে সাফল্যের শীর্ষে রয়েছে। তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্প দেখে বিনিয়োগকারীরা মুগ্ধ হন এবং তাঁর প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন— আজকে জিভামের বাজারমূল্য প্রায় ১৬০০ কোটি টাকার বেশি। এই সাফল্য অনবদ্য; ভারতীয় তথা পৃথিবীর নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তিনি অনুপ্রেরণীয়।
আরও পড়ুন- ‘কুড়িয়ে এনেছি মাথা, ফুলের বদলে- পলাশ ফোটেনি ভাল এ-বছর দোলে’
রূপা চৌধুরী
কুৎসার ছায়া যখন ঘিরে ধরে চারিপাশ, যত অজানা ভয় জমে ওঠে বারোমাস, তবে যেখানে ভাবনার স্ফুলিঙ্গ জ্বলে, সেখানে অন্ধকার আপনিই টলে। সত্যি বলতে, একপ্রকার ভাবনার জোরেই বদলে ফেলেছেন জীবনের অঙ্কটা। অসুস্থ বাবা-মায়ের দেখাশোনা করতে গিয়ে কলকাতার বাঘাযতীনের রূপা চৌধুরীর আর পড়াশোনাটা সম্পূর্ণ হয়নি। সমাজের বুকে বেঁচে থাকার কথা ভেবেই সমস্ত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করেই যোগ দিয়েছিলেন সুইগির ডেলিভারি উইমেন হিসেবে। তবে তিনি জানতেন না তিনিই কলকাতার প্রথম ডেলিভারি উইমেন। বাবা মারা গেলে, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে যোগ দেন ওলা-র বাইক-ট্যাক্সি চালক হিসেবে। এ-ব্যাপারেও তিনিই প্রথম। পরবর্তীতে তিনি রাপিডো এবং উবেরে যোগ দেন। সচরাচর পুরুষশাসিত কাজের জায়গায় তিনি বহুবার বিপদের মোকাবিলা করেছেন, তবুও হার মানেননি। তাঁর এই লড়াই আজকের দিনে বহু নারীর অনুপ্রেরণা।
অভনি সাবড়ে
দল-প্রতি পনেরো জনের রাগবি ইউনিয়ন হোক, বা সাত জনের রাগবি সেভেন্স, কিংবা তেরো জনের রাগবি লিগ, যাই বলি না কেন, প্রায় পাঁচশো গ্রামের ডিম্বাকৃতি বলটি নিয়ে খেলার মাঠে প্রতিপক্ষের ডেরায় হক জমানো মুখের কথা নয়! তার উপর রাগবি খেলবে মেয়েরা, তাও আবার ভারতীয়, সে ছিল ভাবনার বাইরে। সেই বেড়া টপকিয়ে ২০০৯ সালে প্রথম ক্যাপ্টেন হিসেবে ভারতীয় মহিলা রাগবি টিমের দায়িত্ব নিয়েছিলেন অভনি সাবড়ে। খেলেছিলেন প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, থাইল্যান্ডে এশিয়ান উইমেন্স সেভেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ। দর্শনশাস্ত্রের মেধাবী ছাত্রী অভনি বর্তমানে মহারাষ্ট্রের পুণেতে ফ্লেম ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর গবেষণার কাজ করে চলেছেন। তাঁর চর্চার বিষয় ইন্ডিয়ান মোরাল ফিলোজফি, ফুড এথিক্স ও স্পোর্টস ফিলসফি। আজও তিনি তাঁর স্পেয়ার টাইমে খেলাধুলা, কোচিং এবং মেয়েদের মধ্যে রাগবির উৎসাহ বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করেন। তাঁর আদর্শে আজকে ভারতবর্ষে একটি সুন্দর মহিলা রাগবি টিম গড়ে উঠেছে। তাঁকে দেখে বহু মেয়ে আজ উৎসাহিত খেলার মাঠে নজির গড়তে!
অঞ্জলি সাহা
ব্যস্ত শহরের বুকে ব্যস্ত মানুষেরা প্রতিদিন পার্কিং নামে একটি মাথাব্যথার সামনাসামনি হয়ে থাকেন। সামান্য স্পেস পেতে পান থেকে চুন খসার উপক্রম হলেও বাবুদের মেজাজ যায় বিগড়ে; কড়া ডোজে শুনিয়ে দেয় বেশ কয়েকটি কথা।
কোনও কথা কানে না দিয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে পার্কিং অ্যাটেনডেন্ট ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাবুর গাড়ি রাখার জন্য একটু স্পেসের ব্যবস্থা করতে। সচরাচর এ-কাজ ছেলেরাই করে থাকেন। তবে সেই ২০১৫ সাল থেকে কলকাতার ব্যস্ততর পার্ক সার্কাস এলাকায় মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লসের বাইরে এই কাজ করে চলেছেন দুঃসাহসী অঞ্জলি সাহা। সকালে কাজে বেরনোর সময় তিনি নিশ্চিত জানেন যে কাজের জায়গায় কতজনের কত মেজাজ সহ্য করতে হবে তবুও তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে এই কাজ করে চলেছেন। সত্যিই তিনি অনুপমা।
হর্ষিণী কানহেকর
গত দুই দশক ধরে, তাঁর জীবন এক অবিচল সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি, যেখানে হর্ষিণী সমাজের লিঙ্গভিত্তিক বাধাগুলো অতিক্রম করে এবং প্রচলিত ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এগিয়ে গেছেন। দুই দশক আগেও, ভারতের দমকল বিভাগ ছিল সম্পূর্ণরূপে পুরুষদের আধিপত্যে— একটি এমন পেশা যেখানে নারীদের জন্য কোনও জায়গা ছিল না। কিন্তু তারপর, হর্ষিণী কানহেকর পরিবর্তনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠেন, দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় দমকল কর্মীর পোশাক পরিধান করে নিজের দেশকে সেবার সিদ্ধান্ত নেন। জাতীয় দমকল সেবা কলেজে ঐতিহাসিকভাবে তাঁর ভর্তি হওয়ার কথা স্মরণ করে দেশের বহু কন্যা আজ অনেক ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করেছে। তাঁর বাবা-মায়ের অটল সমর্থন চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে কাজ করতে ইচ্ছুক কন্যাদের জন্য এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। প্রথম ভারতীয় মহিলা ফায়ার ফাইটার হিসেবে তাঁর পরিচিতি আমাদের মুগ্ধ করে।
তানিয়া সান্যাল
আগুন যে শুধুই পৃথিবীর বুকে লাগে এমনটা নয়, যদি সে আগুন ওই আকাশে যেখানে বিমান চলাচল করে সেখানে কোনও দুর্ঘটনায় আগুন লাগে, তাহলেও প্রয়োজন দমকল পরিষেবা— চাই ফায়ার ফাইটার। নাহ্ ভুল বললাম, চাই এভিয়েশন ফায়ার ফাইটার। এক্ষেত্রে ভারতীয় নারী তাঁর শক্তির পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তানিয়া সান্যাল তারই এক জলন্ত উদাহরণ : ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা এভিয়েশন ফায়ার ফাইটার। ২০১৮ সালে এয়ারপোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া তাঁকে নিয়োগ করেন। বলা ভাল পুরোপুরি পুরুষশাসিত কর্মক্ষেত্রে তিনিই একমাত্র মহিলা যাকে দেখে অনেক মেয়ে এই ক্ষেত্রে যোগদান করেছে, যদিও সংখ্যাটি এখনও তুলনায় অনেক কম।
ড. সুন্যাইনা সিং
দেশের জন্য কিছু করো, দাদুর এই কথাটিই তাঁর কানে বেজেছিল। মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল দেশসেবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। যা ভাবা সেই মতো লড়াই। অদম্য সাহস ও মনের জোরেই ২০১০ সালে হরিয়ানার ওই ছোট্ট গ্রাম থেকে প্রথম মেয়ে হিসেবে সুন্যাইনা ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগদান করেন। আজকে তিনি একজন ইন্ডিয়ান আর্মির ক্যাপ্টেন। বহু শারীরিক ও মানসিক বাধা এড়িয়ে নিজ লক্ষ্যে স্থির হয়ে এই স্থানে পৌঁছনোর যাত্রাটি সত্যিই মনে রাখার মতো।
শোভনা পুরি
হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁয় যিনি মদ, মানে ওয়াইন পরিবেশন করেন তিনি বারটেন্ডার; কিন্তু যিনি ওয়াইনের গুণাগুণ পরীক্ষা করে সঠিক ওয়াইন নির্বাচন করেন তিনি সোমেলইয়ে। রান্নাঘরের রানি যদিও একটি মেয়ে তবুও হোটেলের শেফ কিংবা সোমেলইয়ে বলতে ছেলেদেরকেই বোঝায়। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তির উপর ভর দিয়ে শোভনা পুরি ওয়াইন টেস্টার হিসেবে আজকে ইন্টারনেট পার্সোনালিটি। তিনি পৃথিবীতে ১১০৬৫ জনের মধ্যে দু’জন ভারতীয় সার্টিফায়েড ওয়াইন অ্যান্ড স্পিরিট এডুকেশন ট্রাস্ট এডুকেটরের একজন। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিতে অনবদ্য কাজের জন্য ‘ফিউচার ৫০ অ্যাওয়ার্ডস’-এ ভূষিত হয়েছেন। তাঁর এই অপ্রচলিত কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য ২০১৯ সালে ফিনিক্স লিডিং লেডি অ্যাওয়ার্ডস প্রাপ্ত ১৫ জন ভারতীয় নারীর মধ্যে একজন।
ঈশিতা মালভিয়া
যখন কেউ একটি বোর্ডের সাহায্যে সমুদ্রের ঢেউয়ের উপর ভেসে বেড়ায়, অর্থাৎ সার্ফিং করার সময় আনন্দের চেয়ে যেটা বেশি করে মাথায় আসে সেটা হল শক্তি, দক্ষতা ও ঝুঁকির কথা। স্বাভাবিকভাবেই এটাও পুরুষের পছন্দের জায়গা। কিন্তু যখন একজন ভারতীয় নারী সার্ফিং করতে করতে এ-দেশের কোস্ট লাইনকে আন্তর্জাতিক সার্ফিং ডেস্টিনেশন বানানোর স্বপ্ন দেখে, তখন একটু হলেও আমাদের ভ্রু কুঁচকে যায়! ভারতবর্ষের প্রথম প্রফেশনাল মহিলা সার্ফার ঈশিতা মালভিয়া তাঁর স্কুলের বন্ধু ও বয়ফ্রেন্ড তুষার পাথিয়ার সঙ্গে সে চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন। কোস্টাল কর্নাটকে নামালোহা নামে একটি ক্যাম্প এবং সাকা সার্ফ নামে একটি ক্লাব তিনি পরিচালনা করেন। ২০১৯ সালে এই অভিনব দুঃসাহসী কাজের জন্য তিনি বিখ্যাত ‘ফোর্বস ৩০ আন্ডার ৩০’ প্রতিভার তালিকা ভুক্ত হন। কোনও সন্দেহই নেই তিনি আজকে অদ্বিতীয়া।
ডিজে ক্যারি অরোরা
তখন ১৯৯৭ সাল, ভারতবর্ষে এমন কোনও পরিচিত ডিস্কো জকি স্কুল ছিল না, তখন মাত্র কুড়ি বছর বয়সে ক্যারি অরোরা ডিজে শেখার জন্য দিল্লির একটি আদর্শ সাউন্ড অ্যান্ড লাইট কোম্পানিতে ৩০০ টাকা মজুরিতে সাউন্ড লেবার হিসেবে কাজে যোগ দেন। সেখানেই আয়ত্ত করেছিলেন পার্টি, মিউজিক, ডান্স হুল্লোড়ের ডিজিটাল কানেকশন বিদ্যা। ব্যস নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন একজন প্রফেশনাল ডিস্কো জকি হিসেবে, পাশাপাশি তিনি লিরিসিস্ট ও মিউজিক কম্পোজার হিসেবেও নিজের পরিচিতি প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০১৪ সালে লিমকা বুক অব রেকর্ডস তাঁকে ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা ডিজের খেতাব দেয়। তাঁকে দেখে বহু মেয়ে এই কাজে যোগ দিয়েছেন। আজকের ভারতে ডিজ বরখা কউল, ডিজে গৌরী, ডিজে লহর, ডিজে অর্লিন, ও ডিজে রিয়াহর মতো প্রতিভারা বাজার কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।
মেহবিশ মুস্তাক
আজকের দিনে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়ায় মেয়েদের আধিপত্য বিস্তার অনেকটাই প্রশস্ত। তবে আজ থেকে একযুগ আগে মেহবিশ মুস্তাকের সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কৃতিত্ব আজও মেয়েদের এগিয়ে চলার উৎসাহ জুগিয়ে আসছে। প্রথম কাশ্মীরি মহিলা হিসেবে তিনি সেদিন ‘ডায়াল কাশ্মীর’ অ্যাপ বানিয়েছিলেন, কাশ্মীরিদের দৈনন্দিন জীবনের নানা পরিষেবা সুলভ করে তুলতে। দ্য হিন্দু পত্রিকার আহমেদ আলি ফায়েজ তাঁর এই অ্যাপটিকে অটোমোবাইল সার্ভিস, হোটেল, ডাক্তার, হাউসবোট, এনজিও, রিয়েল এস্টেট, পোস্টাল কোড প্রভৃতি তথ্যের খাজাঞ্চি খানা বলে প্রশংসা করেছেন। তাঁর এই কাজের জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে নারীশক্তি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় তাঁকে।
তবে এই তালিকা এখানেই শেষ নয়— এ-তালিকা দীর্ঘতর। ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা প্রাইভেট ডিটেকটিভ রজনী পণ্ডিত হোক কিংবা প্রেমা রামাপ্পুর মতো বাস ড্রাইভার; ভারতী সিংয়ের মতো স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান, কিংবা শ্রাবণী পাওয়ারের সেফ হ্যান্ডস থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মহিলা সিকিউরিটি গার্ডের দল; বাইকার্নি অ্যাসোসিয়েশনের মহিলা বাইকার হোক কিংবা ধূপগুড়ির চম্পার মতো গজ ব্যান্ডেজ প্রস্তুতকারক, প্রত্যেকেই তাঁদের চেনা গণ্ডির বাইরে পা রেখেছেন। তাঁরা এই সভ্যতার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।