অলোক সরকার: বাইরে তুমুল চিৎকার। প্রেসবক্সে থেকে দেখা না গেলেও বোঝা গেল, প্লেয়াররা হোটেলে ফিরছেন। ধুর, প্লেয়ার বলে কি হবে, আসলে তো বিরাট কোহলি। দু’দিন ধরে তিনিই শহরের হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা। যার টানে পিলপিল করে মানুষ এসে ভিড় করেছেন ইডেন চত্বরে।
এখন ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা। চোখের সামনে সাদা পলিথিনের চাদরে মোড়া গোটা মাঠ। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। আর তারপরও বি ব্লকের শেডের নিচে লোকের ভিড়। বিরাট ততক্ষণে বেরিয়ে গিয়েছেন। পলিথিন সরিয়ে আবার প্র্যাকটিস শুরু হওয়াটা অলীক কল্পনা। তবু ওঁরা আছেন। যতক্ষণ ইডেন, ততক্ষণই বিরাট-সান্নিধ্য। কে আর মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চায়!
দেখে মনে হচ্ছিল আরসিবিই কেকেআর! আর কেকেআর আরসিবি। হোম টিম মাঠের ডানদিকে জাঁকিয়ে গা ঘামাল, কিন্তু মানুষের চোখ আরেক প্রান্তে। বলা উচিত বিরাটের দিকে। যখন ইডেনে ঢুকলেন, চিৎকারে কান পাতা দায়। যখন বেরোলেন সেই একইরকম চিৎকার। সিএসকে ম্যাচে এমএস ধোনির জন্য এই পাগলামি দেখেছে ইডেন। হয়তো আবার দেখবে কয়েকদিন পর।
বিকেলে আরসিবি প্র্যাকটিসে নেটে বিধ্বংসী মেজাজে দেখা গেল কিং কোহলিকে। নির্দয় ছিলেন স্পিনারদের উপর। একেকটা বল ব্যাট থেকে উড়ে গেল মাঠের অন্য প্রান্তে। তবে মারমার করে ব্যাট করেই ড্রেসিংরুমে চলে গেলেন বিরাট। তারপর আর বিরাট শো হয়নি বৃষ্টির জন্য। ভগ্ন মনোরথ হয়ে লোকজন বাড়ি ফিরলেন শনিবারের মেগা উদ্বোধনে চোখ রেখে।
নাইটদের জন্য এখন বরুণই তুরুপের তাস। আরসিবি কোচ বলে গেলেন, ছেলেটা ভাল বল করছে। ওর বোলিং দেখলাম টিভিতে। অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে এই ম্যাচে নামবে। তবে বরুণ এইসব গেমম্যানশিপকে পাত্তা দিচ্ছেন না। সোজা বলে দিলেন, এটা নতুন টুর্নামেন্ট। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ব্যাগেজ নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন না। ওটা এখন অতীত। এখানে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।
আরও পড়ুন-সুনীতার প্রত্যাবর্তন, সঙ্গে কিছু প্রশ্ন
মুশকিল হচ্ছে যে, রাতের ইডেনে সাদা পলিথিনের চাদর মাঝে মাঝে হাওয়া অফিসের বুলেটিন মনে করিয়ে দিচ্ছে। শনিবার নাকি দক্ষিণবঙ্গে জোর ঝড়বৃষ্টি হবে। মন্দের ভাল এটাই যে, একদম কলকাতাতেই যে বৃষ্টি হবে এমন কথা বলা হচ্ছে না। যেখানে খুশি হতে পরে। কিন্তু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় হবেই। শুক্রবার রাতের বৃষ্টি সিঁদুরে মেঘের মতোই লাগছে।
শ্রেয়া ঘোষাল, দিশা পাটনি, বলিউডের বড় বড় নাম। সবার উপরে শাহরুখ খান। আধ ঘণ্টার ফাটাফাটি শো। কিন্তু বৃষ্টির মতিগতি নিয়ে প্রবল সন্দিহান মানুষজন। যে যাকে পারছেন জানতে চাইছেন, দাদা, কি খবর? কাল খেলা হবে তো? রাতের দিকে বৃষ্টির তোড় আরও বাড়ল। সেই সঙ্গে ম্যাচ নিয়ে বাড়ল আরও আশঙ্কা।
এসবের মধ্যে আবার কেকেআরের লখনউ ম্যাচ নিয়ে নাকি জটিলতা শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে কেকেআর গুয়াহাটিতে হোম ম্যাচ খেলতে চাইছে না। বরুণও বলছিলেন, খেলা সরে গিয়েছে বলে তাঁর কাছে খবর নেই। সিএবি সভাপতি এদিন বললেন, লখনউ ম্যাচ কি হবে বোর্ড জানাবে। আমাদের বক্তব্য নেই। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ শাহরুখ খান শহরে পা রেখেছেন। রাতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শিল্পীদের নিয়ে ইডেনে একটি রিহার্সালের ব্যাপার ছিল। যা বৃষ্টিতে বাতিল হয়েছে।
ধুস, যা হওয়ার তখন হবে। এখন ঘড়িতে সাড়ে সাতটা। জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে, ওয়েলকাম টু ইডেন গার্ডেন্স কলকাতা। শনিবাসরীয় রাতে এভাবেই হাত বাড়িয়ে দেবে ক্রিকেটের নন্দনকানন। কিন্তু আকাশের কি মতিগতি সেটাই তো বোঝা যাচ্ছে না।