জীবনকে যাপন করার টনিক

‘টনিক’ রেডি ছিল গত বছরের গোড়াতেই। মুক্তির মাহেন্দ্রক্ষণ এল এ বছরের শেষ লগ্নে। কিন্তু ওই যে আপ্ত বাক্য, যা হয় ভালর জন্যই হয়, তা অভিজিৎ সেন পরিচালিত ও পরান বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেব অভিনীত ‘টনিক’-এর জন্য ভীষণ প্রযোজ্য। কোভিড-কালে মানুষের জীবন যেভাবে থমকেছে তাকে চাঙ্গা করতে ‘টনিক’ কাজে দেবে দুর্দান্ত, এমনটাই আশাবাদী সকলে। জানালেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

পরিচালক অভিজিৎ সেন নির্মিত ছোট- বড় সবার জন্য ‘টনিক’ মুক্তি পাচ্ছে আজ। সান্তাক্লজ শহরে ঢোকার আগেই বড়দিনের বড় উপহার হাতে পেয়ে যাচ্ছেন সকলে আর তাই আশা করা যাচ্ছে ‘টনিক’ নির্মাতাদের আবেদন বিফলে যাবে না, “সকলে সিনেমা হল-এ এসে ‘টনিক’ দেখে যান।”এমনিতেই ফেস্টিভ মুড অন। সারা রাজ্যেই বছর শেষের ছুটির আমেজ। তার ওপর পুজোয় ‘গোলন্দাজ’-এর পর নির্দিষ্ট কোনও সিনেমা নিয়ে এমন হাইপ ফের ‘টনিক’কে কেন্দ্র করে। সৌজন্যে পরান বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেব স্বয়ং। দু’জনেই একই বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন, “নো প্যানিক, ওনলি টনিক!”

আশি বছরের জলধর সেন ওরফে পরান বন্দ্যোপাধ্যায় ছেলের সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে পালিয়েছেন! জীবনটা এবার তিনি নিজের শর্তে উপভোগ করবেন, ঝুঁকি নিতে হলেও তা নেবেন নিজের জন্যই। আর তাই শেকল কেটে দাঁড়ের পাখি ফুড়ুৎ। তবে একা নয়! সফরসঙ্গী স্ত্রী (শকুন্তলা বড়ুয়া) ও টনিক (দেব)! জলধরকে উসকেছে, উৎসাহ দিয়েছে টনিকই আর এই পালানোর মূল উদ্যোক্তাও সে। জলধর তার দ্বারা প্রভাবিত। কারণ সন্তানের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তের মতানৈক্য তাকে জেদি করে তুলেছিল। “এমন নয় যে সন্তান অত্যাচারী বা নির্দয়, বাবা-মাকে সে ভালই বাসে কিন্তু সে বাস্তব ঘেঁষা, হিসেব কষে চলা সাবধানী মানুষ। জলধর যে বয়সে পৌঁছেছে সেখানে তার আবার এত হিসেবের প্রয়োজন পড়ে না কারণ তার হারানোর আর কিছুই নেই, বরং ঝুলি যেটুকু খালি আছে তা পূর্ণ করার প্রচেষ্টায় সে তৎপর। ছেলের শাসন-বারণ তাই অসহ্য তার কাছে কারণ সেসব তার ইচ্ছের পরিপন্থী। এক অর্থে ‘টনিক’ তাই ইচ্ছেপূরণের গল্প আর টনিক চরিত্রটা সে ইচ্ছে পূরণের কান্ডারি”, জানালেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে জানালেন, “ছবির শুটিং হয়েছিল ২০১৯ এর ডিসেম্বরে, ২০২০-র মার্চের মধ্যে সব কমপ্লিট, এমনকী মে’তে রিলিজ ডেটও ঠিক করা ছিল, কিন্তু তার পরেই ওই মারণ কাণ্ড কোভিডের, তাই সব বন্ধ। এ বছর পুজোতেও রিলিজ ভাবা হয়েছিল, সেও হল না, ফাইনালি এই ২৪ ডিসেম্বরে।”
ছবির পরিচালক অভিজিৎ সেন এবং দেব কথা বলতে বসেছিলেন। তাঁদেরও প্রচুর স্মৃতি এই নিয়ে। কিন্তু শেষ অবধি দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারার আনন্দটাই আলাদা। ট্রেলার রিলিজ হতেই বেশ সাড়া মিলেছিল। ছবির বিষয়, দেব-পরানের বোঝাপড়া, অভিনয়, ছবির ডায়ালগ সবই ঝকঝকে, তরতাজা ও প্রাসঙ্গিক। অভিজিৎ সেন স্বাভাবিক ভাবেই বেশ উত্তেজিত, একই সঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘টনিক ইচ্ছেপূরণের গল্প তো অবশ্যই। সেই সঙ্গে গল্পের প্রয়োজনেই আরও অনেক চরিত্র এসেছে। সম্পর্কগুলোর বোঝাপড়া, পারিবারিক চেনা ড্রামা, টানাপোড়েন, হাসি-মজা, এসবের বাইরেও এই ছবি কোথাও একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে যায়, অন্য বার্তা দেয় সেটা দর্শক হলে গিয়ে ছবিটা দেখলেই বুঝতে পারবেন। এমনকী আবেগের ওঠা-পড়াও সময়ে সময়ে এমন স্তরে পৌঁছেছিল যে দেব-পরানদা-শকুন্তলাদিকে কাট বলা যায়নি। ওরাও থামেনি, পারেনি আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে। আমরা যারা সেটে, সেই মুহূর্তে অজান্তে আমাদের চোখেও জল!” কথাটা সমর্থন করে দেব জানান, “ছবিটা সত্যিই এক অন্য আবেগকে উসকে দেয়। আমাদের ভীষণ চেনা সেগুলো, হয়তো রোজই ফেস করি কিংবা হ্যান্ডেল করি, তাই কোথাও একটা ধাক্কা দেয় এসে। তবে আমি অন্য আর একটা কথাও বলতে চাই। এটা একেবারেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমার, যে ধরনের শুটিং শিডিউলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের তা আমাকে ‘চাঁদের পাহাড়’-এর কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছিল বারবার। বলা যায় আরও কঠিন কারণ আমার সঙ্গে প্রতিটা মুভমেন্ট-এ এমন একজন অভিনেতা ছিলেন, যাঁর বয়স আশি আর তাঁর সেফটি-সিকিউরিটির কথা সারাক্ষণ মাথায় রাখতে হচ্ছিল। শুধু এটুকু বলব, হ্যাটস অফ পরানদা। সিনেমার প্রতি, অভিনয়ের প্রতি কতটা ডেডিকেশন থাকলে মানুষ এই এজ-এ এসেও এতটা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে পারে, তা আমরা ওঁর কাছ থেকে রোজ শিখেছি। এই ছবিটা ওঁকে ছাড়া হত না।” একই উচ্ছ্বাস পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও দেব সম্পর্কে! নির্দ্বিধায় বললেন, “দেব শুধু পর্দার টনিক নয়, বাস্তবেও ও টনিক। এই যে ছবিতে আমি এত কাণ্ডকারখানা করেছি, বেশিরভাগটাই সম্ভব হয়েছে ওর উৎসাহে আর উদ্দীপনায়। অসম্ভব এনার্জেটিক ছেলে। ভীষণ বুদ্ধিমানও। খুব ভাল বোঝে কোন কাজটা কেন করছে, কতটা করবে, কীভাবে করবে। আমি অনেক সময় অনেক কিছু করতে গিয়ে অধৈর্য হয়ে এমনকী পরিচালক, প্রযোজকের ওপর রাগ-অভিমান করেছি কিন্তু ও ঠিক ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলেছে। ‘টনিক’ করতে গিয়ে অভিনেতা দেবকে নিজের সন্তানের মতো করে পাওয়াটা আমার বাড়তি পাওনা।”

আরও পড়ুন-Gangasagar Mela: সাগরমেলা অনলাইনে পুজো, মিলবে প্রসাদও

ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে অতনু রায়চৌধুরী এবং প্রণব কুমার গুহ। সহযোগী প্রযোজকের ভূমিকায় রয়েছেন দেব নিজে। দেব-পরান বন্দ্যোপাধ্যায়-শকুন্তলা বড়ুয়াকে নিয়ে মূল গল্প এগোলেও ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আরও যাঁরা আছেন, তাঁরা হলেন সুজন মুখোপাধ্যায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, রজতাভ দত্ত, বিশ্বনাথ বসু। বিশ্বনাথ জানালেন, ‘‘টনিকে আমার চরিত্রের নাম হচ্ছে গৌরাঙ্গ, যে একজন ক্যাটারার। জলধর সেনের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে ওই বাড়িতে তার আসা কিন্তু ক্যাটারিং-এর চেয়েও তার সে বাড়ির পরিচারিকার প্রতি বাড়তি উৎসাহ তৈরি হয়ে যায়। মোটের ওপর মজার চরিত্র।’’ কনীনিকা বললেন, “আমার চরিত্রটা ছোটই, পরানদার ছেলের বউয়ের চরিত্র। স্কুল টিচার, একটু আত্মকেন্দ্রিক গোছের। সাংসারিক নানা বিষয়ে স্বামী (সুজন মুখোপাধ্যায়), শ্বশুর, শাশুড়ির সঙ্গে খটামটি লাগে। এই রকম। আসলে অভিজিৎদা আমার এতই প্রিয় একজন পরিচালক যে একবার ফোন করতেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।” ছবিতে মিউজিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ‘টনিক’-এর মিউজিক ডিরেক্টর জিৎ গাঙ্গুলি, যাঁর ওপর অগাধ ভরসা দেবের। আর কে না জানে টলিউড ইন্ডাস্ট্রির অগাধ ভরসা যাঁর ওপর তিনি খোদ দেব। আরও একটা হিট ছবির অপেক্ষায় তাই সবাই।

Latest article