দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন
অঞ্জন চৌধুরীর ‘শত্রু’। মুক্তি পেয়েছিল আটের দশকে। রঞ্জিত মল্লিক ছিলেন রাগী পুলিশ অফিসারের ভূমিকায়। অসীম সাহসিকতায় করেছিলেন দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন। সারা বাংলায় ঝড় তুলেছিল সাদাকালো ছবিটি। সেই ছবির গন্ধ কিছুটা হলেও পাওয়া গেল সদ্য সামনে আসা ‘প্রধান’ (Pradhan) ছবির ট্রেলারে। পটভূমি গ্রাম। এখানেও রয়েছেন একজন সৎ পুলিশ অফিসার। যিনি অসহায়ের সহায় এবং দুষ্টের ত্রাস। মিল বলতে এইটুকুই। দুটি ছবি স্বতন্ত্র। গল্প এগিয়েছে নিজের নিজের গতিতে। প্রথমটি সকলের জানা। দ্বিতীয়টি জানার অপেক্ষায়।
অ্যাকশন এবং ইমোশনের ককটেল
‘প্রধান’ ছবির প্রধান চরিত্রে বাংলার সুপারস্টার দেব। পর্দায় তাঁর নাম দীপক প্রধান। পুলিশ অফিসার। এই প্রথম তাঁকে দেখা যাবে খাকি পোশাকে। সুপারস্টার তকমা ঝেড়ে ফেলে বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অভিনয় করছেন অন্য ধরনের ছবিতে। ফুটিয়ে তুলছেন নানা রকমের চরিত্র। ডুব দিয়েছেন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। তবে আবারও তাঁকে দেখা যাবে পুরোনো মেজাজে। লার্জার দ্যান লাইফ অবতারে। পরিপূর্ণ মশালা ছবি ‘প্রধান’। অ্যাকশন এবং ইমোশনের ককটেল।
দুই প্রধান-এর জোর টক্কর
ট্রেলার ইতিমধ্যেই উচ্চপ্রশংসিত। দেখা যাচ্ছে, সদ্য বিয়ে করেছেন দেব। বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে পেতেছেন সুখের সংসার। নায়িকার ভূমিকায় রয়েছেন সৌমিতৃষা। ছোটপর্দার পরিচিত মুখ। প্রথমবার মুখ দেখাবেন বড় পর্দায়। তাঁর চোখেমুখে রয়েছে অদ্ভুত সারল্য। দেবের সঙ্গে বেশ মানানসই। তবে সবকিছু এগোয় না স্বাভাবিক গতিতে। ছবিতে আছেন একজন খলনায়ক। নাম জটিলেশ্বর। মিছরির ছুরি। এই চরিত্র অভিনয় করেছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। তিনিও প্রধান (Pradhan)। তবে পদে। গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি। ক্ষমতার জোরে সবকিছু মুঠোয় পুরতে চান। তিনি পদে প্রধান হলেও বিপদে প্রধান দেব। ছবিতে দেখা যাবে দুই প্রধান-এর টক্কর।
ধর্মপুরে অধর্মের আখড়া
দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন পরান বন্দোপাধ্যায় এবং মমতাশঙ্কর। তাঁরা বৃদ্ধ দম্পতি। অসহায়। সমস্যা-জর্জরিত। ছেলে সরে গেছে দূরে। বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ বয়সে দুজন নিজেদের মতো করে জীবন কাটানোর পরিকল্পনা করেছেন। ঠাঁই নিয়েছেন ধর্মপুর গ্রামে। কিন্তু সেখানেও দেখা মেলে না শান্তির। কারণ ধর্মপুরে রয়েছে অধর্মের আখড়া। ফলে তৈরি হয় জটিলতা। ঘটনার ঘনঘটা। তাঁদের জীবনে পরিত্রাতা হয়ে দাঁড়ান দেব। বুকে বল পান বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।
অন্যান্য চরিত্রে
ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সোহিনী সেনগুপ্ত, খরাজ মুখোপাধ্যায়, কাঞ্চন মল্লিক, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, বিশ্বনাথ বসু-সহ টলিপাড়ার একঝাঁক তারকা। একটি বিশেষ চরিত্রে আছেন সোহম চক্রবর্তী। এখানে তিনিও পুলিশ অফিসার। অনেকটা ‘শত্রু’র চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর মতো। চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন শুভদীপ দাস। সংগীত পরিচালনায় শান্তনু মৈত্র, অনুপম রায় ও রথীজিৎ। গোপী ভগৎ-এর চিত্রগ্রহণে সম্পাদনা করেছেন সুজন দত্ত রায়। প্রযোজনা করেছেন অতনু রায়চৌধুরী, প্রণবকুমার গুহ এবং দেব অধিকারী।
আরও পড়ুন-সংসদে নিরাপত্তার ব্যর্থতায় এবার কোণঠাসা কেন্দ্র, প্রশ্ন তোলা মাত্রই সাসপেন্ড ডেরেক-সহ বিরোধীরা
আবারও ত্র্যহস্পর্শ
ছবির পরিচালক অভিজিৎ সেন। দেবের সঙ্গে জুটি বেঁধে এর আগে তিনি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ‘টনিক’ ও ‘প্রজাপতি’। সাফল্য পেয়েছিল দুটি ছবিই। বিশেষত প্রথমটা। ‘টনিক’-এ ছিলেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ আবারও দেব-পরান-অভিজিতের ত্র্যহস্পর্শ। আরও এক ম্যাজিকের অপেক্ষা। আশায় দিন গুনছেন দর্শকরা। তবে বক্স অফিসের বৈতরণী পেরোনো দেবের পক্ষে খুব সহজ হবে কি?
শাহরুখের সঙ্গে লড়াই
পর্দায় অনির্বাণ চক্রবর্তীর সঙ্গে লড়াই। তবে বক্স অফিসের যুদ্ধে দেবের লড়াই খোদ শাহরুখ খানের সঙ্গে। আবারও। বছরের গোড়ায়, বেশ কয়েক বছর পর বড় পর্দায় ফিরছেন বলিউড বাদশাহ। ‘পাঠান’ ছবির মাধ্যমে। ছবিটা নিয়ে গোটা দেশের মতো বাংলাতেও উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল। সেই সময় ‘পাঠান’ ছবির প্রযোজনা সংস্থা নিয়েছিলেন নো শো শেয়ারিং পলিসি। তার প্রকোপে পড়তে হয়েছিল বাংলা সিনেমাকে। তাঁরা জানিয়েছিলেন, যে সকল সিঙ্গল স্ক্রিনে শাহরুখের ছবি চলবে, সেখানে বাংলা অথবা অন্য কোনও সিনেমা চালানো যাবে না। হল মালিক থেকে প্রযোজক, হাত পড়েছিল সবার মাথায়, কপালে পড়েছিল চিন্তার ভাঁজ। সেইসময় বড় রকমের চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন দেব। বুক ফুলিয়ে বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে নিজের ছবি রিলিজ করেছিলেন। শাহরুখের সঙ্গে জোর লড়াইয়ে নেমে পেয়েছিলেন আশ্চর্য সাফল্য। দিয়েছিলেন টানা হাউসফুল।
আশাবাদী দেব
‘প্রধান’ (Pradhan) মুক্তি পাবে ২২ ডিসেম্বর। আরও এক উৎসবের মরশুমে। বড়দিনের আগে। প্রায় একই সময় মুক্তি পাবে শাহরুখ খানের ‘ডাঙ্কি’। দুই সুপারস্টার মুখিয়ে আছেন বছরের তৃতীয় হিটের জন্য। আবারও কঠিন লড়াই। জেনেবুঝেই মাঠে নেমেছেন দেব। ভয়ডরহীন তিনি। চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন। নেন। একবার নয়, বারবার। নিজের ছবি নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। জানেন, সামনে যত বড় তারকাই আসুন না কেন, বাংলার মাটি ঘরের ছেলেকে শূন্য হাতে ফেরাবে না।