ভালবাসার মানুষটি চিরতরে অন্তর্ধান হয়ে গেলে স্মৃতিসত্তাগুলো কুরে কুরে খায়। অদ্ভুত এক অনুভূতির স্পর্শে বিক্ষিপ্ত হয় অন্তরসত্তা। ভোলা যায় না সে-সব। অথচ জীবন থেমেও থাকে না। তেমনই মিতা দাসপুরকায়স্থ অশ্রু লুকিয়ে ফিরে এসেছেন স্বাভাবিকতায়। নিজেকে মেলে ধরেছেন দুঃসাধ্য বন্ধুর পথে। যদিও এ এক দুঃসাহসিক অভিযান। তারই পরম্পরায় তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘তোমাকে বলি’ এক আর্তি। এক নিবেদন। নিজেকে মেলে ধরা। দীর্ঘ দিনের সাহিত্যকর্মী মিতা সহজ কথা বেশ সহজেই বলতে পারেন। কোনও দ্বিত্ব সত্তায় বিশ্বাসী নন। যদিও সে-এক গোপন পরিণাম। উল্লেখিত কবিতাগুলিতে বারেবারেই প্রমাণ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন-মার্কিন আইটি কোম্পানিতে এক ধাক্কায় ১৩০০ জন ছাঁটাই
১৫০ টাকা দামের এই বই ৬০টি কবিতায় যেন একটি বর্ণিল মালা। সেখানে কখনও রাগ। কখনও বিরহ। কখনও অভিমান। প্রচ্ছদে কালো রঙের ক্যানভাসে একটা সাদা ফুল যেন বিরহের স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলছে। ‘তোমার উদ্যান কাঙ্ক্ষিত ফলফুলে সুশোভিত/ আঁচল বিছিয়েছি তোমায় নিবেদনে অভিমানী/ মাটি অশ্রুধারা শুষে হোক উর্বরা আর বিকশিত/ দায়িত্ব শেষে গোধূলি লগ্নে আবার ডাকবে জানি।’
দু-জনের প্রয়াসে উদ্যান গড়ে উঠেছিল। আজ মূল স্থপতি তো পরপারে। বিরহযন্ত্রণার মধ্যে শাশ্বত সান্ত্বনার বাণী। প্রথম তিনটি কবিতা উনিশের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে। ‘…আজকাল ভাষা জননী আর মা যেন একান্তে/ প্রৌঢ় মা আত্মসমর্পণ করে সন্তান সিদ্ধান্তে/ মাতৃভাষা আজ বিকৃত/ আত্মবিক্রিত, সত্বাহারা/ সত্তাহীন, পরনির্ভর, বেসাহারা।’ (জননী)। নানা অপসংস্কৃতির থাবায় পিষ্ট এই ভাষা নব প্রজন্মের কাছে অবহেলিত। ‘কৃষ্ণচূড়া’ কবিতায় ‘…মে মাসে তোমার আবেদন/ তুমি চেতনা বিলাও— মাতৃভাষার চেতনা/ নয়তো সারা বছর কে বা জানে বাংলার দ্যোতনা।’ ঝরে পড়ে আক্ষেপের সুর। প্রিয়জনকে স্মরণ করে নিবেদন, ‘তোমার স্মরণ ভরে আছে/ স্মৃতির শহর কানাগলি পূর্ণ করেছে/ প্রতিটি পর্ব জীবনের হিসাব করে/ তুমুল তর্ক বৃষ্টি আর ডুব সাঁতারে।’ বিরহ ও ভালবাসার যুদ্ধে কবিতাই আমাদের আশ্রয়। নিজের একাকিত্বকে সঙ্গ দিয়ে এক সহসাথীর বিকল্প হয়ে ওঠে কবিতা। নির্ভার করে তুলে জীবনের জটিলতা। প্রকাশক ‘নতুন দিগন্ত প্রকাশনী’র এই প্রয়াস পাঠকদের সমৃদ্ধ করবে। ঝকঝকে তকতকে নির্ভুল ছাপায় প্রকাশিত কবিতাগুলি পাঠককে সহজেই আকর্ষণও করবে।