প্রতিবেদন : বহু জটিলতা কাটিয়ে রবিবার এসএসসির (SSC) নবম-দশম শ্রেণির নিয়োগের জন্য পরীক্ষা। আদালতের নির্দেশ মেনেই পরীক্ষা নিচ্ছে এসএসসি। এই বছর নবম-দশমের জন্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জন। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা পরিচালনা করতে বদ্ধপরিকর কমিশন। ইতিমধ্যেই কমিশনের তরফে যেমন বজ্র আঁটুনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তেমন প্রশাসনও তৈরি রয়েছে কোমর বেঁধে।
পরীক্ষার একদিন আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিরাপত্তার বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। প্রশ্ন ফাঁসের চক্রান্ত রুখতে এবার আরও কড়া স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)। এদিন সিদ্ধার্থবাবু জানান, প্রশ্নপত্রে এক ধরনের কিউ আর কোড থাকবে। এর ফলে কেউ প্রশ্নপত্রের ছবি তুলতে চাইলে তা সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলবে এসএসসি। সকল পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করানোর আগে ভাল করে চেক করা হবে। মহিলা পরীক্ষার্থীদের জন্য একটা এনক্লোজার থাকবে। পরীক্ষার্থীরা একমাত্র অ্যাডমিট কার্ড এবং পেন নিয়ে প্রবেশ করবেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। তবে আমরা সকল পরীক্ষার্থীর জন্য পেনের ব্যবস্থা রেখেছি। ফলে যদি কেউ পেন না-নিয়ে আসেন, তাতেও সমস্যা হবে না। প্রশ্নপত্রের মধ্যে নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা থাকবে। যদি কেউ প্রশ্ন ফাঁস করার চেষ্টা করেন, তাহলে তিনি কে, তা আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই জানতে পারব। সব পরীক্ষাকেন্দ্রই স্পর্শকাতর।
দুপুর ১২টা থেকে শুরু হবে পরীক্ষা। সকাল ১০টা থেকে সকল পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। পৌনে ১২টা নাগাদ প্রশ্নপত্র বিতরণ শুরু হবে। ১২টার সময় মুখবন্ধ খামে পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র এবং ওএমআর শিট দুটোই একসঙ্গে হাতে পাবেন। এই উত্তরপত্র পূরণ করার ক্ষেত্রেও সজাগ থাকার কথা বলেছেন এসএসসি চেয়ারম্যান। উত্তরপত্রে নিজের নাম, রোল নম্বর লিখবেন পরীক্ষার্থীরা। এক থেকে পাঁচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি পূরণ না-করেন, তাঁর উত্তরপত্র দেখা হবে না৷ বাতিল করে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন- ছাব্বিশের পর বিজেপিকে দূরবিনেও খুঁজে পাওয়া যাবে না : মোশারফ
জানা গিয়েছে, হেড ইনচার্জের ঘর পর্যন্ত মোবাইল নিয়ে ফোন যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হবে। তার নম্বর দেওয়া হবে ওয়েবসাইটে। পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর দেড়টায়৷ তবে বিশেষভাবে সক্ষম বা স্ট্রাইব নিয়ে যাঁরা পরীক্ষা দেবেন, তাঁদের পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ২টোয়। নিজের ফটো আইডি কার্ড ছাড়া কোনও কিছু নিয়ে যাওয়া যাবে না। অ্যাডমিট কার্ডে ছবি বা স্বাক্ষরে সমস্যা থাকলে নিজের ফটো আইডির একটি অ্যাটেস্টেড জেরক্স কপি নিয়ে যাবেন। সেটা পরীক্ষা কেন্দ্রে জমা থাকবে।
পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড বাধ্যতামূলক। প্রাথমিক তল্লাশির পরই পরীক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন। স্বচ্ছ পেন, স্বচ্ছ জলের বোতল, ঘড়ি, ফটো আইডি কার্ড সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢোকা যাবে। এদিকে, প্রশাসনও যথেষ্ট সজাগ এই পরীক্ষা নিয়ে। মুখ্যসচিব ইতিমধ্যেই বৈঠক সেরেছেন। প্রত্যেকটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছতে কোনও রকম সমস্যা যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা আরও বাড়াতেও বলা হয়েছে। কোনও পরীক্ষার্থী যদি সমস্যায় পড়েন তাহলে তাঁদের তৎক্ষণাৎ নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও এসএসসি-র তরফে জানানো হয়েছে, অতি-বৃষ্টিতে কোথাও সেতু ভেঙে পড়লে বা জল জমলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে হবে। জঙ্গলমহল এলাকায় হাতির হামলা থেকে বাঁচিয়ে পরীক্ষার্থীদের সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশের হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়াও পরীক্ষা কেন্দ্রে বেশ কিছু অ্যাম্বুল্যান্স রাখার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে, এসএসসির মতো এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাকে নষ্ট করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে গদ্দার অধিকারী। একবার প্রশ্নপত্র ফাঁস, একবার প্রশ্নপত্র বিক্রি— ইত্যাদি নিয়ে নানান জল্পনা ছড়াচ্ছে সে। পরীক্ষা শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে ফেক খবর ছড়াতে গিয়ে নিজেই বিপাকে পড়েছে বিরোধী দলনেতা। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিয়ে অরিন্দম পাল নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক থেকে প্রশ্ন বিক্রি নিয়ে মিথ্যে পোস্ট ছড়াতে থাকে। এরপরেই তদন্তে নেমে পুলিশ দেখতে পায় ওই ব্যক্তি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার বাসিন্দা। শুধু তাই নয় সে সক্রিয়ভাবে বিজেপি কর্মী এবং গদ্দারের ঘনিষ্ঠ। ইতিমধ্যেই তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে আর কোন কোন মাথা জড়িত রয়েছে তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে তদন্তকারী দল।
তৈরি রয়েছে পুলিশ
জয়েন্ট সিপিযুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সদর) মিরাজ খালিদ জানিয়েছেন, প্রত্যেক সেন্টারে ৬-৭ জন পুলিশকর্মী থাকবেন। একজন সার্জেন্ট সেন্টারের চার্জে থাকবেন। তাঁর সঙ্গে এএসআই ও কনস্টেবলরা থাকবেন। ডিসিদের অ্যালার্ট করা হয়েছে। শীর্ষ আধিকারিকরা রাউন্ডে থাকবেন
বৈঠক সারলেন মুখ্যসচিব
নিরাপত্তা, পরীক্ষার খুঁটিনাটি এবং প্রশাসনিক সমন্বয় যথাযথ রাখতে শনিবার জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল-বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। পরিবহণ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে পুলিশি ব্যবস্থার খুঁটিনাটি বিষয়গুলি নিয়ে এদিন আলোচনা হয়। যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য শনিবার রাত থেকে প্রশাসনকে কড়া নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
বিকল্প বাস : পরিবহণমন্ত্রী
এসএসসি পরীক্ষার জন্য পরিবহণ দফতর সবরকমভাবে তৈরি। পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে বলা হয়েছে। সমস্ত আরটিও-কে যথাযথ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি কোনও বাস বিকল হয় বা অন্য কোনও সমস্যা হয়, তবে বিকল্প বাসের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে