দেবব্রত বাগ ঝাড়গ্রাম: শোনা যায়, এক সময় চিতি সাপের আধিক্য থাকায় নাম দেওয়া হয় চিতি পাহাড়। এখন অবশ্য সাপের ভয় নেই। বরং চারপাশের দৃষ্টিনন্দন প্রকৃতির টানেই ক্রমে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। বর্ষা মানেই প্রকৃতিতে প্রাণ ফেরার উৎসব। কখনও ঝিরঝিরে বৃষ্টি, কখনও রোদে মাখা আকাশ। এই সময় সবুজের ছোঁয়ায় জেগে ওঠে প্রকৃতি। শুকনো ডালে ফোটে কচিপাতা। ফলে বর্ষায় প্রকৃতির রঙ, পাহাড়ের আবরণ আর নদীর শব্দ উপভোগ করতে গেলে জঙ্গলমহলের বেলপাহাড়ি হয়ে উঠতে পারে সেরা ডেস্টিনেশন। বেলপাহাড়ির নাম উঠলেই ঘাগর, লালজল, কাঁকড়াঝোর, গাডরাসিনি কিংবা আমঝরনার মতো জনপ্রিয় জায়গার কথাই মনে পড়ে। কিন্তু তার সঙ্গে ইদানীং যোগ হয়েছে চিতি পাহাড়ের নাম। এখনও অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও প্রকৃতির কোলে নিরিবিলি এবং বৈচিত্র্যময় অভিযান পছন্দ করেন এমন পর্যটকরা কিন্তু গতানুগতিক গন্তব্য বা জনবহুল স্থানের বদলে ব্যতিক্রমী হিসাবে চিতি পাহাড়কে বেছে নিতে শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন-তৃণমূল প্রার্থীর মধ্যে মিষ্টভাষী, ভদ্র, মিশুকে বাবার ছায়া দেখছেন এলাকাবাসী
একদিকে অফবিট, অন্যদিকে দারুণ অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর এই পাহাড়ে বেলপাহাড়ির ইন্দিরা চক থেকে কাঁকড়াঝোর যাওয়ার পথে ৫ কিলোমিটার এগোলেই পৌঁছে যাওয়া যায়। নোটাচুয়ায় শিমূলপাল পঞ্চায়েত অফিসের বাঁদিকের রাস্তা ধরে মাত্র চারশো মিটার গেলেই বালিচুয়া হাইস্কুল। সেখান থেকে তিনশো মিটার ট্রেক করে পৌঁছতে হয় চিতি পাহাড়। পথ দেখাবে পবন শবরের বাড়ির পাশের সরু ট্রেইল। দুশো মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এই পাহাড়ে উঠতে কিছুটা শারীরিক কসরত অবশ্যই দরকার। চূড়ায় পৌঁছলে একদিকে ঠাকুরন পাহাড়, অন্যদিকে ডুলুংডিহা, চৌকিশোল জঙ্গল, কানাইসর, বীরডুংরি, খুদিমহুলি, শেরেংডুংরির মতো বিস্ময় জাগানো পর্বতশ্রেণি চোখে পড়বে। শিক্ষানবিশ পর্বতারোহীদের জন্য আদর্শ এই পাহাড়। চিতি পাহাড়কে ঘিরে গড়ে উঠেছে কিছু হোম-স্টেও, যেখানে রাত কাটানো যায় স্বচ্ছন্দে। নিজেদের গাড়ি বা বাইকে সহজেই পৌঁছনো যায়। বেলপাহাড়ির পর্যটন সংগঠনও এই নতুন গন্তব্য ঘিরে আশাবাদী। বেলাপাহাড়ি ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথ বলেন, ‘ঝাড়গ্রাম তথা বেলপাহাড়ি দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র। ঋতু অনুযায়ী এখানে প্রকৃতির রূপের বৈচিত্র্য দেখা যায়। তবে বর্ষার বেলপাহাড়ি অনন্য। চিতি পাহাড় হল বেলপাহাড়ির পাহাড়-প্রকৃতি দেখার গ্যালারি। তাই ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এটিই।’