পুরুষচর্চা

আজ আন্তর্জাতিক পুরুষদিবস। সত্যিই কি এই দিনটি পালনের কোনও তাৎপর্য আছে! নাকি শুধুই পশ্চিমি হুজুগে গা ভাসানো? এদেশে পুরুষ মানেই তো প্রিভিলেজড। তাহলে আদর্শ পুরুষের সংজ্ঞা কী? কোন গুণটা ফাটাফাটি, কিসেই বা খামতি? তাঁদের প্রিয় পুরুষ কে? বললেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট নারীরা। শুনলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

প্রিয় পুরুষ হলেন বাবা
সুদেষ্ণা রায়
পরিচালক

এতদিন পুরুষ যে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বা স্বীকৃতি পেয়েছে তা বহির্জগতে। কিন্তু সংসারে, পরিবারে সেই স্বীকৃতি ছিল না। কারণ, তাঁরা খুব একটা ইনভলভড ছিল না। এখন পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদল হয়েছে, সেই সঙ্গে সমাজেরও। আজকের পুরুষ ঘরে-বাইরে সর্বত্র সমানভাবে যুক্ত। আগে বাড়িতে একজন পিতার অনেক সন্তান অথচ তিনি জানতেনই না যে তারা কীভাবে বড় হয়ে গেল, সবটাই মায়ের উপর নির্ভরশীল ছিল। যেহেতু এখন পরিবার ছোট হয়ে গেছে তাই সংসারের খুঁটিনাটি সর্বত্র পুরুষের অবদান আমরা চাইছি এবং দেখতেও পাচ্ছি। এই বদল এবং ভাবনাকে স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিক পুরুষদিবস পালন জরুরি। আমার চোখে পুরুষ সেই-ই, যে ভদ্র, সভ্য, মার্জিত। প্রকৃত শিক্ষা যার আছে, কৌতুকবোধ আছে, বাইরে থেকে নরম হলেও ভিতরে শক্ত। তার মধ্যে যে পুরুষকার আছে যা বিদ্রোহ করতে পারে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারে। নারীকে সম্মান করে। আমি খুব লাকি আমার বাবা খুব ভদ্র, শিক্ষিত মানুষ ছিলেন, পরিবারের জন্য করেছেন এবং আমার মার পাশে চিরকাল দাঁড়িয়েছেন। আমার স্বামীও আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি যা করতে চেয়েছি কোনওদিন বাধা দেয়নি, সব দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছে। আমার সহকর্মী অভিজিৎ যে আমার প্রকৃত বন্ধু। পুরুষও যে খুব ভাল বন্ধু হতে পারে সেটা আমি বুঝেছি ওকে দেখে। আমি আমার পুত্রকে আত্মনির্ভর করে গড়ে তুলেছি। সেও তার স্ত্রীকে যেমন মর্যাদা দেয়, তেমনই সন্তানের লালনপালনেও যথেষ্ট সময় দেয়। এটাই আদর্শ পুরুষের সংজ্ঞা যিনি ঘরে-বাইরে সমান। পুরুষ মানে তার কষ্ট নেই, সে কঠোর, এই যে পুরনো সংজ্ঞাগুলো একদম ভুল। তাদেরও মন আছে, প্রাণ আছে। চাইল্ড রাইটস কমিশনে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি যৌন হেনস্তা শুধু নারীর হয় না, ছেলে বা পুরুষরাও যৌন হেনস্তার শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা বলে উঠতে পারে না। আমার পুরুষের যেটা অপছন্দ তা হল নোংরা মন এবং নোংরা শরীর। আর যেটা ভাল লাগে তা হল যে সে পাশে দাঁড়ালে যে ভরসা, সহযোগিতা নির্ভরতার অনুভব হয় সেটা। আমার জীবনে আদর্শ এবং প্রিয় পুরুষ হলেন আমার বাবা।

আরও পড়ুন-মাইথনে নৌকার জোগান দিচ্ছেন তৃণমূল বিধায়ক

পুরুষের জন্য এদেশ নো-ম্যানস ল্যান্ড

নন্দিনী ভট্টাচার্য
প্রেসিডেন্ট, অল বেঙ্গল মেনস ফোরাম

এই দেশে পুরুষতান্ত্রিকতার প্রথম শিকার কিন্তু স্বয়ং পুরুষমানুষই। এই শব্দটা বারবার বলা হয় বলেই পুরুষেরা কোনওদিন কাঁদতে পারল না, নিজের অসুবিধার বলতে পারল না আর এই ধারণায় ভুগে ভুগে একটা সময় তারা ভাবতে শুরু করল এটা পুরুষতন্ত্র আর আমরা বুঝি রবিনহুড, আমাদের বোধহয় দুঃখ-কষ্ট নেই, স্ত্রী আমাকে অত্যাচার করে এটা বললেই আমি ছোট হয়ে যাব। শাশুড়ি-বউ যখন একে অপরের সঙ্গে লড়ে, মা যখন সন্তানকে খুন করে, তখন এরা সকলেই পুরুষতন্ত্রেরই ধারক-বাহক। আমি মনে করি একজন নারী পুরুষের চেয়ে মানসিকভাবে অনেক বলশালী।
মেয়েদের এত অধিকার দেওয়া হয়েছে, এত আইন, তাদের জন্য এত প্রকল্প, তাদের গায়ে আঙুল ছোঁয়ানোর সাহস নেই কারও। তারাই আজ অনেক বেশি ক্ষমতাশালী। তাও তো নারীদিবস পালন হচ্ছে বরং ডিপ্রাইভ হচ্ছে পুরুষ, তাদের জন্যই পুরুষদিবস পালনের দরকার আছে। পুরুষের জন্য শুধুমাত্র দুটোমাত্র আইন, জেন্ডার নিউট্রাল আইন পকসো এবং অ্যাসিড ভিক্টিমদের আইন। তার মধ্যে পকসো আইনের যা অপব্যবহার যে কেউ আর বিশ্বাস করে না। গৃহহিংসার শিকার পুরুষই বেশি। পুরুষের জন্য এই দেশ ‘নো-ম্যানস ল্যান্ড’, কী করা হয়েছে তাদের জন্য!

আরও পড়ুন-সাংসদ তহবিলের টাকা দিয়েছিলেন কুণাল, তবুও অসম্পূর্ণ অডিটোরিয়াম

চলার পথে আমি পদে পদে পুরুষের কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ। আমার বাবা কোনওদিন বুঝতে দেননি আমি মেয়ে। মা বলতেন, বড় হও, নিজের পায়ে দাঁড়াও। মেয়ে হিসেবে প্রিভিলেজ চেও না কখনও কারও কাছে। যে বসের আন্ডারে প্রথম কাজ করেছি তিনি প্রথম বুঝিয়েছিলেন চাকরি করতে এসে আবার ছেলে-মেয়ে কী! তুমি আর একটি ছেলে দু’জনেই এমপ্লয়ি, দু’জনেরই সমান গুরুত্ব। স্বামীও তাই। আমরা দু’জনে মিলেই সব কাজ করি। স্বামী ছাড়া শ্বশুরবাড়িতে সবচেয়ে সাপোর্ট দিয়েছেন আমার শ্বশুর, দেওর। আদ্যন্ত মেয়েদের স্কুলে পড়ে বড় হয়েছি, ইউনিভার্সিটির কোএড ছিল তা সত্ত্বেও কোনওদিন ছেলেদের আলাদা মনে হয়নি। খুব সেন্স অফ হিউমার রয়েছে, বুদ্ধিমান, উচ্চাকাঙ্ক্ষী পুরুষ আমার কাছে আদর্শ। স্ত্রীকে হেল্প করাটাই একজন পুরুষের সবচেয়ে বড় গুণ হতে পারে না। পুরুষমানুষ চিরকাল ঘর-বার দুই-ই সামলেছে, আজকে বলে নয়। মহিলা দেখলেই গলে যাওয়া পুরুষের বড় খামতি বলেই আমার মনে হয়। আমার জীবনে প্রিয় পুরুষ আমার দাদু, ছোটকাকা, বাবা, শ্বশুরমশাই এবং স্বামী। অল বেঙ্গল মেনস ফোরামের সহকর্মীরা আমার খুব প্রিয়।

আরও পড়ুন-আজ ব্যাঙ্ক ধর্মঘট

পুরুষেরা পেয়ে অভ্যস্ত

লীনা গঙ্গোপাধ্যায়
চিত্রনাট্যকার

আন্তর্জাতিক পুরুষদিবস পশ্চিমি প্রভাবিত একটা ধারণা। আমরা এখন অনেক দিবস পালন করছি যেটা আমাদের ছোটবেলায় ছিল না। এখন খোলা দুনিয়ার কারণে আমরা এই ধরনের ইন্টারাকশনে বিশ্বাস করি। যা নিয়েই আমরা সেলিব্রেট করতে পারি সেই দিনটিই প্রাধান্য পেয়ে যায় সমাজে। এই দেশে পুরুষেরা এতটাই প্রিভিলেজড এবং পেয়ে অভ্যস্ত যে এখানে আলাদা করে পুরুষদিবস পালন করার কোনও কারণ আছে বলে ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় না। বাড়িতে ছেলে ও মেয়ে যদি একসঙ্গে বড় হয়, ধরেই নেওয়া সেই ছেলেটি তার বোনকে রক্ষা করবে। বোন যে তাকে রক্ষা করতে পারে এটা ভাবা হয় না। একটা লিঙ্গবৈষম্য সর্বত্র। পুরুষ ও নারীর শারীরিক গঠন আলাদা তাই হয়তো এমনটা মনে করা হয় কিন্তু মানসিক গঠন তো তা নয়। যে পুরুষ খুব সবল সে যে অন্তরে কাঁদে না, তার আবেগ নেই এমন তো নয়। এখানে আমি বলতে চাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা। তিনি বাইরে কঠোর ছিলেন কিন্তু তাঁর মতো দয়ালু ক’জনই বা ছিল। তার জন্য কোনও প্রচারের দরকার হয়নি। আমার জীবনে পুরুষের ভূমিকা খুব সদর্থক। বাবা আর ভাই তো আছেই, সেই সঙ্গে সহকর্মীরাও। আমি যখন কাজ শুরু করেছি মেয়েরা তখন বেশ কম, ছেলেরাই বেশি। সেখানে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারত কিন্তু হয়নি পুরুষদের সহযোগিতা পেয়েছি বলেই। আদর্শ পুরুষ সেই, যে সেনসিবল হবে, সকলকে সম্মান করবে, যাকে ভরসা করা যায়। বেশিরভাগ পুরুষ কখনও খুব একটা সমালোচনার মধ্যে থাকে না, পরচর্চা করে না, এটা তাদের গুণ আর অনেক পুরুষকে দেখেছি কথাবার্তায়, হাবেভাবে, ভঙ্গিতে অন্যকে অসম্মান করে। এটা বড় খামতি। আমার জীবনে প্রিয় পুরুষ অনেকেই আছেন যাঁদের আমি খুব সম্মান করি, একবাক্যে বলা যায় যাঁদের কথা।

আরও পড়ুন-দুর্নীতিতে ডুবে মেঘালয়, কেন নয় ইডি-সিবিআই : অভিষেক

স্বামী বিবেকানন্দ শ্রেষ্ঠ পুরুষ

ঝুলন গোস্বামী
ক্রিকেটার

এই পৃথিবীটা সবার তাই প্রতিটা দিন সকলের দিন। প্রত্যেকটা দিনই আমরা সেলিব্রেট করতে পারি, শুধু দেখতে হবে একজন মানুষ হিসেবে অন্য মানুষকে সম্মানটা যেন প্রত্যেকে দেয়। এটাই আসল। সবাই যদি যোগ্য সম্মান পায় তাহলে আলাদা দিন পালন করে সচেতনতা বাড়ানো বা স্বীকৃতি দেবার প্রয়োজন পড়ে না। নারী-পুরুষ কারও অবদানই সমাজে কম নয়, আবার পুরুষও যেমন অসংবেদনশীল হয়, নারীও হয়। ভাল, খারাপ উভয়ের মধ্যেই আছে। বায়োলজিক্যালি শুধু তারা আলাদা। আমার কোচের ভূমিকা আমার জীবনে অপরিসীম। তিনি আমাকে ভীষণ হেল্প করেছেন, সাপোর্ট দিয়েছেন। আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় তিনি আমার পাশে থেকে রিস্ক নিতে সাহস জুগিয়েছিলেন। আমার প্রতিটা ওঠানামার সঙ্গে উনি যুক্ত থেকেছেন। পুরুষের আলাদা করে গুণ বা খামতি দেখি না, কারণ দোষ,গুণ সবার আছে। আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ পুরুষ হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। ওঁর বাণী আমাকে জীবনে প্রতি এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

আরও পড়ুন-অল্পদিনেই মেঘালয়ে তৃণমূলের এক লক্ষ সক্রিয় সদস্য, জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

পুরুষই আসলে অবলা

লোপামুদ্রা মিত্র
সংগীতশিল্পী

এতসব দিন পালিত হচ্ছে। তার মাঝে যদি আন্তর্জাতিক পুরুষদিবসটা বাদ যেত আমার মনে হয় বড্ড খারাপ দেখাত তাই এটা আর বাদ থাকে কেন। এই ধরনের দিন সেলিব্রেট করলেই দেশ, সমাজ দারুণ সচেতন হয়ে ওঠে না, সবকিছু বদলে যায় না। আমার কাছে সেই পুরুষই সেরা যার মধ্যে একটা মাতৃত্বের ভাব থাকবে। অপরকে সম্মান করবে। যদিও আমার জীবনে পুরুষের বিশেষ ইতিবাচক ভূমিকা নেই। যিনি ‘বেণীমাধব’, ‘ডাকছে আকাশ’ তৈরি করেছেন, যাঁকে আমি আমার মা, বাবা সবই মনে করি সেই সমীর চট্টোপাধ্যায় আমার কাছে দারুণ মানুষ কিন্তু পুরুষ হিসেবে দেখলে তিনি একেবারেই আদর্শ পুরুষ নন। বাবা, কাকা, জ্যাঠা, ভাই, শ্বশুর, স্বামী, আমার সহকর্মী কাউকেই আদর্শ পুরুষ বলতে পারি না। পুরুষ কখনওই কঠোর নয়, অত্যন্ত দুর্বল ও ভীতু। যারা যত বেশি দুর্বল আর ভীতু হয় তারা তত বেশি অন্যকে অ্যাটাক করে। আমার শাশুড়ি একটা কথা খুব বলেন যে পুরুষরাই আসলে অবলা, নারী নয়। তবে সব পুরুষ সমান নয়, ব্যতিক্রম তো সবকিছুতে আছে। সুন্দর পুরুষ ভাল লাগে। তবে পুরুষের অগভীর মন, কেউকেটা হাবভাব আমার একদম পছন্দ নয়। তাই গুণী মানুষ অনেক আছেন কিন্তু প্রিয় পুরুষ কেউ নেই।

আরও পড়ুন-বারুইপুরে মিলল প্রাক্তন নৌসেনার অর্ধেক দেহ

সংবেদনশীল পুরুষই আদর্শ

ডাঃ রিমা মুখোপাধ্যায়
মনোবিদ

আমার মনে হয় না এখনও পর্যন্ত সেই অবস্থা এসেছে যেখানে পুরুষদের জন্য আলাদা করে একটা দিন সেলিব্রেট করতে হবে। আর একটা দিন উদযাপন করে কিছু হয় না। সমস্যা যে গভীরে থাকার সেই গভীরেই থাকে। এত যে নারীদিবস পালিত হয় তাতে কি চিত্রটা বদলেছে! আমার মনে হয় সচেতনতা প্রতিটা মানুষের মনে আসা দরকার। আমার কাছে সেরা পুরুষ সেই, যে সংবেদনশীল, নারীকে মর্যাদা দেয়, সর্বোপরি অপরকে সম্মান করে। যে মেয়েদের দুর্বল, অবলা মনে করে ছত্রছায়া দেওয়া, দয়া বা করুণা করার চেষ্টা করে না, তাঁদের সমান মনে করে। অর্থাৎ লিঙ্গবৈষম্য নেই যার মধ্যে। যার মধ্যে কোনও ইগো নেই। মহিলাদের বা বাড়ির স্ত্রী, বোন এদের সাফল্যে খুশি হবে, সাপোর্ট করবে। আমার জীবনে আমার বাবার ভূমিকা বললে কম বলা হবে। কোনওদিন তিনি আমাকে আর আলাদা করে মেয়ে বলে ভাবেননি। আমরা ভাই, বোন পরিবারে সমান গুরুত্ব পেয়েছি। এর পরবর্তীতে আমার স্বামী একটা সময় আমাকে ভীষণ সাপোর্ট দিয়েছিল। ভাল চিকিৎসক হয়ে উঠতে গেলে যে স্বাধীনতাটা দেবার প্রয়োজন তা দিয়েছিল। আজকে আমি যে এতটা আত্মনির্ভর, যে কোনও কাজ আমি একাই করে ফেলতে পারি তার কারণ আমার স্বামী। কিন্তু এই সাপোর্টটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কারণ বিদেশে থাকার সময় একটা সুন্দর সময় গেছে। আমি বেরিয়ে গেছি ও আমার সন্তানকে সামলেছে এমনও হয়েছে। কিন্তু যখন দেশে ফিরি আমরা, শ্বশুরবাড়িতে এসে পরিস্থিতি বদলে যায়। তখন পরিবারের মহিলাদের মানসিকতার কারণে আমার প্রতি ওর মনোভাব সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। ওর আমাকে হেল্প করার মানসিকতাটা বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা মেনে নিতে পারত না এবং ও নিজেও অস্বস্তি বোধ করত। ফলে আমি খুব চাপে পড়েছিলাম। দুটো দিক সামলাতে হত একা। এই চাপটা কিন্তু পুরুষের নয়, মহিলা ক্রিয়েটেড। আসলে আমি বলব পুরুষ নয়, মহিলারা যারা পুরুষতান্ত্রিক তারা অনেক বেশি বিপজ্জনক একজন পুরুষের চেয়ে। তারাই কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে প্রগ্রেস আটকে দিচ্ছে। যখন একটা সম্পর্কে ইকোয়ালিটি থাকে তখন তা কাছের হয়ে ওঠে। পুরুষের সবচেয়ে খারাপ গুণ ইগো। ইগো কারণে ওরা সব কিছু নষ্ট করে ফেলে। খুব অল্পে ধৈর্য হারায়। বাবাই আমার জীবনে প্রিয় এবং আদর্শ পুরুষ।

আরও পড়ুন-এসএসকেএম-এর অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে ৫ সদস্যের দল গঠন স্বাস্থ্যদফতরের

বেশিরভাগ পুরুষ মাল্টিটাস্কার নয়

কোয়েল মল্লিক
অভিনেত্রী

এখনও আমাদের সমাজ বদল হয়নি, লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে তবুও বলব আন্তর্জাতিক পুরুষদিবস পালিত হচ্ছে, এটা খুব ভাল কারণ এতে কোথাও একটা পুরুষকে সুপিরিয়র করে তোলার জায়গাটা কমবে। এটা ভাবতে হবে এই দেশে পুরুষ-নারী সমান। সমাজে পুরুষেরও অবদান রয়েছে আবার তারাও অত্যাচারিত হয়। আমি ছোট থেকে যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি। কোনওদিন নিজেকে আলাদা করে মেয়ে বলে মনে হয়নি। আমার চারপাশে দাদারা, ভাইরা আমাকে ঘিরে রাখত। সবাই এত বেশি ভালবাসা আর যত্ন দিয়েছে। বাবা অসাধারণ মানুষ, যিনি মুখ খোলার আগেই সব কথা বুঝে যান। বাবা আমার গুরু, শিক্ষক এবং ভীষণ ভাল বন্ধু। তারপর রাণের সঙ্গে পরিচয়। ও শুধু আমার বন্ধু নয়, তার চেয়েও বেশি। এখন কবীর যে আমাকে মাতৃত্বের পূর্ণতা দিয়েছে। ভীষণ সম্মান পেয়েছি আমার জীবনের এই সব পুরুষদের কাছে। তাই আমার মনে হয় সেরা পুরুষ সেই, যে জাতধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ মানুষকে সম্মান করে, মেয়েদের মর্যাদা দেয়। পুরুষ খুব ফিজিক্যালি শক্তপোক্ত এটা খুব ভাল লাগে তবে বেশিরভাগ পুরুষ মাল্টিটাস্কার নয়। ওরা বাইরের কাজে বেশি স্বচ্ছন্দ, একটু যদি ঘর-বার দুটোই সামলাত দারুণ হত। যদিও রাণে ঘরে-বাইরে কাজে সমান পটু। আমার জীবনে প্রিয় পুরুষ তিনজনই— বাবা, রাণে আর কবীর।

Latest article