প্রয়াত প্রতুল মুখ্যমন্ত্রীর শ্রদ্ধার্ঘ্য, এসএসকেএমে দেহ দান

প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি। যতদিন বাংলা গান থাকবে, ‘আমি বাংলায় গান গাই’ বাঙালির মুখে মুখে ঘুরবে।

Must read

প্রতিবেদন : প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি। যতদিন বাংলা গান থাকবে, ‘আমি বাংলায় গান গাই’ বাঙালির মুখে মুখে ঘুরবে। কিংবদন্তি শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকবিহ্বল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিঙা ভাসিয়ে অনন্তের পথে পাড়ি দিলেন কিংবদন্তি শিল্পী। শনিবার সকালে এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালে ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি শিল্পী। এরপর রবীন্দ্রসদন চত্বরে শায়িত রাখা হয় তাঁর মরদেহ। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দেওয়া হয় গান স্যালুট। তারপর এসএসকেএমে হবে দেহদান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কয়েকদিন আগেই হাসপাতালে গিয়ে আমি ওনার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি। আমি গর্বিত আমাদের সরকার তাঁকে যোগ্য সম্মান জানাতে পেরেছিল। তাঁর মৃত্যুতে এদিন শোক জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

আরও পড়ুন-প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন মুখ্যমন্ত্রীর

অভিষেক সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি। তাঁর পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আমার অন্তস্তল থেকে জানাই গভীর সমবেদনা। এদিন মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্রই হাসপাতালে পৌঁছন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন শিল্পী। জানুয়ারির প্রথম দিক থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। সেই সময় তাঁর নাক দিয়ে আচমকাই রক্তক্ষরণ হয়েছিল। অতিরিক্ত সংক্রমণে প্রভাব পড়ে কিডনি, ফুসফুসে। সোমবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় আইটিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীও তাঁকে দেখতে যান হাসপাতালে। এদিন রবীন্দ্রসদনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সকাল থেকে আমি নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না। অনেকক্ষণ ধরে কিছু বলতে পারিনি। তারপর অরূপকে ফোনে বলে দিলাম, কী কী করতে হবে। আমি কখনও অতি পরিচিতদের মৃত্যুর পর তাঁদের মুখ দেখি না। জীবিত অবস্থায় যেমন দেখেছিলাম, তেমনই আমার স্মৃতিতে রাখতে চাই। কিন্তু প্রতুলদার বিষয়টা আলাদা। এখানে আসতেই হল, না এসে উপায় ছিল না। আপনজনের থেকেও অধিক ছিলেন। কষ্টে থাকতেন। আমি অনেকবার বলেছিলাম, আমরা একটা ব্যবস্থা করে দিই। কিন্তু উনি বলতেন, ঠিক চালিয়ে নেব। আমি যখন হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম, তখন উঠে বসলেন, আমি আঙুলে হাত বুলিয়ে দিলাম। কথাও বললেন। আমাদের চিকিৎসকরা খুব চেষ্টা করেছিলেন, সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষে আর কিছু করা গেল না।
অবিভক্ত বাংলার বরিশালে ১৯৪২ সালের ২৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। দেশভাগের পরে থাকতে শুরু করে চুঁচুড়ায়। বাংলা আধুনিক গান থেকে জাপানি গান, আবার হিন্দি ছবির গান থেকেও উপাদান সংগ্রহ করেছেন। সৃষ্টি করেছেন একের পর এক গান।
শিল্পীর ‘বাংলার গান গাই’ গানটি আজীবন অমলিন থেকে যাবে প্রতিটি বাঙালির মনে। তাঁর জীবনের প্রথম অ্যালবাম ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’। শেষ অ্যালবাম ‘ভোর’ (২০২২)। এছাড়াও সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ‘গোসাঁইবাগানের ভূত’ ছবির নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ছিলেন তিনি। নিজের গানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার কখনওই পছন্দ করতেন না তিনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও চিকিৎসকদের ‘আমি বাংলায় গান গাই’ শোনাতেন তিনি। রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ থেকে শুরু করে ‘সঙ্গীত সম্মান’, ‘সঙ্গীত মহাসম্মান’, ‘নজরুল স্মৃতি পুরস্কার’—সবই তিনি পেয়েছেন।

Latest article